চট্টগ্রাম, ০৪ মে – সামনে ৫ সিটির নির্বাচন। আগামী ডিসেম্বরের শেষদিকে অথবা জানুয়ারি মাসের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি নানা পক্ষই সরব। সে কারণে নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো যেন বিরোধীদের দিকে হেলে না পড়ে, সে জন্য সরকার সতর্ক নজর রাখছে। বিভিন্ন ইসুতে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। এখন সরকার ও হেফাজতে ইসলাম উভয়েই নিজেদের মধ্যকার বিরোধের জায়গাগুলো নিষ্পত্তি করে স্বস্তিতে থাকতে চাইছে বলে মনে করছেন তাদের কেউ কেউ। এরই অংশ হিসেবে কারাবন্দি হেফাজত নেতাকর্মীদের বিষয়ে সরকার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, সরকারের অবস্থানের পরিবর্তনের অংশ হিসেবেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন। কথা বলেন হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার ২০ দিনের মাথায় হেফাজতে ইসলামের নেতাদের জামিনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক গতকাল পাঁচ মামলায় জামিন পাওয়াকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন বলেই হেফাজতের অনেক নেতা মনে করছেন।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন এবং আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচাতে চায় সরকার। তারই চেষ্টা হিসেবে গত ১৩ এপ্রিল হাটহাজাজারী দারুল উলুম মইনুল ইসলাম (হাটহাজারী মাদ্রাসা) সফর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তার ওই সফরের পর কোনো হেফাজত নেতাকে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা যায়নি। তবে হেফাজত নেতারা প্রকাশ্যে নির্বাচনের ইস্যুটি আনতে চাচ্ছেন না। কারণ হেফাজতে ইসলামের বেশিরভাগ নেতাই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোটের সদস্য। তাদের নিষ্ক্রিয় রাখা সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অতীতে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও হেফাজত সেই প্রতিশ্রুতি ভেঙেছে। নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে রাজপথে নেমেছে নানা ইস্যুতে।
হেফাজত সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন হেফাজতে ইসলামের দুর্গ বলে খ্যাত হাটহাজারী মাদ্রাসায় এসেছিলেন, তখন তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতে দেখা গেছে মুফতি মাওলানা জসিম উদ্দিনকে। হেফাজত নেতাদের ধারণা, মূলত হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মাওলানা মুফতি জসিম উদ্দিনই হেফাজত নেতাদের জেল থেকে বের করার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি পালন করছেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।
গতকাল বুধবার ৫ মামলায় মাওলানা মামুনুল হকের জামিনের পর হেফাজতের অনেক নেতা মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। অনেক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
তবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমির ও হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া বলেন, তিনি তো (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) আমাদের সঙ্গে ওয়াদা করে গেছেন ওলামাদের জেল থেকে মুক্ত করবেন। সেটা হয়তো সরকার করছে। তবে এসব কিছু নির্বাচন সামনে রেখে করছেন কিনা সেটা বলতে পারব না। তার দিলে (মনে) কী আছে আমরা কেমনে বলতে পারব? আমি বলতে পারব কেবল আমার দিলে যা আছে তা। নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দল করি না। দেশের অন্য ভোটারদের মতোই আমরা সাধারণ ভোটার। তা ছাড়া গত ১৩ এপ্রিল হাটহাজারী মাদ্রাসায় এলেও সেখানে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে মাওলানা ইয়াহইয়া দাবি করেন।
গতকাল মাওলানা মামুনুল হকের পাঁচ মামলায় জামিন হলেও আজিজুল হক ইসলামাবাদীর মতো কিছু নেতা কয়েক মাস আগেই জামিন পেয়েছেন। এ ছাড়া ধারাবাহিকভাবে হেফাজতে ইসলামের নেতারা জামিন পেয়ে চলেছেন। তবে এই প্রথম কোনো আলোচিত নেতা জামিন পেলেও এ নিয়ে হেফাজতের দুর্গ হাটহাজারী মাদ্রাসায় কোনো উচ্ছ্বাস নেই।
হেফাজত নেতারা বলেন, রাজনৈতিক আদর্শিক কারণে ভেতর থেকে হেফাজতে বিভাজন আছে। এটা তারই প্রতিফলন। তবে হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া অতি উৎসাহী বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়েছেন। হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারের পর তারা আরও মামলার আসামি হন। গত দুই বছরে তারা জামিন পাননি। তাদের হেফাজতের নেতা বা কর্মী বলেও সরকারের কাছে তুলে ধরা যাচ্ছে না।
গত ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিদর্শনপরবর্তী শিক্ষা ভবনের দ্বিতীয় তলায় মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলামা মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৪০ দিনব্যাপী নূরানী মোয়াল্লেম প্রশিক্ষণ কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তৃতা করেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, ইসলামের নামে জঙ্গিপনা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সরকার। কিন্তু কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে কেউ কখনো জঙ্গি হননি। তিনি বলেছিলেন, ইসলামের বিস্তারে যা যা করা দরকার, সরকার সবই করছে। এ সময় হাটহাজারী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের এমপি অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, ডিআইজি রাজনৈতিক (এসবি) শাখার এজেডএম নাফিউল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ সালাম উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ০৪ মে ২০২৩