ঢাকা, ১৯ মে – বর্তমানে ট্রেনে চেপে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাওয়া যায়। এরপর কক্সবাজারে যেতে হয় সড়কপথে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন চালুর স্বপ্ন পূরণ হবে আগামী সেপ্টেম্বরেই। কারণ চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু নতুন পথে যাত্রা নির্বিঘœ করতে প্রয়োজন আরও ২১ হাজার কোটি টাকা।
নতুন পথে ট্রেন চালাতে হলে পাড়ি দিতে হবে ৭২ বছরের পুরনো চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথ। ৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথের মধ্যে পড়েছে ‘সমবয়সী’ কালুরঘাট সেতু। ৭২০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটির অবস্থা জরাজীর্ণ। এই রেলপথ ও সেতু নির্মাণ শেষে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্বিঘœ রেল যোগাযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কমপক্ষে ২০২৯ সাল পর্যন্ত।
কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এখন দেখা যাচ্ছে, আরও ২১ হাজার কোটি টাকা লাগবে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরে খরচ ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। আর কালুরঘাট সেতু নির্মাণে লাগবে ১৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকার মতো। ১৯৩১ সালে নির্মিত এক লেনের কালুরঘাট
সেতু দিয়ে ১৯৬২ সাল থেকে একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলছে। ট্রেন চলাচলের সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। আবার এক লেনের সড়ক বলে উভয় দিক থেকে একই সময়ে গাড়ি চলাচল করতে পারে না। বোয়ালখালী থেকে চট্টগ্রামমুখী গাড়ি চলাচলের সময় চট্টগ্রাম থেকে বোয়ালখালীমুখী গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এই সেতু দিয়ে বর্তমানে দিনে মাত্র ছয় বার ট্রেন চলে। কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন চালুর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলো কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে। তখন দিনে ১৮টি ট্রেন চলবে। জরাজীর্ণ হওয়ায় এই সেতু দিয়ে বর্তমানে ঘণ্টায় মাত্র ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলে।
আগেও দুই দফা বড় ধরনের সংস্কার করা হয়েছে কালুরঘাট সেতুতে। রেলের ভাষ্যানুযায়ী, নতুন নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব। কক্সবাজার পর্যন্ত যে ট্রেন যাবে, সেগুলো চলাচলের জন্য কালুলঘাট সেতু উপযুক্ত নয়।
চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয় গত ৮ মে । সভার নথিপত্র বলছে, সাত হাজার ৭৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পে চার হাজার ৬৫ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কাজ শুরু করা গেলে ২০২৭ সালের জুনে নির্মাণ সম্পন্ন হবে। তবে আগেও দুই দফা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয় কালুরঘাট সেতুর। প্রথমবার হয় ২০১২ সালে। সেটি বাতিল করে ২০১৬ সালে সমীক্ষা করে ইডিসিএফ। তাদের পরিকল্পনায়, সেতুতে ট্রেন চলাচলে ডুয়েলগেজ সিঙ্গল লাইন রেলপথ এবং গাড়ির জন্য দুই লেনের সড়ক রাখার সুপারিশ করা হয়। এখন অর্থায়ন নিশ্চিত করে কবে নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা নিশ্চিত নন কেউই। তবে ২০২৯ সালের মধ্যে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল নির্বিঘœ করা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগে যুক্ত হবে কক্সবাজার। এ পর্যন্ত রেল প্রকল্পের ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত বাকি কাজগুলো শেষ করা হবে।’
সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ১৯ মে ২০২৩