হেফাজতে মৃত্যু, পুলিশের লুকোচুরি
ঢাকা, ১৮ জুন – রাজধানীর তুরাগ থানার একটি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলাল উদ্দিন (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল শনিবার দিনভর আলালের মৃত্যু নিয়ে লুকোচুরি করে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেউ কথা বলতে চাইছিলেন না। স্বজনের অভিযোগ, তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এর আগে স্বজনরা অভিযোগ করেছিলেন, গত ৬ জুন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তুলে নেওয়ার পর থেকে আলালের খোঁজ পাচ্ছিলেন না তাঁরা। তবে ডিবির ভাষ্য, ১০ জুন আলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, আলালের মৃত্যুর বিষয়ে ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার ফোন করা হলেও কেউ কল রিসিভ করেননি। পরে রাতে ডিবির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার আকরামুল হক বলেন, ১০ জুন গ্রেপ্তারের সময় কিছুটা অসুস্থ ছিলেন আলাল উদ্দিন। তাঁর পায়ে আঘাত ছিল। সেদিনই আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেন। এরপর তাঁকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর।
গত ৬ জুন তুরাগের বাউনিয়া এলাকার বাসা থেকে ফাতেমা আক্তার নামের এক নারীর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মাথায় গুরুতর জখম ও বুক ঝলসানো ছিল ওই নারীর। মৃতের ভাই মুরাদ মিয়া এ ঘটনায় ফাতেমার দ্বিতীয় স্বামী সাইফুল ইসলাম রানাকে আসামি করে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত কয়েকজনকেও আসামি করা হয়। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে বাসার নিরাপত্তাকর্মী আলালকে নিয়ে আসে ডিবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১০ জুন বাঁ পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় আলালকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করেন ডিবির উত্তরা বিভাগের পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান। এরপর অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে নেওয়া হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সেখানে ভর্তির প্রক্রিয়া চলার সময়ই আলাল মারা যান। এরপর ইনস্টিটিউটের একটি কক্ষে তাঁর লাশ রাখা ছিল। এর আশপাশে গতকাল দেখা যায় ডিবি ও পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা। তাঁরা এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। অবশ্য পুলিশের এক সদস্য দাবি করেন, গ্রেপ্তারের সময় আলাল আহত হন। কিন্তু কীভাবে তিনি আহত হন, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
মৃতের বড় ভাই লিয়াজ উদ্দিন জানান, আলালের নামে কোনো মামলা নেই। তারপরও তাঁকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি। আলালের খোঁজে তাঁরা মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের ফটকে গেলেও ভেতরে ঢোকার অনুমতি পাননি। মামলার আসামি মৃত নারীর স্বামী সাইফুল ইসলাম রানাকে গত ৯ জুন গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। অথচ নির্দোষ আলালের কোনো খোঁজ পাননি তাঁরা। শেষে শুক্রবার রাতে হাসপাতাল থেকে খবর পান, তিনি মারা গেছেন।
হৃদরোগ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার বেল্লাল হোসেন জানান, শুক্রবার রাত ৮টায় তিনি কর্মস্থলে গেলে সিসিইউ-১ ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ডেকে আলালের মৃত্যুর খবর জানান। তখনও ডিবি পুলিশ ছিল। পরে তিনি শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান। রাতে লাশ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। গতকাল বিকেলে ডিবি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শেরেবাংলা নগর থানার এসআই ফাহাদ হোসেনের কাছে তিনি লাশ বুঝিয়ে দেন। এর আগে ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন।
জানা গেছে, গতকাল রাত ৮টায় লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেওয়া হয়েছে। আজ রোববার ময়নাতদন্ত করা হতে পারে।
নিহতের চাচাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, পুলিশের পিটুনিতেই আলালের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি মারা যাওয়ার পর তাঁর লাশ কোথায় নেওয়া হয়েছে, সেটা এখনও (গতকাল রাত ৮টা) আমরা জানি না। আমরা দায়ীদের শাস্তি চাই।
সূত্র: সমকাল
এম ইউ/১৮ জুন ২০২৩