পশ্চিমবঙ্গ

প্রশিক্ষণহীন ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করল আদালত, নতুন নিয়োগ শীঘ্রই

কলকাতা, ১২ মে – প্রাথমিকে ৩৬ হাজার অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকের চাকরি বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্ট। ২০১৬ সালের নিয়োগের মধ্য়ে থেকে ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণহীনদের চাকরি বাতিল করা হল। আগামী তিন মাসের প্রাথমিকে নতুন করে নিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত।

শুক্রবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এ নির্দেশ দেন। তিনি জানিয়েছেন, যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে, তারা ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকলে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তারাও অংশ নিতে পারবেন।

এদিকে, ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি এখনই পুরোপুরি যাচ্ছে না। আপাতত আগামী চারমাস তারা স্কুলে যেতে পারবেন। কিন্তু তারা পূর্ণ সময়ের শিক্ষক হিসাবে থাকতে পারবেন না। তারা মূলত পার্শ্ব সময়ের শিক্ষকের মতো বেতন পাবেন।

এর আগে, নিয়োগ না পেয়ে অপ্রশিক্ষিত প্রিয়াঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন হাইকোর্টে মামলা করেন। মামলাকারীরা সকলেই অপ্রশিক্ষিত। তাদের দাবি, সম্প্রতি আদালতের নির্দেশে নম্বর বিভাজন-সহ তালিকা প্রকাশ হয়েছে। সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে তাদের থেকে কম নম্বর পেয়েও অনেক অপ্রশিক্ষিত প্রার্থী চাকরির সুপারিশপত্র পেয়েছেন। তার পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্যানেল বাতিল করে ‘ঢাকি সমেত বিসর্জন’-এর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো প্যানেল বাতিল করে দেবেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমি ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব।’

মামলাকারীদের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারির বক্তব্য, মামলাকারীদের থেকে কম নম্বর প্রাপ্ত অনেককে চাকরি দেয়া হয়েছে। তার অভিযোগ, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্যানেলে ৮২৪ জনের নাম ছিল। মামলাকারীরা ইন্টারভিউ না দিয়েই তাদের থেকে বেশি নম্বর পেয়েছিলেন। তার পর ১৩৯ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়, চাকরি যারা পেয়েছেন, তাদের থেকেও এই ১৩৯ জনের নম্বর বেশি ছিল।

তরুণজ্যোতির দাবি, ৩০ হাজারের বেশি এমন প্রার্থী নিয়োগ করা হয়েছে, যাদের নম্বর মামলাকারীদের থেকে কম।

গত ডিসেম্বর মাসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ১৩৯ জনের তালিকাটি খতিয়ে দেখার জন্য পর্ষদকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তার মন্তব্য ছিল, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে তো ৩০ হাজার চাকরি প্রশ্নের মুখে পড়বে। আর এই নিয়োগ বেআইনি ভাবে হলে চাকরি বাতিল করবে আদালত।’

এদিকে, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করার কথা ভাবছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল জানালেন, তারা ওই রায় হাতে পাননি। তবে এ ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। গৌতমের বক্তব্য, ‘৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলে বিরাট বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। বোর্ড আইনি পরামর্শ নিচ্ছে। আমরা এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করতে যাচ্ছি।’ তবে এ ব্যাপারে হাইকোর্টের অর্ডার হাতে পেলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে পর্ষদ।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর নতুন করে ৩৬ হাজার শূন্যপদ তৈরি হয়েছে। এই শূন্যপদগুলিতে দ্রুত নিয়োগের নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি। বলা হয়েছে, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। যাদের চাকরি গিয়েছে, তারা আগামী চার মাস স্কুলে যেতে পারবেন। বেতন পাবেন প্যারা টিচার হিসাবে।

কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে কী ভাবে? কারা সেই নিয়োগে অংশ নিতে পারবেন? চাকরিই বা পাবেন কারা?

আদালত জানিয়েছে, ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণরাই এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। সেই সঙ্গে যাদের চাকরি গেল, তারাও নিয়োগপ্রক্রিয়ায় নতুন করে চাকরির আবেদন জানাতে পারবেন। তবে এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হলে সকলকেই প্রশিক্ষিত হতে হবে।

উল্লেখ্য, মোট ১ লক্ষ ২৫ হাজার টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীকে নিয়ে ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৪২ হাজার ৫০০ জন ইতিমধ্যে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। অর্থাৎ, বাকি রয়েছেন ৮২ হাজার ৫০০ জন চাকরিপ্রার্থী। এর সঙ্গে আরও ৩৬ হাজার চাকরিপ্রার্থী যুক্ত হবেন। চাকরি যাওয়া প্রাথমিক শিক্ষকেরা যদি এর মধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন, তবেই তারা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ১২ মে ২০২৩

Back to top button