জাতীয়

‘আইসিইউর ৫২% রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না’

ঢাকা, ১১ জুন – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ৫২ শতাংশ রোগী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স। মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি সামগ্রী খেয়ে মানুষ সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার কারণে এর কার্যকারিতাও কমে যাচ্ছে। তাই রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না বলে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে প্রকাশিত এক জরিপে এই তথ্য জানানো হয়।

রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় হাসপাতালের ‘এ’ ব্লক অডিটোরিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সাব কমিটি এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহিদুল ইসলাম অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর পৃথক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আশঙ্কার বিষয় হলো বর্তমানে রোগীদের শরীরে আইসিইউতে রাখা রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিক মেরোপেনাম কাজ করছে না। অবশ্যই আমাদেরকে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করতে হবে এবং জনচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এটা বাস্তবায়ন না করতে পারলে, ২০৫০ সাল নাগাদ মানুষের শরীর অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হওয়ার ফলে করোনার চাইতে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ মারা যাবে। তাই রেজিস্ট্রার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ যাতে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয় বিক্রয় করতে না পারে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জহিদুল ইসলাম তার ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামস ফর ইনফেকশন কন্ট্রোল ইন এ টার্শিয়ারি কেয়ার হসপিটাল’ প্রবন্ধে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মাঝে সর্বোচ্চ শতকরা ৫২ শতাংশ রোগীদের অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স পাওয়া গেছে। হৃদরোগ, কিডনী, শিশু ও নবজাতক বিভাগের রোগীদের মাঝে এই হার ছিল ২১. ৫ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বে বছরে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্সে ভোগা রোগীদের মৃত্যুর হার ৭ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ এই মৃত্যু হার বৃদ্ধি পেয়ে ১ কোটিতে পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ শুধুমাত্র চিকিৎসকদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রীতে বিশেষ করে মুরগীর মাংসে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত ৫৫ শতাংশ। মৎস্য, পশু ও পোল্ট্রি শিল্পে ১৯ ধরণের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃষিখাতও এর আশঙ্কার আওতামুক্ত নয়। এসকল খাবার খেয়ে মানুষের শরীর সহজেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে।

সেমিনারে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ কমিটির কাঠামো ও মাইক্রোবায়োলজির ভূমিকা নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর হাসপাতালসমূহে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। বিএসএমএমইউতেও এই প্রোগ্রামটি অতিদ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এটি সফলভাবে চালু করতে পারলে হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর হার, রোগীর হাসপাতালে অবস্থানের সময়কাল কমানো সম্ভব হবে এবং এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠার প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে।

ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী ডা. মো. নাজমুল হাসান ‘রেশনাল ইউজ অব অ্যান্টিবায়োটিকস: ক্লিনিশিয়ান্স রোল ইন অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল স্টুওয়ার্ডশিপ’ শীর্ষক প্রবন্ধে অপ্রয়োজনে আন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার ওপর অতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, সঠিক ওষুধ, সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যবহার না করার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক এর কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। তাই এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে যত দ্রুত সম্ভব নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি।

সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ প্রমুখসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/১১ জুন ২০২৩

Back to top button