জাতীয়

জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফরিন প্রীতি

ঢাকা, ০৬ জুন – আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি হত্যা মামলায় বিদেশে পলাতক আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুই সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ও জাফর আহমেদ ওরফে ফ্রিডম মানিকসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলেও এক্সেল সোহেলের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় অব্যাহতির আবেদন করা হয়। এ ক্ষেত্রে বিচারের জন্য ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ইয়াসিন শিকদার এ চার্জশিট দাখিল করেন। মামলায় আগামী ১৫ জুন চার্জশিট আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে শাহজাহানপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা।

ডিবির কর্মকর্তারা বলেন, মতিঝিলকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও মানিকসহ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় নাম এসেছে ৩০ জনের। অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। গ্রেপ্তার সুমন শিকদার ওরফে মুসা পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেন। খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন ৪ জন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাসহ ৩৪ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে এক্সএল সোহেল নামে এক সন্দেহভাজনের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারায় তাকে অভিযোগপত্রে রাখা হয়নি। বাকি ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন, নয়জন এখনো পলাতক। আমরা কোনো দল দেখি নাই। তদন্তে যার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তাকেই অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত ও অভিযোগপত্র নিয়ে টিপুর স্ত্রীর ফারহানা ইসলাম বলেন, মামলার চার্জশিট নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু চার্জশিটে থাকা গোলাম আশরাফ তালুকদার, মারুফ আহমেদ মনসুর, কামরুজ্জামান বাবুল, রিফাত, আমিনুল, রানা মোল্লাসহ আটজন এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের মধ্যে চারজনের নামে কয়েকবার জিডিও করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি জানাই। আসামিরা বাইরে থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে শঙ্কা থাকি। অভিযুক্তদের আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।

চার্জশিটভুক্ত উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মারুফ আহমেদ মনসুর, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম, মতিঝিল থানা জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সোহেল শাহরিয়ার, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা সাগর, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান বাবুল, ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সদস্য কাইল্যা পলাশ, একই ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক নেতা আমিনুল, ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ঘাতক সোহেল, সুমন শিকদার মুসা, মুসার ভাগনে সৈকত, মুসার ভাতিজা শিকদার আকাশ, ইমরান হোসেন জিতু, মোল্লা শামীম, রাকিব, বিডি বাবু, ওমর ফারুক, ‘কিলার’ নাসির, রিফাত, ইশতিয়াক হোসেন জিতু, মাহবুবুর রহমান টিটু, হাফিজ, মাসুম ও রানা মোল্লা। মুসা, শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ ও নাসির উদ্দিন মানিকসহ বেশ কয়েকজন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, হত্যার পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়নে একেকজনের একেক ধরনের ভূমিকা ছিল। এ হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন ‘শুটার’ আকাশ, তার বন্ধু মোল্লা শামীম ও পলাশ। ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজীব আল মাসুদ বলেন, চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে টিপুকে হত্যা করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় থাকায় কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান ওরফে প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় জাহিদুলের স্ত্রী ফারহানা ইসলাম শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে ডিবির মতিঝিল বিভাগ।

ডিবি কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার পরপরই শুটার আকাশকে গ্রেপ্তার করলে মূল পরিকল্পনাকারী মুসার নাম বেরিয়ে আসে। ডিবি পুলিশ ওমান থেকে মুসাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। মুসার জবানবন্দিতে জড়িত আরও ১৬ জনের নাম উঠে আসে।

জবানবন্দিতে মুসা বলেন, গত বছরের ১৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদারের ছোট ভাই টিটু, কাউন্সিলর মনসুর, ছাত্রলীগ নেতা রানা, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা সাগর, মোল্লা রানা, এক্সেল সোহেল, আমিনুল ওরফে আমিনুর, বাবুল, রিফাত, টিটু ও খাইরুলের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ঠিকাদারি ও স্কুলে ভর্তি-বাণিজ্য নিয়ে কথা শুরু হয়। এ সময় সোহেল শাহরিয়ার বলেন, টিপু টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করলেও এর সঠিক হিসাব দেন না। বৈঠকে জিসান ও মানিক উভয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন। এ সময় খালেদ ও টিপুর লোকদের এলাকাছাড়া করতে নির্দেশ দেন জিসান। আশরাফ-মারুফের উদ্দেশে জিসান ও মানিক বলেন, টিপুকে মেরে ফেলতে হবে। টিপু না থাকলে সবাই সুবিধা পাবেন। রবিনকে দুদিনের মধ্যে দুই লাখ টাকা ব্যবস্থা করে দেওয়ার দায়িত্ব দেন মারুফ। এক্সেল সোহেলকে তিন লাখ, মারুফকে পাঁচ লাখ, রবিনকে দুই লাখ, বাবুলকে তিন লাখ ও টিটুকে পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করতে বলেন। এই টাকা টিপুকাণ্ডে ব্যবহার হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/০৬ জুন ২০২৩

Back to top button