পেন্টাগন পেপার্স ফাঁসকারী ড্যানিয়েল এলসবার্গের জীবনাবসান
ওয়াশিংটন, ১৭ জুন – ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের নথি ‘পেন্টাগন পেপারস’ ফাঁসকারী ড্যানিয়েল এলসবার্গ মারা গেছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার ৯২ বছর বয়সে মারা যান তিনি। শনিবার বিবিসি জানায়, তিনি অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার কেনসিংটনে নিজের বাড়িতে মারা যান বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তার পরিবার।
১৯৭১ সালে পেন্টাগন পেপারস ফাঁসের কারণে প্রাক্তন এই মার্কিন সামরিক বিশ্লেষককে ‘আমেরিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।
নিক্সন প্রশাসন নিউইয়র্ক টাইমসে এটির প্রকাশনা বন্ধ করার চেষ্টা করার পর এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা পর্যন্ত গড়ায়। তবে এলসবার্গের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ শেষ পর্যন্ত খারিজ হয়ে যায়।
পরিবার দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ড্যানিয়েল ছিলেন একজন সত্যের সন্ধানকারী এবং একজন দেশপ্রেমিক সত্যবক্তা, একজন যুদ্ধবিরোধী কর্মী, একজন প্রিয় স্বামী, পিতা, দাদা এবং প্রপিতামহ, অনেকের কাছে একজন প্রিয় বন্ধু এবং আরও অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা সবাই তাকে ভীষণ মিস করবো।
কয়েক দশক ধরে, এলসবার্গ সরকারের অতিরিক্ত নাক গলানো এবং সামরিক হস্তক্ষেপের অক্লান্ত সমালোচক ছিলেন। ষাটের দশকে হোয়াইট হাউসকে পারমাণবিক কৌশল সম্পর্কে পরামর্শ দেয়ার সময় এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য ভিয়েতনাম যুদ্ধের মূল্যায়ন করার সময় তার বিরোধিতা দানা বাধতে শুরু করে।
সেই সময় এলসবার্গ যা জানতে পেরেছিলেন তা তার বিবেকের উপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি মনে করেছিলেন, জনগণ যদি এ ব্যাপারে জানতে পারে তাহলে যুদ্ধ শেষ করার জন্য রাজনৈতিক চাপ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে।
এই যুক্তি থেকে সাত হাজার পৃষ্ঠার সরকারি গোপন নথি তিনি ফাঁস করেন, যেখানে একাধিক মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতারণার প্রমাণ ছিল। এসব নথি প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম নিক্সনের পতনের বীজ বপন করে।
দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সাবেক প্রধান সম্পাদক অ্যালান রাসব্রিজার বিবিসিকে বলেছেন, এলসবার্গ ‘হুইসলব্লোয়ারদের দাদা’ ছিলেন।
পেন্টাগন পেপারস নিক্সন প্রশাসন এবং দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের মধ্যে সংবিধানের প্রথম সংশোধনী নিয়ে সংঘর্ষের সৃষ্টি করে। সরকারী কর্মকর্তারা একে গুপ্তচরবৃত্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। তবে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেয়।
এলসবার্গের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের ফেডারেল আদালতে চুরি, গুপ্তচরবৃত্তি, ষড়যন্ত্র এবং আরও অনেক অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু জুরি রায়ে পৌঁছানোর আগেই বিচারক বেআইনি আড়িপাতাসহ গুরুতর সরকারি অসদাচরণের উল্লেখ করে মামলাটি খারিজ করে দেন।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১৭ জুন ২০২৩