মেয়র আরিফের সমাবেশ আজ
সিলেট, ২০ মে – সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠেই আজ সমাবেশ করবেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। শনিবার দুপুর ২টায় আয়োজিত সমাবেশেই তিনি খোলাসা করবেন মেয়র প্রার্থিতার বিষয়ে। জানা যাবে তিনি নির্বাচনমুখী, নাকি রাজনীতিমুখী। এ সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য নগরবাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে মেয়র আরিফের পক্ষ থেকে শুক্রবার রাত ১০টায় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।
শুক্রবার সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সমাবেশ করতে হয় কোর্ট পয়েন্টে। বিকালে ওই সমাবেশ শেষ করেই সোজা ওই মাঠে চলে যান মেয়র আরিফ। গেট বন্ধ থাকায় তিনি বাইরে অনুসারীদের নিয়ে দাঁড়ান। পুলিশ জানায়, মাঠে সমাবেশ করা যাবে না।
একথা শুনে খ্যাপে যান আরিফ। পুলিশকে বলেন, অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত যাব না। আমি অনেক আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছি। এমন দৃঢ় সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর অনুসারীরা চেয়ার এনে দেন মেয়রকে।
ওখানেই বসে পড়েন মেয়র। প্রায় দেড় ঘণ্টা অবস্থানের পর সমাবেশের অনুমতি আদায় করেই ফেরেন আরিফ। মেয়র আরিফ রেজিস্ট্রি মাঠে যান গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে।
সেখানে পুলিশের আচরণে ক্ষুব্ধ আরিফ বেশ কিছুক্ষণ বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমি মামলা জেল মৃত্যু ভয় পাই না। যদি নিয়ে যেতে চাও আমি রাজি আছি। আমাকে এসবের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত দুঃখিত, মর্মাহত। আমি এই নগরের ১০ বছর ধরে মেয়র। আমি সেবা দিয়ে আসছি। এটা সম্প্রীতির নগরী। এখানের সমাবেশে আমার অবস্থান আমি স্পষ্ট করব। অনেকদিন ধরে সমাবেশের ব্যাপারে নিউজ হচ্ছে।
পুলিশ কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারকেও জানিয়েছি। আমাকে কোনো উত্তর বা কোনো চিঠিপত্র দিয়ে হঠাৎ আমার প্যান্ডেল করতে দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, আমি আমি এখনো নগরবাসীকে ডাক দেইনি। সাহায্য চাইনি। জানাইনি আমার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে।
একপর্যায়ে মেয়র ওখানে দাঁড়িয়েই নগরবাসীর উদ্দেশে বলেন, আমি আপনাদের আহ্বান করছি, যে যেখানে আছেন আপনারা চলে আসেন। আমি একটা প্যান্ডেল করছি নগরবাসীকে বৃষ্টি বাদলের দিনে খোলা আকাশের নিচে রাখব না বলে।
তিনি বলেন, সিলেটে আমরা আমাদের যে সম্প্রীতি রেখে চলি তা নষ্ট করা হচ্ছে। নগরবাসীকে আহ্বান জানাই, সিলেটকে বাঁচান। আমি আপনাদের সেবক, যদি বিচার করতে হয় আপনারা আমার বিচার করুন। আমার ওপর নির্যাতন হতে পারে, বাট আমি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি। আপনাদের সবার দোয়া চাই।
এর প্রায় ঘণ্টাখানেক পর পুলিশের পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। খুলে দেওয়া হয় রেজিস্ট্রি মাঠের গেট। সেখানে কাজ শুরু করেন ডেকোরেটরের লোকজন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সুদীপ দাস বলেন, আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় সমাবেশ না করার অনুরোধ করা হয়েছিল মেয়রকে। পরে মেয়রের অনুরোধে অনুমতি দেওয়া হয়।
বিএনপি নির্বাচন না করায় ২১ জুন অনুষ্ঠেয় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র আরিফুল হকের অংশগ্রহণ নিয়ে ধূম্রজালের মধ্যে আছেন নগরবাসী। মেয়র বিষয়টি স্পষ্ট করার কথা দিয়েছিলেন। সেই কথা অনুযায়ী আজ তিনি সেটা স্পষ্ট করবেন।
বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করায় বেকায়দায় আছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা আরিফ। নির্বাচন করলে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি রয়েছে।
যদিও স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ এবং নগরীর বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণিসহ সাধারণ ভোটাররা চান আরিফ নির্বাচন করুন। তাবে আজ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি খোলাসা করবেন নির্বাচন করবেন কী করবেন না।
রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র থাকায় দেশের নির্বাচন বিশ্লেষকদের দৃষ্টি এখন আরিফের দিকে। সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের স্বার্থে যথারীতি আরিফের নির্বাচনে অংশগ্রহণের কঠোর বিরোধী বিএনপি। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ দেখাতে সরকারি দল তাকে নির্বাচনে দেখতে চায় বলে গুঞ্জন রয়েছে।
গত কয়েকদিন দেওয়া বক্তব্যে আরিফ তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি রহস্যাবৃত করে রেখেছেন। শুক্রবার নগরীর মেজরটিলা এলাকায় জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘যে অবস্থায় থাকি না কেন, জনগণের পাশেই থাকব।’
এর আগে বুধবার নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, জনগণ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা হচ্ছে। এ সময় তিনি সিসিক নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধিতা করছেন।
তার এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপি করি। আমার দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। এবার যদি আমাকে নির্বাচন করতে হয় তবে দল ছাড়তে হবে। দলের আদর্শ থেকে সরে আসতে হবে। আর দল করতে হলে নির্বাচন ত্যাগ করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার বিকালে মহানগর বিএনপির নেতা ও সিসিকের চারবারের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তার এ ঘোষণায় নতুন করে চাপে পড়েছেন আরিফ।
সিসিক নির্বাচন বর্জনের জন্য কাউন্সিলর পদে অংশগ্রহণে আগ্রহী ৩২ জন নেতাকে কঠোর বার্তা দিয়ে চিঠি দিয়েছে সিলেট মহানগর বিএনপি। নির্বাচন করলে গাজীপুরের মতো তারাও আজীবনের জন্য বহিষ্কার হতে পারেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তারা কোনো নির্বাচনে যাবেন না। এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন বর্জন করবেন বলে আশা করেন দলের সবাই।
সূত্র: যুগান্তর
আইএ/ ২০ মে ২০২৩