অযোগ্যদের পকেটে সামাজিক ভাতার ১৫০০ কোটি টাকা
ঢাকা, ০১ মে – সামাজিক ভাতাপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বয়স্ক ও ৩৩ শতাংশ বিধবা অযোগ্য সুবিধাভোগী রয়েছে। এসব সুবিধাভোগীর জন্য ব্যয় হয় প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা। এটি রোধ করা গেলে ৪৫ শতাংশ প্রকৃত যোগ্যদের ভাতার আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে অযোগ্য সুবিধাভোগীদের প্রতিরোধে কার্যকরী পারিবারিক জরিপের পাশাপাশি যোগ্য অসুবিধাভোগীদের ভাতার আওতায় আনতে বরাদ্দ বাড়ানোরও দাবি করেছে সংস্থাটি।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপযুক্ত বয়স্ক ও বিধবারা নির্দিষ্ট হারে ভাতা পান। তবে এ জন্য তাদের কার্ড করতে হয়। এই কর্মসূচির ঘাটতি নিরূপণ ও এর কার্যকারিতা বৃদ্ধির বিষয়ে সম্প্রতি একটি জরিপ করে সিপিডি। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও গবেষণা সহযোগী এএসএম শামীম আলম শিবলী।
সিপিডি বলছে, বর্তমানে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে মাসে ৫০০ টাকা ও শিক্ষা উপবৃত্তির জন্য মাসে ১৫০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অযোগ্য সুবিধাভোগীদের মধ্যে আবার প্রায় ১২ শতাংশ পেনশন, ভিজিডি বা অন্যান্য ভাতা নিচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা তাদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে, যা রোধ করে যোগ্যদের পেছনে ব্যয় করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে প্রকৃত যোগ্য এমন ৪৫ শতাংশ ব্যক্তিকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব। তাই প্রকৃত দুস্থদের চিহ্নিত করতে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় একটি কার্যকরী পারিবারিক জরিপ করা উচিত। অন্যদিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা ও যথাযথ কাগজপত্রের অভাবে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদেরও ওই সুবিধার আওতায় আনা প্রয়োজন।
সিপিডি মনে করছে, বর্তমান সুবিধাভোগীর প্রয়োজন বিবেচনায় টাকার পরিমাণ ২০০০ থেকে ২৫০০ করা হয়, তাহলে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। কর ফাঁকি ও কর অস্বচ্ছতার মাধ্যমে প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। সেটা আদায় সম্ভব হলে সেখান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এ খাতে ব্যয় করা সম্ভব।
জরিপে দেখা গেছে, বয়স্ক ভাতা কার্ড করতে ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে। ঘুষ না দিলে ভাতা পাওয়ার তালিকায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ হয় না। প্রতিটি কার্ডের জন্য গড়ে ২ হাজার ৬৫৩ টাকা ঘুষ দিতে হয়। বয়স্ক ও বিধবা ভাতা কার্ড করতে গিয়ে একজন উপকারভোগী ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়েছেন।
সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, কমিটির সদস্য অ্যারমা দত্ত এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক মো. মোক্তার হোসেন, ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বজলুল হক খোন্দকার, ঢাবির উন্নয়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নুজহাত জেবিন বক্তব্য দেন।
মেনন বলেন, দারিদ্র্য কমেছে বলে আমরা উৎফুল্ল হতে পারি। কিন্তু বর্তমানে বৈষম্য এত বেশি যে, সেখানে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। এ জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি আরও বাড়াতে হবে। অন্যদিকে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর পরিধি বাড়াতে এনজিও থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশা করে অ্যারমা দত্ত বলেন, এনজিওগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির চেয়ে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বেশি আগ্রহী। কিন্তু তারা যে মুনাফা করছে, সেখান থেকে ৫ শতাংশ এই খাতে দিতে পারে।
রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ভাতা প্রদানের দায়িত্বে যেসব মন্ত্রণালয় রয়েছে, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের দুর্বলতা রয়েছে। এ জন্য দেখা যায়, অনেকে একাধিক ভাতা পাচ্ছেন, আবার অনেকে একটি ভাতাও পান না। এ ছাড়া শহর এলাকাতেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/০১ মে ২০২৩