আফ্রিকা

সুদানে কারাগার থেকে পালিয়েছে বড়মাপের অপরাধীরা, সংঘাত বৃদ্ধির আশঙ্কা

খার্তুম, ২৭ এপ্রিল – সুদানের রাজধানী খার্তুমের কোবের কারাগারে বন্দি ছিলেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির। সম্প্রতি সেই কারাগারে হামলা চালায় আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)। এই সুযোগে কয়েক হাজার বন্দি পালিয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক রাজনীতিবিদ আহমদ হারুন। তিনি ওমর আল-বশিরের সহযোগী ছিলেন। তাঁর পালানোর খবর প্রকাশের পর বশিরের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে বুধবার বিবৃতিতে সুদানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কোবের কারাগারের স্বাস্থ্যকর্মীদের সুপারিশে আল-বশির ও অন্য ৩০ বন্দিকে আলিয়া হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। খবর আলজাজিরার

আহমদ হারুন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি ছিলেন। এই সপ্তাহের শুরুতে তিনি কারাগার থেকে পালিয়ে যান। সেখানে বশিরও সাজা ভোগ করছিলেন। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হারুন ও অন্য বন্দিরা যাঁরা বশিরের অধীনে কাজ করেছিলেন, তাঁরা কারাগার থেকে বের হয়ে গেছেন। তবে বিচার শুরু হলে আদালতে হাজির হতে হারুন প্রস্তুত বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সামরিক বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। সুদানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত কয়েকদিনে আরএসএফের বিরুদ্ধে পাঁচটি কারাগার ভাঙার অভিযোগ করেছে। এর মধ্যে কোবের কারাগারও রয়েছে। এই কারাগারে হামলার ফলে গত রোববার হাজার হাজার বন্দি পালিয়ে যায়।

পুলিশ বলেছে, অভিযানে কারাগারের দুই ওয়ার্ডারকে হত্যা করেছে আরএসএফ এবং সেখানে যাদের আটক করা হয়েছিল, তাদের ছেড়ে দিয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে আরএসএফ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এক অডিও বার্তায় হারুন দাবি করেছেন, কারারক্ষী ও সশস্ত্র বাহিনী তাঁদের পালাতে সহায়তা করেছিল। দৈনিক পত্রিকা আল-সুদানীকে হারুন বলেছেন, ‘নিরাপত্তা, পানি, খাদ্য এবং চিকিৎসার অভাবের পাশাপাশি কোবের অনেক বন্দির মৃত্যুর কারণে আমরা নিজেদের রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

গণবিক্ষোভের মুখে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ওমর আল-বশির। পরে দুর্নীতির দায়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সুদানের দারফুর অঞ্চলে গণহত্যা ও ধর্ষণে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তাঁকে অভিযুক্ত করেছেন। ওই বছরই হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনিও একই অভিযোগে অভিযুক্ত।

এদিকে বিভিন্ন কারাগার থেকে প্রায় ২৫ হাজার অপরাধী পালিয়ে যাওয়ায় অথবা মুক্তি পাওয়ায় খার্তুমের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। ক্রমবর্ধমান লড়াইয়ের মধ্যে এমনিতেই আতঙ্কগ্রস্ত তাঁরা। এর মধ্যেই বিপুলসংখ্যক অপরাধী ছাড়া পাওয়ায় ব্যাপক লুটপাট এবং নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা। সুদানে দু’পক্ষের মধ্যে ১১ দিনের লড়াইয়ে অন্তত ৪৬০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন চার হাজারের বেশি। সংঘাতের কারণে সুদান থেকে নিজ নিজ নাগরিকদের সরিয়ে নিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। সুদান থেকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের বহনকারী বেশ কয়েকটি ফ্লাইট সাইপ্রাসে অবতরণ করেছে। কয়েক ডজন দেশের ১ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি নাগরিক নৌকায় সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। তিন দফায় ৫৬১ ভারতীয়কে জেদ্দায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ছাড়া ১২০ জার্মান নাগরিক নিরাপদে দেশে ফিরেছেন।

সুদানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ভলকার পার্থেস বর্তমানে দেশটিতে অবস্থান করছেন। তিনি বলেছেন, সংঘাত বন্ধে উভয়পক্ষই গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করবে– তেমন কোনো স্পষ্ট লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। দু’পক্ষই মনে করছে, তারা সামরিক বিজয় পাবে। তাদের লড়াই মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সূত্র: সমকাল
আইএ/ ২৭ এপ্রিল ২০২৩

Back to top button