নোয়াখালী, ০৬ মে – দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রথমবারের মতো বিদ্যুতের আওতায় এসেছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার দুর্গম এলাকা নিঝুম দ্বীপ। আজ শনিবার সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছানোর ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যায়। এ বিদ্যুতের মাধ্যমে ওই এলাকার আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে আশা করছেন দুর্গম এই দ্বীপের বাসিন্দারা।
পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, হাতিয়ায় স্থাপিত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দুপুর ১টার দিকে নিঝুম দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাগরের তলদেশে হাতিয়া থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ১১ কেভি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত এই এলাকার বাসিন্দারা সরকারের শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীর আওতায় আসলেন।
তিনি জানান, আপাতত সেখানে বিদ্যুতের কোনো গ্রাহক নেই। তবে বিদ্যুৎ পৌছানোর কারণে তারা বিদ্যুৎ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই নিঝুম দ্বীপে বসবাসরত অন্তত ৫ হাজার পরিবারের ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিনাজ উদ্দীন বলেন, দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের যে স্বপ্ন ছিল তা পূরণ হলো। মানুষ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পাবে। শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুর প্রসার ঘটবে। এখানকার বেশির ভাগ মানুষই জেলে। বিদ্যুৎ সংযোগের ফলে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান আরও বাড়বে। পর্যটকেরা স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবে। এতে পর্যটক খাতেরও উন্নয়ন হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে এখানকার মানুষেরা রাতে কুপি জ্বালিয়ে তাদের দৈনন্দিন কাজ করেন। কিছু বাড়িতে নিজস্ব ব্যবস্থায় সৌর বিদুৎ ব্যবহার করছেন। এর বাইরে জেনারেটরের মাধ্যমেও বাণিজ্যিকভাবে অনেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। কিন্তু তা দিয়ে শুধুমাত্র বাতি জ্বালানো যায়। প্রতিটি বাতি জ্বালাতে ২০ থেকে ২৫ টাকা ব্যয় হয় প্রতিদিন। এগুলোর ভোল্টেজও কম।
দেশব্যাপী শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে ২০২০ সালে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় গত ১৩ এপ্রিল রাত সোয়া ৯টার দিকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এবং গত বছরের নভেম্বর মাসে নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এসব দ্বীপে স্বাভাবিক লাইন নির্মাণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো সুযোগ না থাকায় সাবমেরিন ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
সূত্র: দেশ রূপান্তর
আইএ/ ০৬ মে ২০২৩