রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সংগীত বদলাতে আহ্বান বিজেপি নেতার!
নয়াদিল্লী, ১৩ ডিসেম্বর- পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার সঙ্গী নেতা-মন্ত্রীরা দুই বছর ধরে নানা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বারবার টেনে এনেছেন। এবার তার-ই লেখা জাতীয় সংগীতে বদল চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে দ্রুত সাড়া পেয়ে উৎফুল্ল বিজেপির সংসদ সদস্য তথা অন্যতম নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে এ কথা লিখেছেন তিনি। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
এমনিতে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন লেখা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা সময়ে আপত্তির কথা শোনা গেছে। মোদি ক্ষমতায় আসার পরে সংঘের শিক্ষা সেলের নেতা দীননাথ বাত্রা এনসিইআরটি-র পাঠ্যক্রম থেকে রবীন্দ্রনাথের লেখা বাদ দেওয়ার সুপারিশও করেছেন।
কিন্তু মোদি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে দুই বছরে নানা সময় রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেছেন। তার দলের অন্য নেতারাও ইদানীং বাংলায় এলে রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করতে ছাড়েন না। এই অবস্থায় সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর টুইট নতুন বিতর্ক উসকে দিল।
‘জন গণ মন’ নিয়ে সুব্রহ্মণ্যমের দাবি, ‘দেশের যুব সমাজের বড় অংশের মনের কথা’ বলছেন তিনি। তার আপত্তির অন্যতম শব্দটি হলো জাতীয় সঙ্গীতে ‘সিন্ধু’ শব্দটির ব্যবহার। স্বামীর মতে, বর্তমান জাতীয় সংগীতের কিছু কিছু শব্দ (সিন্ধু) অনাবশ্যক ধন্দ তৈরি করে। বিশেষ করে স্বাধীনতা-পরবর্তী পরিপ্রেক্ষিতে।
রবীন্দ্রনাথের ‘জন গণ মন’-র শব্দ বদলে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (আইএনএ)-র গাওয়া ‘জন গণ মন’র আদলে লেখা অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় সংগীত ‘কাওয়ামি তারানা’র প্রথম পঙ্ক্তি ‘শুভ সুখ চ্যান’ গানটি ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন তিনি। ইতিহাস বলছে, ১৯৪৩-এ সুভাষ বসুর নির্দেশে আইএনএ-র দুই সদস্য মুমতাজ হোসেন এবং কর্নেল আবিদ হাসান সাফরানি গানটি লিখেছিলেন। সুর দিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন রাম সিংহ ঠাকুর। সুরের প্রভেদ বিশেষ অবশ্য ছিল না।
রবীন্দ্রনাথের ‘জন গণ মন’-র প্রথম পঙ্ক্তি জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয় এবং তাতে ৫২ সেকেন্ড সময় লাগে। পক্ষান্তরে আইএনএ-র ‘কাওয়ামি তারানা’র প্রথম পঙ্ক্তি গাইতে সময় লাগে ৫৫ সেকেন্ড। জাতীয় সংগীতের শব্দ বদল প্রসঙ্গে দেশের ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করেছেন স্বামী। তা হলো, ১৯৪৯ সালে রাজেন্দ্র প্রসাদ বলেছিলেন, জাতীয় সংগীতের শব্দ পরিবর্তন বা সংশোধন করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন : স্কুলছাত্রীদের স্কার্ফের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল অস্ট্রিয়া
কিন্তু যে ‘সিন্ধু’ শব্দটি নিয়ে স্বামীর আপত্তি, আইএনএ-র গাওয়া গানে তার উল্লেখ রয়েছে। তা ছাড়া, ‘সিন্ধু’ শব্দটি বাদ দিলে আরএসএসের অখণ্ড ভারতের তত্ত্বই যে প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। স্বামী অবশ্য এত কথায় ঢুকতে চাননি। তার আশা, ২৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করবে নরেন্দ্র মোদি সরকার। কিন্তু ভোটের আগে এই ঝুঁকি নেবে তো তার দল?
সূত্রঃ দেশ রুপান্তর
আডি/ ১৩ ডিসেম্বর