সম্পাদকের পাতা

পার্টি ক্রাশার

বাংলাদেশ কমিউনিটিতে সাম্প্রতিককালে বিয়ের ধুম লেগেছে। প্রায় প্রতি সপ্তাহে দুটো/তিনটা বিয়ে লেগেই আছে। বাড়তি অনুষ্ঠান হিসেবে আছে গায়ে হলুদ। নিমন্ত্রণ দিতে পয়সা লাগে না; কিন্তু নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে পয়সা লাগে। তবে দেখা যায় কাউকে কাউকে নিমন্ত্রণ দিতে হয় না, তারা নিজ উদ্যোগে আসে এবং তাদের কোনো খরচপাতিও লাগে না। ইংরেজিতে এদেরকে বলা হয় ‘পার্টি ক্রাশার’ অর্থাৎ আমন্ত্রিত নয় এমন অতিথি। যাই হোক, বলছিলাম নিমন্ত্রণ যারা রক্ষা করেন তাদের কথা। একটা সময় ছিল যখন দোকান থেকে উপহার কিনে রেপিং পেপার দিয়ে মোড়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে হতো। আকস্মিকভাবে বিয়ের আমন্ত্রণ পত্রে দেখা গেলো নতুন একটি বাক্য: No boxed gifts please. স্বীকার করি, আমি হলাম স্লো লার্নারদের একজন। কোন কিছু বুঝতে এমনিতে আমার অনেক সময় লাগে, তারপর রীতির বাইরে এ নতুন রীতি বুঝতে তো কষ্ট হবেই!

মন থেকে ভাবনা দূর করার জন্য দু’একজন তথাকথিত পন্ডিত ব্যক্তির কাছে বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তারা বললেন- ‘আরে এটা হলো অতিথিদের মনে করিয়ে দেয়া যাতে তারা উপহার আনতে না ভুলেন।’ কি লজ্জার কথা! কিন্তু মনকে বুঝাতে বুঝাতে অনেকদিন পরে বুঝলাম এর গুঢ় অর্থ। অর্থাৎ এ রীতি চালুর পেছনে বিশেষ কারণ রয়েছে। যেমন, সবাই যদি উপহার হিসেবে একটা মাইক্রোওভেন নিয়ে আসেন, কিংবা সবাই যদি একটা করে রাইস কুকার নিয়ে আসেন কেমন লাগে? নতুন সংসারে একই আইটেম এর এতগুলো জিনিষের কি হবে? আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করা ছাড়া তখন উপায় থাকে না। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন তারা চিন্তা করেন না, যে আইটেমটি উপহার হিসেবে দিচ্ছেন সেটা নবদম্পতির সাংসারিক কোনো কাজে লাগবে কি না! তাদের ধারণা, উপহার দেয়ার কথা, উপহার দিয়েছি; এটা নিয়ে কি করবে- এটা তাদের ব্যাপার। তারা ভাবুক।

আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি- আমার এক ভাইয়ের বিয়েতে ১৮ খানা কোরান শরীফ, ২২ খানা মকসুদুল মোমেনীন, ১০ খানা অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ এবং সস্তা দরের ডজন খানেক উপন্যাস উপহার হিসেবে এসেছিলো। মানুষের মানসিকতা যে এরকম তা আমার ধারণার মধ্যে ছিল না। যেহেতু ধর্মীয় বিষয়টাকে আমরা সবার উপরে স্থান দিয়েছি অতএব অনেকে মনে করেন এর চাইতে বড় উপহার আর কি হতে পারে? এদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিষ বলতে কিছু নেই। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এরা ফাঁকিবাজি করেও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়; বড় বড় কথা বলে, ধর্ম নিয়ে তাবৎ উদাহরণগুলো তাদের ঠোটস্থ। অনেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন বাংলাদেশে কিছু কিছু দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা থাকে- ‘এখানে সস্তায় বিয়ের উপহার পাওয়া যায়’, বা ‘এখানে সস্তায় যাকাতের কাপড় পাওয়া যায়’। মানুষ যে ঐসব দোকানে যায় না এমন নয়; এক ধরনের মানুষ ওখানে ঠিকই যায়। পশ্চিমা বিশ্বে No boxed gifts please রীতি চালূ হওয়ার পেছনের রহস্য হলো বাক্সবন্দি উপহার সাংসারিক কাজে নাও লাগতে পারে তাই ওটার বদলে একটা এনভেলাপে গিফট কার্ড কিংবা নগদ অর্থ দিলে নবদম্পতি তাদের প্রয়োজনীয় জিনিষটি কিনে নিতে পারবে। এটাই তাদের জন্য দোয়া বা আশীর্বাদ।

উত্তর আমেরিকা বা ইউরোপে আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ অনেক। ভাল একটি ব্যাঙ্কুয়েট হলে বিয়ের আয়োজন, খাওয়া-দাওয়া সব মিলিয়ে পার্টি ভেদে একেকজন অতিথির পেছনে খরচ হতে পারে ৫০ থেকে ৮০ ডলার। আপনি গিফট কার্ড দিন বা নগদ অর্থ দিন, হিসেব করেই আপনাকে দিতে হবে। পরিবারের তিনজন গিয়ে যদি ১০০ ডলার দিয়ে আসেন তাহলে এটা যথার্থ হবে না। নিদেন পক্ষে আপনার ২০০ ডলার দেয়া উচিত। মনে রাখতে হবে আপনাদের তিনজনের পেছনে খরচ হয়ে গেছে ১৫০ ডলার। যাদের জন্য গিয়েছেন তারা তাহলে কি পেলো?

আরেকটা কথা। আমরা অনেকেই বিয়ের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে পরে ক্যান্সেল করে দিই। এ প্র্যকটিস ঠিক নয়। আপনি যদি না যেতে পারেন আগে থেকে বলে দিন। আর যদি একেবারে শেষ সময়ে আকস্মিক কোনো অসুবিধার কারনে না যেতে পারেন ফোন করে সাথে সাথে জানিয়ে দিন। আপনাকে মনে রাখতে হবে অনুষ্ঠানে আপনি না গেলেও আপনাকে হিসেবে ধরে নিমন্ত্রণকর্তার যা খরচ হবার তা খরচ হয়ে গেছে। এও মনে রাখবেন, আপনার বদলে অন্য কাউকেও নিমন্ত্রণ করা যেতো। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সকলকে বুঝার ক্ষমতা দিন।

Back to top button