জাতীয়

পদ্মা সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে উন্নয়ন ঘটালো, তা ঐতিহাসিক

সায়েম সাবু

ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর – ‘পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ বাড়বে বলে সমীক্ষায় যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি, তাতে আমিও বিশ্বাস রাখতে চাই। প্রবৃদ্ধির এই অগ্রযাত্রা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঘটনা এবং ঐতিহাসিক বলে বিবেচিত হবে মনে করি।’

বলছিলেন, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানো নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।

ড. ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পরপরই ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়বে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। বাস্তবায়নের পরপরই ১ শতাংশ বাড়বে, তা বলা যায়। আর কয়েক বছর পর ২ শতাংশ বা তার বেশিও প্রবৃদ্ধি বাড়তে পারে। এটি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির দৃশ্যপট বদলে যাবে।’

আরও পড়ুন : শিবচরের চরাঞ্চল ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছোট দেশ হওয়ায় কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় মানুষ সম্পৃক্ত। কিন্তু পদ্মা সেতু দেশের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে উন্নয়ন ঘটালো, তা ঐতিহাসিক। বলা হচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী যুক্ত হলো। কিন্তু না, এর ব্যাপকতা আরও বেশি। গোটা দেশ এর সঙ্গে যুক্ত হলো। এমনকি ভারতের সেভেন সিস্টার্সের জন্যও পদ্মা সেতু মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। বিদেশকেও যুক্ত করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর যাত্রা শুরু করেছিলেন, তা অবাক করার মতো। কিন্তু আজ বাস্তবায়নের মুখোমুখি। বিশ্বব্যাংক যে অজুহাতে এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তা ঠুনকো এবং ষড়যন্ত্র বলে প্রমাণিত হয়েছে। কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্রের কারণেই এমন অভিযোগ তোলা হয়। ধপে টেকেনি। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশ এখন চ্যালেঞ্জ নিতে জানে। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের উদাহরণ আগামী নেতৃত্বকে আরও সাহসী করে তুলবে।’

উল্লেখ্য, সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২ মিনিটে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১তম স্প্যানটি। এর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলো ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সেতুটি। এতে নৌপথের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। বিজয়ের মাসে সর্বশেষ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে এ যেন আরেকটি বিজয় লাভ করলো বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন : রোহিঙ্গাদের সফল প্রত্যাবাসনে দক্ষিণ কোরিয়ার সমর্থন কামনা

শুধু তাই নয়, মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বসানো স্প্যানগুলোতে রেলওয়ে স্ল্যাব ও রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজও দ্রুতগতিতে চলমান। সেতুতে প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯১৭টি রোডস্ল্যাব। এরই মধ্যে এক হাজার ২৩৯টিরও বেশি স্ল্যাব বসানো হয়েছে। রেলওয়ের জন্য প্রয়োজন হবে দুই হাজার ৯৫৯টি রেলস্ল্যাব। যার মধ্যে এ পর্যন্ত এক হাজার ৮৬০টিরও বেশি বসানো হয়েছে।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানো হয়। প্রথম স্প্যান থেকে শুরু করে ৩৯তম স্প্যান বসানো পর্যন্ত সময় লেগেছে তিন বছরের ওপর। বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

সুত্র : জাগো নিউজ
এন এ/ ১০ ডিসেম্বর

Back to top button