জাতীয়

৭,৬১,৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট সংসদে পেশ আজ

ঢাকা, ০১ জুন – আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হচ্ছে আজ। প্রস্তাবিত এই বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি হবে দেশের ৫২তম জাতীয় বাজেট এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ, তথা পঞ্চম বাজেট। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের তিনটি মেয়াদের ১৫তম বাজেট এটি।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করবেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার পঞ্চম বাজেট। একই সাথে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও অর্থবিল ২০২৩ পেশ করবেন তিনি। এর আগে জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে এগুলো অনুমোদন দেয়া হবে।

জানা গেছে, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সম্ভাব্য আকার বা মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, নতুন অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম হচ্ছে- ‘উন্নয়নের দেড় দশক : স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। বাজেট বক্তৃতায় মোট ১১টি অধ্যায় রয়েছে। দীর্ঘ এই বাজেট বক্তৃতায় বর্তমান সরকারের গত দেড় দশকে দেশের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে।

ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি ধরে আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটের এই ব্যয় মেটাতে মোট কর আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৬৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বেশি।

রাজস্ব আদায়ের টার্গেট

আগামী অর্থবছরের জন্য (২০২৩-২৪) প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের ব্যয় চালাতে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র। এর বাইরেও এনবিআর বহির্ভূত কর আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া সরকারের আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। কর রাজস্ব আদায়ের অঙ্ক চলতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।

ঘাটতি

নতুন বাজেটে ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশের ঘরে রাখা হয়েছে। টাকার অঙ্কে ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ (অনুদানসহ) ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণ বাবদ পাওয়া যাবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সরকার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন খাত থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে নেবে ১ লাখ ২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেবে ৫ হাজার কোটি টাকা।

মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি

আজ মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে অনুমোদনের পর জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যা কার্যকর হবে ১ জুলাই থেকে। আগামী অর্থবছরে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সরকার যেভাবেই হোক আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লাগাম ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যেই টেনে রাখতে চায়। নতুন অর্থবছরের জিডিপি হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। নতুন অর্থবছর মোট জিডিপির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামকে সামনে রেখে ঘোষিত হবে আসন্ন বাজেট। ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেক ধাপ ওপরে হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। বর্তমান নানা ধরনের সংকটের মধ্যেও স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১-এর স্বপ্ন দেখাবেন অর্থমন্ত্রী। উচ্চপ্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপি। আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

বৈদেশিক ঋণ

আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বেশি বৈদেশিক ঋণ আগামী অর্থবছরে নেওয়া হবে। আর ঋণগ্রস্ত বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বেশি টাকা গুনতে হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। এছাড়া বাড়ছে সরকারের মূলধনি ব্যয়ও। আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া হচ্ছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা।

আয়ের লক্ষ্য

আসন্ন বাজেটে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ আয়ের প্রধান উৎস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) কর ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। এছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তি (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্য হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি বৈদেশিক অনুদান থেকে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বৈদেশিক অনুদান সরকারকে পরিশোধ করতে হয় না। ফলে এ খাত থেকে আয়কে রাজস্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট (১৯৭২-৭৩) ঘোষণা করা হয় ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বাজেট পেশ করেন তাজউদ্দীন আহমেদ। ওই বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। তিনি তিনবার (১৯৭২, ১৯৭৩ ও ১৯৭৪) বাজেট পেশ করেন।

পরে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তিনবার (১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮); এম সাইফুর রহমান প্রথম দফায় দুইবার (১৯৭৯ ও ১৯৮০); আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রথম দফায় দুইবার (১৯৮২ ও ১৯৮৩); এম সাইদুজ্জামান চারবার (১৯৮৪-১৯৮৭); মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মুনেম দুইবার (১৯৮৮ ও ১৯৯০); এম সাইফুর রহমান দ্বিতীয় দফায় পাঁচবার (১৯৯১-১৯৯৫) বাজেট পেশ করেন।

বর্তমান অর্থমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট (২০১৯-২০) পেশ করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি ছিল তার প্রথম বাজেট পেশ। ওই বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ০১ জুন ২০২৩

Back to top button