ঢাকা, ২২ মে – ভারতে দুই হাজার রুপির ব্যাংক নোট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। এরপর সোনা কিনতে ভিড় করছেন সেখানকার অনেকেই। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে নোট বদল করা সহজ হবে না মনে করে তারা ছুটছেন সোনা কিনতে। বিশেষ করে মজুতদাররা এই কাজ করছেন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে এর কেমন প্রভাব পড়বে। জবাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যারা বিজনেস করেন তারা ডলারে লেনদেন করেন। বাংলাদেশের প্রকৃত ব্যবসায়ীদের এ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। তবে কিছুটা চাপে থাকবেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কোনও সমস্যা হবে না। কারণ, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে ভারতের ২০০০ টাকার নোট থাকার কথা নয়। তবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের অনানুষ্ঠানিক বড় ব্যবসা আছে। যেটাকে আমরা হুন্ডি বা চোরাচালান, স্মাগলিং ব্যবসা বলি। ওপার থেকে প্রথাগত পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক পণ্য আসে। সেই পণ্যের দাম পরিশোধের জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। সেই অর্থে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশের টাকা হয়তো ভারতে আছে। একইভাবে হয়তো ভারতের টাকাও প্রচুর পরিমাণে আমাদের এখানে আছে। সেই টাকার ভেতরে দুই হাজার টাকার নোট থাকাটাই স্বাভাবিক। ফলে এখন এই টাকা অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ওখানে পাঠানোর চেষ্টা করবে।
তিনি উল্লেখ করেন, ভারতে যারা বেড়াতে যান বা চিকিৎসার জন্য যারা যান তাদের কাছে হয়তো দুই একটি দুই হাজার রুপি নোট থাকতে পারে। কিন্তু ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে আতঙ্কে থাকবে চোরাচালানকারী বা স্মাগলাররা।
তিনি বলেন, যেকোনও টাকার নোট বাতিল করার অন্যতম একটি লক্ষ্য থাকে, যেন সেই দেশের ভূখণ্ডের বাইরে থেকে বাতিল করা নোট সেই দেশে ঢুকতে না পারে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের সীমান্তে অঞ্চলে যারা ব্যবসা করেন তাদের হাতে থাকা এই ভারতীয় রুপি দ্রুত খরচ করে ফেলবেন।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের মানুষের বা সরকারের এ নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। যারা ডলারে ব্যবসা করেন তাদের কোনও সমস্যা নেই। অবশ্য ভারতে চিকিৎসা বা ওই দেশে বেড়াতে যাওয়ার জন্য কিছু লোকের হাতে হয়তো দু’একটি নোট থাকতে পারে, কিন্তু এই সংখ্যাটি খুবই কম। তবে যারা ভারতের সঙ্গে অপ্রাতিষ্ঠানিক বা হুন্ডির ব্যবসা করে তারা কিছুটা চাপে থাকবে। যেহেতু এই টাকা জমা দেওয়ার জন্য দুই-তিন মাস সময় আছে, সেহেতু তারা এই টাকা ওই দেশের ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেবে। ওই দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে জমা দেবে। ফলে কিছুটা চাপ থাকলেও হুন্ডি ব্যবসায়ীদেরও খুব বেশি ক্ষতি হবে না।
এর আগে গত শুক্রবার (১৯ মে) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, দুই হাজার রুপির নোট বাতিল করছে ভারত। অবিলম্বে এ নোট ব্যবহার বন্ধ করতে দেশটির ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। এছাড়া দুই হাজার রুপির নোট থাকলে জনসাধারণকে তা আগামী ২৩ মে থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, এর আগে ২০১৬ সালে নোট বাতিল করেছিল নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। তখন ৫০০ এবং এক হাজার রুপির নোট বাতিল করা হয়েছিল। সাত বছরের মাথায় এবার দুই হাজার রুপির নোট তুলে নিচ্ছে ভারত সরকার।
আরবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালে নোট বাতিলের সময় ৫০০ এবং এক হাজার রুপির নোট বাতিল করা হয়েছিল। সেই সময় নোটের ঘাটতি পূরণ করতে বাজারে দুই হাজার রুপির নোট আনা হয়েছিল। বর্তমানে অন্য নোটগুলোর জোগান যথেষ্ট পরিমাণে আছে। এদিক ২০১৮-১৯ সালে দুই হাজার রুপির নোট ছাপানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বর্তমানে ভারতে যে পরিমাণ দুই হাজার রুপির নোট রয়েছে, তার ৮৯ শতাংশই ছাড়া হয়েছে ২০১৭ সালের মার্চ মাসের আগে। দেশটির বাজারে কমছে দুই হাজার রুপির লেনদেন।
এদিকে ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হচ্ছে, নোট বদলের বিপরীতে ভারতের এই মানুষেরা সোনা কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। তবে সে জন্য তাদের প্রিমিয়াম বা অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে। শনিবার (২০ মে) বিকেলে মুম্বাইয়ে সোনার অনানুষ্ঠানিক বাজারে দুই হাজার রুপির নোট ব্যবহার করে ১০ গ্রাম সোনা কিনতে ব্যয় হচ্ছে ৬৭ হাজার রুপি, যদিও জিএসটিসহ সোনার আনুষ্ঠানিক দর ৬৩ হাজার ৮০০ রুপি। বাড়তি অর্থ ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রিমিয়াম হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।
বাজারের বিভিন্ন সূত্র ইকোনমিক টাইমসকে বলেছে, কিছু মানুষ যেন নোট বদলের ঘোষণার পর আপনাআপনি সোনার দোকানে ভিড় করতে শুরু করেছেন। ঘোষণা আসার পরই সোনার প্রিমিয়াম বেড়ে গেছে। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তা কমে যাবে বলে সূত্রগুলোর ধারণা। নোট বদলের সময় আছে চার মাস, ফলে মানুষ নানা কিছু চেষ্টা করবে।
তবে ২০১৬ সালের নোট বাতিলের পর নিয়মকানুন আরও কঠোর হয়েছে। সে সঙ্গে নোট বাতিলের পদক্ষেপে আবাসন খাতেও প্রভাব পড়বে, এই সম্ভাবনায় যে নোট মজুতকারীদের হাতে তেমন কোনও বিকল্প থাকবে না।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, দুই হাজার রুপির এসব নোট ব্যাংকে জমা দিয়ে করের আওতায় আসাকে মানুষ সমাধান হিসেবে দেখছে না। ২০১৬ সালেও এমনটা হয়েছিল, যারা নোট জমা দিয়েছিলেন, তারা ২০২১ সালেও রাজস্ব কার্যালয়ের নোটিশ পেয়েছেন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আইএ/ ২২ মে ২০২৩