শত ব্যস্ততার শহরে একটু খোলামেলা জায়গায় দম ফেলার যেন ফুসরত নেই। কাজের ফাঁকে একটু ছুটি পেলেই তাই অনেকেই ছুটেন একটু বিনোদনের জন্য। কিংবা ছুটির দিনে পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটাতে একটু খোলা পরিবেশে ঘুরে বেড়ানো, সন্তানদের দৌড়ে বেড়ানো, প্রাণ খোলে নিঃশ্বাস নিতে রাজধানী ও এর আশেপাশে রয়েছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। এসব দর্শনীয় স্থান সপ্তাহে কয়দিন খোলা থাকে, কোন দিন বন্ধ থাকে, সময়সূচি, যাতায়াত ব্যবস্থা ও যোগাযোগ নম্বরসহ বিস্তারিত প্রকাশ করা হলো ভ্রমন পিপাসুদের জন্য। (প্রথম পর্ব)
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক
জীববৈচিত্রে দেখতে যেতে হবে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের রাথুরা মৌজায় এই সাফারি পার্ক। সদর উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর বাঘের বাজার থেকে পশ্চিম দিকে আড়াই কিলোমিটার দূরে ইন্দবপুর গ্রামের কাছেই পার্কটি। পার্কটিতে প্রায় চার হাজার একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। ছায়া সুনিবিড় প্রাকৃতিক শোভায় ভরা এ পার্কে রয়েছে ভাওয়াল গড়ের ঐতিহ্যবাহী গজারি গাছ, শালবন, আকাশ চুম্বি, আকাশ মনি, কাশঁবন, ছন। এখানে আরও রয়েছে ৮টি বাঘ, ৪টি সিংহ, ৪টি ভাল্লুক, ৪টি জিরাফ, ৩টি জেব্রা ও ১০টি বন্য গরু। এছাড়াও কুমির, সাপ, উটপাখিও আছে।
পার্কের টিকেট বয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা, এভিয়ারীতে ঢুকতে আলাদা ১০ টাকার টিকেট লাগবে। সাফারী কার চালু হয়ে গেলে সেটার জন্য টিকেট জনপ্রতি ১০০ টাকা, বাচ্চাদের জন্য ৫০ টাকা। খেয়াল রাখবেন, পার্কের ভেতর খাবার নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। সরকারি ছুটির দিন গুলো ব্যতীত যে কোন দিন ঘুরে আসতে পারেন আপনার প্রিয় জনদের সাথে।
যাতায়াত ব্যবস্থা : ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। আপনি দেশের যেকোনো বিভাগ থেকে প্রথমে ঢাকা গিয়ে সেখান থেকে গাজীপুরের বাসে করে গাজীপুরের শ্রীপুরের ইন্দ্রপুর (বাঘেরবাজার) এলাকায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে চলে আসতে পারেন। আর শিক্ষা সফর সহ পিকনিক সংঘ হিসেবে আসতে চাইলে তো কোন সমস্যাই নেই সেক্ষেত্রে আপনি বাস মিনিবাস ভারা নিয়ে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকেই চলে আসতে পারেন এশিয়ার বৃহত্তম এই সাফারি পার্ক দর্শনে।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান
সরকারি পিকনিক স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম হল গাজীপুরের এ ভাওয়াল উদ্যান। গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর থানা জুড়ে অবস্থিত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান একটি আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র। ঢাকা শহর হতে ৪০ কিমি এবং গাজীপুর সদর ও কাপাসিয়া হতে ২০ কিমি. দুরে এটি অবস্থিত। এখানে রয়েছে বড় একটি মাঠ। তাছাড়া রয়েছে এখানে একটি চিড়িয়াখানা। পৃথিবীর অন্যান্য জাতীয় উদ্যানের আদলে ৬,৪৭৭ হেক্টর জমিতে ১৯৭৩ সালে এ উদ্যান সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মূল উদ্ভিদ হলো শাল। এছাড়াও নানারকম গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ এ উদ্যান।
জাতীয় উদ্যানের ভেতরে বেশকয়েকটি বনভোজন কেন্দ্র, ১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্ট হাউস রয়েছে। উদ্যানে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৬ টাকা। এছাড়া পিকনিক স্পট ব্যবহার করতে হলে, বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় (০২-৮৮১৪৭০০) থেকে আগাম বুকিং দিয়ে আসতে হবে।
আরও পড়ুন: প্রকৃতির কাছাকাছি লোভাছড়া’য় একদিন
যাতায়াত ব্যবস্থা : ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী যে কোন বাসে করে চলে আসতে পারেন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ পরিচিত এই উদ্যান। তাই চিনতে খুব বেশি অসুবিধা হবার কথা নয়।
নন্দন পার্ক
সাভারের অদূরে চন্দ্রার বাড়ই পাড়ায় রয়েছে নন্দন পার্ক। এখানকার ড্রাই জোনে মজাদার বেশ কিছু রাইড থাকলেও এর মূল আকর্ষণ ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে। এসবের মধ্যে প্রথমেই বলা যায় ওয়েবপুলের কথা। যারা কখনও সমুদ্রে যাননি কিংবা গেলেও ভয়ে সমুদ্র জলে স্নান করেননি তাদের আফসোস অনেকটাই মেটাতে সক্ষম হবে মজাদার এই রাইডটি। এটি আসলে একটি কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত। সাত হাজার বর্গফুটের এই সৈকতে আছে সমুদ্রের মতোই বড় বড় ঢেউ। তবে এত বড় ঢেউয়ের মধ্যেও নামতে কিন্তু কোনো ভয় নেই। টিউবে চড়ে ঢেউয়ের তালে ভেসে বেড়াতে পারেন ইচ্ছে মতো।
