ক্রিকেট

যে তিনটি নিয়মে পরিবর্তন ক্রিকেট খেলাকে বদলে দিতে পারে

খেলার নিয়মে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, সাথে ছোটখাটো কিছু বদলও রয়েছে। এসব নিয়ম পহেলা জুন ২০২৩ থেকে কার্যকর হবে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কমিটি পুরুষ ও নারী ক্রিকেট কমিটি থেকে পাওয়া নানা ধরনের পরামর্শ থেকে এই বদলগুলো আনতে সম্মত হয়েছে।

মাটির কাছাকাছি থাকা বল ক্যাচ ধরার বেলায় সূক্ষ্ম ব্যবধানে অনেক ক্রিকেটার আউট হয়েছেন বা ফিল্ডার ক্যাচটি মিস করেছেন।

এই ধরনের সিদ্ধান্তের সময় থার্ড আম্পায়ার আউট অথবা নট আউট বলার আগে মাঠে থাকা আম্পায়ার থার্ড আম্পায়ারকে ‘সফট সিগন্যাল’ দিতেন।

সফট সিগন্যাল কী?
সফট সিগন্যাল হচ্ছে আম্পায়ারের প্রাথমিক ধারণা। যা থেকে ধারণা নিয়ে থার্ড আম্পায়ার সিদ্ধান্ত নিতেন আগে।

পহেলা জুন থেকে আম্পায়াররা মাঠ থেকে কোনও সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখবেন না।

অনেক সময়ই এই সফট সিগন্যাল মাথায় রেখে থার্ড আম্পায়ার সিদ্ধান্ত দিতেন।

অর্থাৎ থার্ড আম্পায়ার কোনও পূর্ব অনুমিত ধারণা ছাড়াই মাঠে থাকা আম্পায়ারদের সাথে আলোচনা করে এবং ফুটেজ প্রমাণ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

এই সফট সিগন্যাল নিয়মটিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বলছে, ‘সংশয়পূর্ণ’।

ক্রিকেটারদের অনেকেই এই ‘সফট সিগন্যাল’- এর বিপক্ষে কথা বলেছেন।

অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার জশ হ্যাজলউড এই বছরের জানুয়ারি মাসে গণমাধ্যমে বলেন, “সফট কল পুরোপুরি তুলে নেয়া উচিৎ”।

তিনি বলেছিলেন, “যেহেতু থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য নেয়া হয়েছে এর মানে মাঠের আম্পায়াররা নিশ্চিত নন। তাহলে এই সফট কলের কোনও প্রয়োজন নেই”।

ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকস ও ভারতের হরভজন সিংও এই সফট কলের বিপক্ষে কথা বলেছেন।

হরভজন সিং বলেছিলেন, এটা শুধু শুধু সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই না।

বেন স্টোকস টুইট করে বলেছিলেন, “সফট কল নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়। থার্ড আম্পায়ারের কাছে সব ধরনের প্রযুক্তি রয়েছে এবং মাঠের আম্পায়াররা যখন দ্বিধায় থাকেন তখন এটা সরাসরি থার্ড আম্পায়ারকেই পাঠানো উচিৎ”।

ভিরাট কোহলি ভারতের অধিনায়ক থাকাকালীন ২০২১ সালে বলেছিলেন, “আম্পায়াররা যে নিশ্চিত না এটা বললে তো সমস্যা দেখি না আমি। এসব সিদ্ধান্তের কারণে অনেক সময় ম্যাচের ফলাফলে প্রভাব পড়ে”।

ক্রিকেট নিয়ে অ্যামাজন প্রাইমের ডকুমেন্টারি দ্য টেস্টে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার মার্নাস ল্যাবুশেইন ২০১৯ সালের অ্যাশেজে লর্ডস টেস্টে আউট হওয়ার পর ড্রেসিং রুমে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

তিনি বলছিলেন, “আমি বুঝতেই পারছি না এটা কেন মাঠে আউট দেয়া হলো, যদি আপনি না জানেন থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠান”।

সবশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার অস্ট্রেলিয়া সফরে অন্তত তিনটি ক্যাচ ধরা নিয়ে সংশয় ও দ্বিধা দেখা গিয়েছিল, ম্যাচের পরে এনিয়ে অধিনায়করাও নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের পুরুষ ক্রিকেট কমিটির চেয়ার সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘সফট সিগন্যাল অপ্রয়োজনীয় একটি বিষয় এবং এটা অনেক সময়ই খুব অস্পষ্ট’।

তবে জনপ্রিয় ক্রিকেট উপস্থাপক ও বিশ্লেষক হারশা ভোগলে একটি টুইট করে জানিয়েছেন, সফট সিগন্যাল উঠে যাওয়াতে তিনি খানিকটা চিন্তিত।

ভোগলে মনে করেন, অনেক সময় ক্যামেরা নানা কোন থেকে দেখেও সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারে না।

“বাউন্ডারি লাইনের জন্য নতুন এই নিয়ম কার্যকরী হতে পারে কারণ সে পর্যন্ত আম্পায়ারের দৃষ্টি যায় না কিন্তু টেলিভিশন ক্যামেরায় আপনি তাই দেখাবেন যা আপনি দেখতে চাইবেন, তাই মাঠের আম্পায়াররা কী অনুভব করছেন তার একটা মূল্যায়ন থাকার প্রয়োজন ছিল”।

অনেকেই এই টুইটের মন্তব্যের ঘরে হারশা ভোগলের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

কেউ কেউ মনে করেন, সফট সিগন্যালে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তটি ফিল্ডারের উদযাপনের তীব্রতা ও নামের ওপর নির্ভর করে।

আরও দুটি নতুন নিয়ম
বেশ কয়েকটি জায়গায় হেলমেট পরিধান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছেন ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে এখন।

“কিছু কিছু জায়গায় হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে”।

এই তিন ক্ষেত্রে এখন ক্রিকেটারকে হেলমেট পরতেই হবে।

আরেকটি নিয়ম হচ্ছে, ফ্রি হিটের বলে, বল স্ট্যাম্পে লাগার পরেও যদি কোনও রান হয় সেটা স্কোরকার্ডে যোগ হবে।

এটা এতোদিন মাঠে কার্যকর ছিল, কিন্তু ক্রিকেট আইনে ছিল না।

যেমন পাকিস্তান বনাম ভারতের বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টির ম্যাচে মেলবোর্নে শেষ ওভারে ভিরাট কোহলি বোল্ড মোহাম্মদ নাওয়াজের ফ্রি হিট বলে বোল্ড হওয়ার পরেও দৌড়ে রান নিয়েছিলেন তিনটি।

এই ছোট বিষয়গুলো ম্যাচে অনেক সময় প্রভাব ফেলে, বিশেষত যেসব ম্যাচে সামান্য ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়।

এম ইউ/১৭ মে ২০২৩

Back to top button