জাতীয়

চার কৌশলে বাস্তবায়ন হবে স্মার্ট বাংলাদেশ

আবু আলী

ঢাকা, ২৮ মে – ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে গত ১৩ বছর ধরে নানা উদ্যোগ ও কার্যক্রমে দেশে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব প্রসার ঘটেছে। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু চালু উন্নয়নের নতুন মাইলফলক। তবে করোনা মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও চাপ তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট দেবেন। এবারের বাজেটের স্লোগান ঠিক করা হয়েছে- ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এবার বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’-এর স্বপ্ন ও বাস্তবায়নের পথ দেখাবেন। তুলে ধরবেন নানা চ্যালেঞ্জের কথাও।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’ বাস্তবায়নের প্রধান কৌশল হবে চারটি- স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। এ ছাড়া স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বাণিজ্য ও স্মার্ট পরিবহনব্যবস্থার কথাও থাকবে।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে বক্তব্যের বইয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’ দর্শন নিয়ে থাকছে আলাদা চ্যাপ্টার।

জানা গেছে, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সব কিছু হবে। নাগরিকরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হবে পুরো অর্থনীতি। সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নেওয়া হয়েছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ মহাপরিকল্পনায় প্রায় ৪০টি মেগাপ্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০২৫, ২০৩১ ও ২০৪১-এই তিনটি সময়রেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এর শুরুতে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলা ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি, আইসিটি নীতিমালা, জাতীয় প্রকিউরমেন্ট ই-বাজার, ডিজিটাল চাকরির প্ল্যাটফরম, স্মার্ট পাবলিক সার্ভিস (জনপরিষেবা) ও পেপারলেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (কাগজবিহীন প্রশাসন), ইনক্লুসিভ ফিন্যান্সিয়াল (অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক সংস্থান), গভর্নমেন্ট ক্লাউড অ্যান্ড ডেটা সেন্টার প্রভৃতি কার্যক্রম শুরুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ইউনিভার্সাল ডিজিটাল আইডি, ডিজিটাল কারিকুলাম, স্মার্ট ডিভাইস অ্যাকসেস, স্মার্ট বাংলা ক্যাম্পেইন, স্মার্ট হেলথ কেয়ার, স্মার্ট ট্যাক্স, ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে স্মার্ট ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট পোস্টাল সার্ভিস, স্মার্ট জুডিশিয়ারি, স্মার্ট বর্ডারস, স্মার্ট সোশ্যাল সেফটি নেট, পুলিশ মডার্নাইজেশন, ইনক্লুসিভ ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম, ফিনটেক অ্যাকসেলারেটর, উদীয়মান প্রযুক্তিবিষয়ক সেন্টার অব এক্সিলেন্স (সিওই) বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হবে।

স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখায় সব কিছুই প্রযুক্তিনির্ভর। সেখানে বলা আছে, কৃষিতে প্রচলিত যুগের অবসান হয়েছে। আগামী দিনের কৃষি হবে প্রযুক্তিনির্ভর। প্রচলিত কৃষককেও এখন স্মার্ট ফোনের কার্যকর ব্যবহার জানতে হবে। আইওটি ডিভাইস ব্যবহার করে কীভাবে অল্প খরচে কৃষিতে অধিক লাভবান হওয়া যায়, তা জানতে হবে।

এ ছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গড়ে তোলার কথা বলা হবে বাজেটে। আর পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসতে আত্মকর্মসংস্থানভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রম নিশ্চিতে ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম’Ñএর আওতায় শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।

এ ছাড়া ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট, মাঝারি ব্যবসাগুলোর জিডিপিতে অবদান বাড়াতে এন্টারপ্রাইজভিত্তিক ব্যবসাগুলোকে বিনিয়োগ উপযোগী স্টার্টআপ হিসাবে প্রস্তুত করা হবে। পাশাপাশি অল্টারনেটিভ স্কুল ফর স্টার্টআপ এডুকেটরস অব টুমোরো (এসেট) প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ নলেজ ডেভেলপমেন্ট পার্ক নির্মাণ ও পরিচালনা, সেন্টার ফর লার্নিং ইনোভেশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব নলেজ (ক্লিক) স্থাপন, সরকারি সেবা ও অবকাঠামোনির্ভর উদ্যোক্তা তৈরি এবং সব ডিজিটাল সেবাকে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডে নিয়ে আসার কথা বলা হবে।

সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/২৮ মে ২০২৩

Back to top button