এখানকার ওয়েব রানার হলো ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের আরেক মজার রাইড। এ ছাড়া ফ্যামিলি কার্ভ স্লাইড, ওয়াটার ফান প্লাজা, ডুম স্লাইড, মাল্টি প্লে জোনসহ মজার মজার সব রাইড আছে এখানে। ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের সময় প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা। আর বছরের সব দিনই খোলা থাকে এটি। ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে গেলে আপনাকে অবশ্যই ভিজতে হবে। তাই সাথে বাড়তি পোশাক নিতে হবে। তবে বাড়তি পোশাক বহনের ঝক্কি এড়াতে চাইলে পার্কের ভেতরেই ভাড়ায় পোশাক পাওয়া যাবে। নন্দন পার্কের প্রবেশ ও বিভিন্ন রাইডের মূল্যসহ প্রয়োজনীয় তথ্য জানা যাবে (০২-৯৮৯০২৮৩) নম্বরে।
যাতায়াত ব্যবস্থা : ঢাকা থেকে নন্দন পার্ক যাওয়ার কয়েকটি রুট আছে। আবাবিল পরিবহন মতিঝিল থেকে ছেড়ে গুলিস্তান, মগ বাজার, মহাখালি, বনানি, উত্তরা, আশুলিয়া ইপিজেড হয়ে যায়। আর সুপার বাস মতিঝিল থেকে ছেড়ে গুলিস্তান, শাহবাগ, আসাদগেট, গাবতলী, সাভার, নবীনগর, ইপিজেড হয়ে যায়।
ফ্যান্টাসি কিংডম
আশুলিয়ার জামগড়ায় গড়ে উঠেছে বিশ্বের আধুনিক সব রাইড নিয়ে বিনোদন কেন্দ্র ফ্যান্টাসি কিংডম। রোলার কোস্টার, শান্তা মারিয়া, ম্যাজিক কার্পেটসহ আনন্দদায়ক ও রোমাঞ্চকর বেশকিছু রাইড আছে এখানে। তবে এখানে সর্বশেষ সংযোজন জলের রাজ্যে বেড়ানোর মজাদার আর রোমাঞ্চকরসব রাইডসমেত ওয়াটার কিংডম। মজার মজার ১১টি রাইড ছাড়াও রয়েছে বেড়ানোর অনেক জায়গা। কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত ওয়েবপুল, বিশাল উঁচু জায়গা থেকে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে জল ভর্তি পুলে পড়ার জন্য স্লাইড ওয়ার্ল্ড, টিউব স্লাইড, পরিবারের সবাই মিলে আনন্দ করা যাবে ফ্যামিলি পুলে। এ ছাড়া লেজি রিভার, ওয়াটার ফল, ডুম স্লাইড, লস্ট কিংডম, প্লে জোন, ড্যান্সিং জোনের মতো মজারসব রাইডও আছে এখানে।
ওয়াটার কিংডম প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বছরের সব দিনই খোলা থাকে। এখানে যেতে হলে অবশ্যই ভিজতে হবে। তাই সাথে নিয়ে যেতে হবে বাড়তি পোশাক আর তোয়ালে। তবে এসব পোশাক ভাড়ায়ও পাওয়া যাবে এখানে। ফ্যান্টাসি কিংডমের পাশেই হেরিটেজ পার্কে আছে ঐতিহ্যের পরিপূর্ণ ভাণ্ডার। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর অনেকগুলোই চোখে পড়বে এখানে। এগুলো মূল স্থাপনার অবিকল আদলেই তৈরি করা হয়েছে হেরিটেজ পার্কে।
ফ্যান্টাসি কিংডম ও হেরিটেজ পার্কের প্রবেশ ও বিভিন্ন রাইডের মূল্যসহ প্রয়োজনীয় তথ্য জানা যাবে (০২-৭৭০১৯৪৪-৪৯)এই নম্বরগুলিতে।
যাতায়াত ব্যবস্থা : মতিঝিল থেকে মঞ্জিল পরিবহন, হুইল লাইন্স ওয়াটার কিংডম মগবাজার, মহাখালি, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর ও আশুলিয়া হয়ে। আর হানিফ মেট্রো সার্ভিস যায় মতিঝিল থেকে ছেড়ে শাহবাগ, শুক্রাবাদ, আসাদগেট, শ্যামলি, গাবতলি, সাভার, নবীনগর হয়ে। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ –
ঢাকা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের নবীনগরে রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণউত্সর্গকারী শহীদদের স্মরণে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মোট ১০৮ একর উচুঁ-নিচু টিলা আকৃতির জায়গার উপর বিস্তৃত সবুজ ঘাসের গালিচায় আবৃত দেশি-বিদেশি গাছের বাগান আর লাল ইটের রাস্তা সমৃদ্ধ এই সৌধটি ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে।
আর এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে কৃত্রিম লেক। সৌধ চত্বরের আশপাশের পুরো এলাকাটিই ছায়াঘেরা। ফলে ঘুরে বেড়াতে সবার। জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢুকতে কোনো প্রবেশ মূল্য লাগে না। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এটি খোলা থাকে।
যাতায়াত ব্যবস্থা : ঢাকার গুলিস্তান ও গাবতলী থেকে নবীনগর, ধামরাই ও মানিকগঞ্জগামী যেকোনো বাসে সাভারের নবীনগরে জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনেই নামা যায়।
এন এইচ, ১০ অক্টোবর