পশ্চিমবঙ্গ

অমর্ত্য সেনের বিতর্কিত জমি মামলার পরবর্তী শুনানি ১৩ জুন

কলকাতা, ৩১ মে – নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের জমি সংক্রান্ত মামলার শুনানি পিছিয়ে গেলো। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৩ জুন। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের ‘প্রতীচী’ বাড়িতে তার নামে থাকা ১৩ শতক জমি ফেরত চেয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল, গত ৪ মে তার উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।

বিচারপতি বিভাস রঞ্জন দের একক বেঞ্চ জানিয়েছিল এই সম্পর্কিত একটি মামলা বীরভূম জেলা দায়রা আদালতে চলছে। ওই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অমর্ত্য সেনের জমির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। সে কারণে আগামী ৩০ মে এই মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল।

এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই উচ্ছেদের নোটিশ জারি নিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট কর্মকর্তার বৈধতার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে মামলার শুনানির দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। আদালতে অমর্ত্য সেনের আইনজীবী সৌমেন্দ্র রায় চৌধুরী জানতে চান বিশ্বভারতীর এস্টেট কর্মকর্তা কি আদৌ এই উচ্ছেদ নোটিশ দিতে পারেন কিনা।

তৎক্ষনাৎ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস এস্টেট কর্মকর্তার এই বৈধতা সংক্রান্ত একটি নথি জমা দিয়ে বলেন, এই বৈধতার সমস্ত নথি পাবলিক ডোমেইনে লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। তাই আলদা করে এই তথ্য জানতে চেয়ে মামলাটি পিছিয়ে দেওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।

পুরো বিষয়টিকে ‘চক্রান্ত’ বলে অভিযোগ করে আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন একটি করে তথ্য জানতে চেয়ে মামলার শুনানির দিন পিছিয়ে দেওয়াই অমর্ত্য সেনের আইনজীবীর একমাত্র লক্ষ্য।

যদিও দুপক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে প্রধান জেলা ও দায়রা বিচারক সুদেষ্ণা দে (চ্যাটার্জি) মামলাটির শুনানি পিছিয়ে দেন। আগামী ১৩ জুন পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। ওইদিন দুপুর ২ টায় এই মামলার শুনানি শুরু হবে।

আদালতের এই নির্দেশিকার ফলে অমর্ত্য সেনকে জমি খালি করার বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের নোটিশের উপর হাইকোর্টের যে স্থগিতাদেশ জারি ছিল, সেটাই অব্যাহত থাকল। অর্থাৎ নিম্ন আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বভারতী কোন পদক্ষেপই নিতে পারবে না।

উল্লেখ্য, শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের প্রতীচী বাড়ির জমি নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। অমর্ত্য সেনের প্রতীচী বাড়িতে মোট জমির পরিমাণ ১.৩৮ একর জমি। যদিও বিশ্বভারতীর দাবি ১৯৪৩ সালে অমর্ত্য সেনের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেনের নামে ৯৯ বছরের জন্য প্রতীচীর যে জমি লিজ দেওয়া হয়েছিল, তার পরিমাণ ১.২৫ একর। তা মোটেই ১.৩৮ একর জমি নয়। অর্থাৎ বাকি ১৩ ডেসিমেল (শতক) জমি দখল করে রেখেছেন অমর্ত্য সেন। সেই জমি ফেরত চেয়েই ৩টি চিঠি দেয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক তৈরি হয়।

জমি নিয়ে এমন বিতর্কের মাঝেই গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি নাগাদ অমর্ত্য সেনের পিতা প্রয়াত আশুতোষ সেনের উইল অনুযায়ী আবেদনের ভিত্তিতে বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর ১.৩৮ একর জমিই অমর্ত্য সেনের নামেই জমি রেকর্ড করে দেয়।

এমন এক পরিস্থিতিতে গত ১৯ এপ্রিল বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে অমর্ত্য সেনের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’ বাড়িতে নোটিশ লাগিয়ে জোর করে দখলকৃত ১৩ শতক জমি খালি করার জন্য আগামী ৬ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। অন্যথায় বলপ্রয়োগ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্বভারতীর ওই অনড় মনোভাবের পরেই ওই নোটিশের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে প্রথমে বীরভূম জেলা আদালতে মামলা করেন অমর্ত্য সেনের আইনজীবী। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। বিশ্বভারতীর উচ্ছেদের নোটিশের বিরোধিতা করে ইতোমধ্যেই মানববন্ধন, অবস্থান প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ৩১ মে ২০২৩

Back to top button