জাতীয়

‘দেশের উন্নয়নে’ বিজিএমইএ’র সাত প্রতিশ্রুতি

ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর- বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং জাতির পিতার ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘গো হিউম্যান গো গ্রীন’ উদ্যোগের আওতায় ৭টি প্রতিশ্রুতির ঘোষণা দিয়েছে পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।

এ উপলক্ষে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে ভার্চুয়ালি এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানেই প্রতিশ্রুতির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সংগঠনটি বলছে, পোশাক শিল্পের প্রান যে মানুষেরা তাদের সহায়তা করা, সেইসঙ্গে একটি আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই এই ৭টি প্রতিশ্রুতির মূল লক্ষ্য।

ড. রুবানা হক বলেন, অমিত সম্ভাবনার হাতছানি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। মেইড ইন বাংলাদেশ নামে বিশ্বে দেশকে পরিচিত দিয়েছে পোশাকখাত। ইতিমধ্যেই মিলেছে মধ্যম আয় ও উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি। আর এই রূপরখা বাস্তবায়নে অর্থনীতির সেনা পোশাক শিল্প ‘সুতোয় বোনা সোনার দেশ, পঞ্চাশে বাংলাদেশ’ শ্লোগানে সরকারের পাশে থেকে সহযোদ্ধার ভূমিকা পালন করছে।

৭টি প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতির বক্তব্য নিন্মে তুলে ধরা হল:

১. শ্রমিক ভাই-বোনদের শিক্ষা:
আমরা যে শুধুমাত্র সভ্যতা বুনি তা নয়, জীবনও গড়ি- আর সেই জীবনকে অনন্য উচ্চতায় নিযে যাওয়ার জন্য শ্রমিক ভাইবোনদের জন্য উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছি। আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, বর্তমানে মোট ৭০ জন নারী কর্মী সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ প্রোগ্রামের অধীনে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়ন করছে। উদ্যোগটি বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে, প্রশংসিত হয়েছে।

আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এবছরই প্রথম ব্যাচ হিসেবে তাদের মধ্য থেকে ৪ জন স্নাততক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং শিল্পের ভেতরে ও বাইরে কর্মস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। পোশাক শিল্পের ইতিহাসে এটি আমাদের নারী কর্মীদের শিক্ষা ও তাদের মর্যাদা উন্নীতকরণের যাত্রাপথে একটি বিশাল মাইলফলক। বিজিএমইএ এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন মিলে আসন্ন বিজয় দিবসে একটি ই-গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান আয়োজনেরও পরিকল্পনা করেছি, যেখানে দেশ বিদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ এবং মতবিনিময় করবেন। সেদিন আর দূরে নয়- যেদিন স্নাতক পাস করা নারী পোশাক কর্মীরা বিভিন্ন সেক্টরে ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে কাজ করবেন।

২. শ্রমিকদের সন্তানদের প্রাক শৈশব শিক্ষা:
শ্রমিক ভাই-বোনেরা যখন কারখানাতে কর্মরত থাকেন, তখন তাদের শিশু সন্তানরা পুরো দিনটি কারখানার ডে-কেয়ার সেন্টারেই কাটায়। এই শিশুদেরকে অনলাইন শিক্ষা প্রদানের জন্য বিজিএমইএ এবং জাগো ফাউন্ডেশন যৌথ উদ্যোগ গ্রহন করেছে। প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে একটি পাইলট কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। আগামিতে এই কর্মসূচি আরও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করা হবে।

৩. মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন:
ভালো থাকার সাথে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। তাই, বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো পোশাক শিল্পখাতের কর্মরত শ্রমিকদের মানসিক স্বাস্থের উন্নয়ন বিষয়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে- বিজিএমইএ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’র সাথে যুক্ত হয়েছে। ‘মনের বন্ধু’র সেশনগুলোতে অংশগ্রহনকারী শ্রমিকরা বলেছেন, এগুলোতে অংশগ্রহণ করতে পেরে তারা অত্যন্ত আনন্দিত ও নিজেদেরকে চাপমুক্ত অনুভব করছেন। এ পর্যন্ত ৫০টি কারখানায় মনের বন্ধু সেশন পরিচালনা করেছে।

৪. আর্থ-সামাজিক এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে (সাসটেইনিবিলিটি):
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পোশাক কারখানাগুলো কি প্রভাব রাখতে পারে, সে বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য আমরা ইউএনডিপি ও ও জিআরআই এর সাথে যৌথ উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের ৫০টি পোশাক কারখানায় সাসটেইনিবিলিটি রিপোর্টিং স্টাডি’ শীর্ষক একটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এই প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থনে এবং জাতীয় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পের অবদান নির্ধারনে ব্যবহার করা হবে।

