এশিয়া

চীনে সিআইএ প্রধান কী করছেন?

বেইজিং, ০৩ জুন – সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস সম্প্রতি গোপনে চীন সফর করেছেন। বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ককে উষ্ণ করার আশায় তিনি এ সফর করেন।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা শুক্রবার (২ জুন) খবরটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বার্নস গোয়েন্দা চ্যানেলে যোগাযোগের সম্ভাবনা উন্মুক্ত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

মে মাসে বার্নসের চীন সফর নিয়ে প্রথম সংবাদ প্রকাশ করে দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। রিপোর্টে বলা হয়, বেইজিংয়ের সাথে সুসম্পর্ক পুনর্স্থাপনের স্বার্থেই এই সফর। দুই পরাশক্তির ভেতর চলমান ভুল বোঝাবুঝির ভয় থেকেই এই সফরে আসেন বার্নস।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া উদ্যোগের ভিত্তিতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ পুনর্স্থাপনে দুই দেশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

শুক্রবার রয়টার্সকে যুক্তরাষ্ট্রের এক মুখপাত্র জানান, গত মাসে ডিরেক্টর বার্নস বেইজিং সফরে গিয়ে চীনা মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গোয়েন্দা চ্যানেলের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার পথ খোলা রাখার বিষয়ে আলোচনা করেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে বার্নসের এই সফর সম্পর্কে ওয়াকিবহাল আরেক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, বার্নস বেইজিংয়ে গিয়ে চীনা কোনো রাজনৈতিক নেতা বা কূটনীতিকের সঙ্গে দেখা করেননি। তিনি সেখানে চীনা গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

সাধারণত সিআইএ এ ধরনের গোপন সফর সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করে না। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বার্নসের চীন সফর নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।

বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যেকার সম্পর্ক গত কয়েক মাসে বেশ খারাপের দিকে গেছে। সম্প্রতি তাইওয়ান ও চীনের মানবাধিকারবিষয়ক দ্বন্দ্ব, দক্ষিণ চীনা সমুদ্রে বেইজিংয়ের সামরিক কার্যক্রম এবং রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক দুই দেশের সম্পর্কে ছেদ ফেলেছিল।

ইউক্রেনে রাশিয়া হামলার পর ওয়াশিংটন চীনের বিরুদ্ধে মস্কোকে সামরিক সাহায্য পাঠানোর অভিযোগ তুলেছে। যদিও এসব দাবি উড়িয়ে দিয়েছে চীন।

বাইডেন প্রশাসনের সমালোচকরা ওয়াশিংটনের আলোচনা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যেমন- মানবাধিকার, নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চীনারা মনোভাব বদলায়নি বলে দাবি তাদের।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে এন্থনি ব্লিংকেন পূর্বপরিকল্পিত চীন সফর বাতিল করেন। সে সময় মার্কিন বিমান বাহিনী মন্টানার আকাশ থেক একটি ‘চীনা স্পাই বেলুন’ ভূপাতিত করে। এই বেলুনটিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্পর্শকাতর সামরিক এলাকার ওপর দিয়ে যেতে দেখা যায়।

এদিকে, সিঙ্গাপুরে নিরাপত্তাবিষয়ক একটি সামিটে শুক্রবার (২ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লি শাংফুর সঙ্গে করমর্দন করেন। যদিও পরবর্তীতে পেন্টাগন জানায়, তাদের ভেতর কোনো আলোচনা হয়নি।

এর আগে চীন অস্টিন এবং লি-এর একটি সাক্ষাৎ বাতিল করে। উল্লেখ্য, লি’কে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে বেশ আগে থেকেই। রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিমান ও মিসাইল কেনার কারণে চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘ইকুইপমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট’ বিভাগ ও লি’র বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র।

এই নিষেধাজ্ঞার পর চীনারা যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু করে। ইইডি’র সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যে লেনদেনের সম্পর্ক ছিল সেটাও বাতিল করা হয়।

এদিকে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত সামিটে অস্টিন দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে আলোচনাকে ‘জরুরি’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি দুই দেশের প্রতিরক্ষা ও সামরিক কর্মকর্তাদের ভেতর আলোচনার দ্বার খোলা রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সূত্র: কালবেলা
এম ইউ/০৩ জুন ২০২৩

Back to top button