৫. ফ্যাশন বিশ্বে রপ্তানি পণ্যে ঐতিহ্য উপস্থাপন:
ঐতিহ্য আমাদের জাতিগত পরিচয়কে তুলে ধরে। আধুনিক বিশ্বে আমরা বিশ্ব নাগরিক হয়ে উঠেছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের পরিচয় বাঙ্গালী। আর সেই বাঙালিয়ানা মিশে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্যের মধ্যে। আমরা যদি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রপ্তানি করতে পারি- আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বিশ্বে আমাদের নিজস্ব পদচিহ্ন এঁকে দিতে পারি, তবে সেটি হবে আমাদের এ শিল্পের জন্য একটি বিশাল মাইলফলক। আনন্দের সাথে জানাচ্ছি, বিজিএমইএ দেশি, বিদেশি ফ্যাশন ডিজাইনারদেকে সাথে নিয়ে এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পও নিয়েছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোর বাজার আকৃষ্ট করার জন্য জানুয়ারী মাসে একটি ভার্চুয়াল ফ্যাশন শো’ এর আয়োজন হচ্ছে, যেখানে পোশাকে বাংলাদেশের ঐতিহ্য উপস্থাপিত হবে।

৬. শ্রমিক ভাইবোনদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা:

চলমান কোভিড-১৯ মহামারি থেকে শ্রমিক ভাইবোন ও শিল্পকে রক্ষার জন্য বিজিএমইএ অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য স্বাস্থ্য বিধি/প্রটোকল প্রনয়ণ; কারখানাগুলো যথাযথভাবে প্রটোকলগুলো অনুসরন করছে কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন; ইনসপেক্টরিও প্লাটফর্মের সহযোগিতায় কারখানাসমূহকে করোনাকালীন স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা প্রদান; পোশাক শিল্পের শ্রমিক ভাইবোনদের সংক্রমণ পরীক্ষায় বিজিএমইএ গাজীপুরের চন্দ্রায় বিশ্বমানের পিসিআর ল্যাব স্থাপন; কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও এর বিস্তার রোধকল্পে এবং শ্রমিকদেরকে সাধারন ও মানসিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মায়া এবং কমন হেলথ এর সাথে উদ্যোগ গ্রহন এবং এরকম আরও অনেক পদক্ষেপ।

আমরা বলতে পারি, মার্চ-এপ্রিলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সূচনা হয়েছিলো, সেখান থেকে শিল্প সফলতার সাথে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। তারপরও করোনা’র দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। বিজিএমইএ সে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য যথাযথ অগ্রীম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।

৭. দক্ষতা ও উদ্ভাবনী সক্ষমতার বিকাশ:
বিশ্ব ফ্যাশন শিল্পে উৎপাদন প্রক্রিয়াগুলোকে দ্রুততর ও সহজতর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফেব্রিক্স কাটিং সফটওয়্যার, থ্রিডি স্যাম্পলিং ও প্যাটার্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিবর্তিত চাহিদার সাথে মিল রেখে আমাদের পোশাক শিল্পখাতও উৎপাদন ব্যবস্থায় উদ্ভবনী সক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছে। পোশাক শিল্পের প্রতিযোগি সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিজিএমইএ কারখানাগুলোর জন্য উৎপাদনশীলতা, উদ্ভাবনী সক্ষমতার বিকাশ এবং পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করেছে।

আমারা বিশ্বাস করি, এ সমস্ত উদ্যোগ শিল্পকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে এবং সরকারের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

ড. রুবানা হক বলেন, উদ্যোগগুলো উদ্যোক্তারা নিজেরাই স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে গ্রহন করেছেন। তবে তা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে ব্র্যান্ড/ক্রেতা, দাতাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমরা টেকসই শিল্প নিয়ে কথা বলি। এই টেকসই শিল্পের অর্থ অনেক ব্যাপক। যদিও রপ্তানিতে আপাতদৃষ্টে বিপর্যয় এড়ানো গেছে, কিন্তু সংকট কাটেনি। কারখানার যে আর্থিক লোকসান হয়েছে, সে দায় বা ক্ষতি রাতারাতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন : নুরকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ

তারপর নতুন করে কোভিড সংক্রমনের আশঙ্কার কথাও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। পোশাক শিল্পখাত সরকারের অত্যন্ত সময়োপযোগি নীতি ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিনত হয়েছে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে শিল্প ও কর্মসংস্থানের সুরক্ষার জন্য এবং একটি টেকসই শিল্প বিনির্মানে সরকারের অব্যাহত সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের সবার সমর্থন প্রত্যাশা করি।

সূত্রঃ সময় নিউজ
আডি/ ১২ ডিসেম্বর

Back to top button