জাতীয়

ঈদযাত্রায় সড়কে প্রাণ ঝরল ১৭ জনের

ঢাকা, ২০ এপ্রিল – সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ জেলায় ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে- মুন্সীগঞ্জে ৮, দিনাজপুরে ৪, গোপালগঞ্জে ১, চট্টগ্রামে ১, মাদারীপুরে ১, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ ও সিলেটে ১ জন। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

মুন্সীগঞ্জ: ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে ২ জন ও হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও ৬ জন নিহত হন। বৃহস্পতিবার সকালে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর এলাকায় সড়কের পাশে রাখা একটি বিকল ট্রাকের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শরীয়তপুরগামী পদ্মা ট্রাভেলস বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- শরীয়তপুর জেলার সখিপুর উপজেলার লেকুরিয়া গ্রামের হাবিবের ছেলে সাইফুল (৩৫), একই জেলার সখিপুর থানার নূর মোহাম্মদের স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৬০), নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর গ্রামের শাহজাহান কাজির ছেলে আরিফ কাজী, একই থানার ঢালী কান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. হাবিব লাকুরিয়ার ছেলে নিহত সাইফুল ইসলাম লাকুরিয়া (৩৫)। এছাড়া নিহত আরিফ কাজী শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের শাহজাহান কাজীর ছেলে। বাকি ৫ জন নিহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। আহতরা হলেন, বিউটি (২৫),তাহিরা (১৫) প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চলে যান। আকাশ পাটোয়ারি (২৫), বিথী (৩০), আরিফ (২০), রাসেল (২৫), চাপা (১০), মারিয়া, সাকিরা (৩০), সুলতান (৩০), আকাশ (২০), শামীম (২০), সেলিম (৩০), বাশেদ (২৫), বিল্লাল (২৫), জান্নাত (২০), সালাউদ্দিন, সেলিম (১৯), আরিফ (২৭) এখনো চিকিৎসাধীন আছেন।

মুন্সীগঞ্জের হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ও সিবিল ডিফেন্স সূত্রে জানা যায়, সড়কের পাশে বিকল হয়ে পড়ে থাকা একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে যাত্রীবাহী বাসটি দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে। আহত-নিহতদের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, সখিপুরের নিহত একজনের সঙ্গে একটা মেয়ে ছিল। তার মাথায় আঘাত ছিল। কিন্তু পরিবারের অন্য একজন স্বজন মারা যাওয়ায় তারা চিকিৎসা না নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শরীয়তপুরগামী পদ্মা ট্রাভেলসের একটি যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে ২ জন ও হাসপাতালে নেয়ার পথে ৬ জন নিহত হন।

দিনাজপুর: দিনাজপুর চিরিরবন্দরে উচিতপুরে অটোরিকশায় বাসের ধাক্কায় একই পরিবারের দুই শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে; আহত হয়েছে আরও একজন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১০টায় দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের উচিতপুরে এই দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছেন চিরিরবন্দর থানার ওসি বজলুর রশিদ। নিহতরা হলেন- উত্তম রায় (৩৫), তার স্ত্রী পল্লবী রায় (৩২), তাদের সন্তান অপূর্ব (১০) ও উত্তমের ভাগিনা অর্ণব (৭)। আহত হয়েছেন পল্লবীর মা জতিকা রানী (৫০)। উত্তম ও পল্লবীর বাড়ি পাবতীপুরের হরিরামপুর। জতিকা রানীর বাড়ি নবাবগঞ্জের মির্জপুরে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ওসি বজলুর জানান- জতিকার রানীর পায়ের চিকিৎসার জন্য তারা নবাবগঞ্জ থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে দিনাজপুর আসছিল। পথে উচিতপুরে পৌঁছালে একই দিকে আসা একটি বাস অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই অপূর্ব ও অর্ণব মারা যায়। আহত পল্লবী, উত্তম ও জতিকা রানীকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক পল্লবী ও উত্তমকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত জতিকা রানীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওসি জানান- দুর্ঘটনার পর বাসটি নিয়ে চালক পালিয়ে গেলেও সেটি শনাক্তে কাজ চলছে। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে নেয়া হয়েছে এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এক যুবক। বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে মুকসুদপুর উপজেলার কমলাপুর-চাঁদহাট সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান মুকসুদপুর থানার এসআই মফিজুর রহমান। নিহত তুহিন মিয়া উপজেলার কমলাপুর গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে। ৩৫ বছরের তুহিন ডেসকোতে কর্মরত ছিলেন। পারিবারিক সূত্রের বরাতে এসআই মফিজুর জানান, ঈদের ছুটিতে বৃহস্পতিবার সকালেই ঢাকা থেকে তুহিন বাড়িতে আসে। পরে দই কিনতে ভাইয়ের মোটরসাইকেল নিয়ে মুকসুদপুর উপজেলা সদরের বাজারে যান। পরে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময় কমলাপুর-চাঁদহাট সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার উপর পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তুহিন নিহত হয়।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের চন্দনাইশে ট্যাংক লরির সংঘর্ষে জয়নায় আবেদীন জাবেদ (৪৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মো. শহিদুল আলম (৪৮) নামে আরেকজন আহত হয়েছেন। তাকে স্থানীয় বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দক্ষিণ হাশিমপুর বড়পাড়া কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া তাহেরিয়া নজিরিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা গেটের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জাবেদ চন্দনাইশের মধ্যম গাছবাড়িয়ার আবু তালেব মুন্সির বাড়ির ফারুক আহমেদের ছেলে। তিনি স্থানীয় প্রত্যাশী নামের একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। দোহাজারী হাইওয়ে থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) মো. ফারুক উদ্দিন বলেন, দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণ হাশিমপুর বড়পাড়া মাদরাসার সামনে ট্যাংক-লরি ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী মারা যান।

মাদারীপুর: জেলার শিবচরের বন্দরখোলা এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়কে দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৪ জন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পাচ্চর সংলগ্ন বন্দরখোলা এলাকার এক্সপ্রেসওয়ে সংযোগ সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম বাবুল মুন্সী (৫২)। তিনি শিবচরের চর কমলাপুর এলাকার কুটিয়া মুন্সীর ছেলে। আহতেরা হলেন- মামুন হাওলাদার (১৮), নিরব মুন্সী (১৬), মানিক ফকির (২০), ইমরান মুন্সী (১৮)। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিবচর হাইওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক আব্দুল্লাহ হেল বাকী জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সার্ভিস লেন দিয়ে বাবুল মুন্সী মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে উপজেলার সাড়ে বিশ রশি এলাকার মামুন হাওলাদারের মোটরসাইকেলটি ধাক্কা দেয়। এতে দুটি মোটরসাইকেলই সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই বালু ব্যবসায়ী বাবুল মুন্সী মারা যান। আহত চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী এলাকায় নছিমনের (থ্রিহুইলার) ধাক্কায় নাজির ইসলাম (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ডাক বাংলোর সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নাজির ইসলাম উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের কাশিডাঙ্গা গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন শাহ্। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি জানান, সকালে উপজেলার ডাক বাংলোর সামনে পাকা রাস্তায় নছিমনের সাথে মোটরসাইকেলটির মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর আহত হন নাজির ইসলাম। তিনি আরো জানান, আহত অবস্থায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এ সময় বালিয়াডাঙ্গী থেকে ঠাকুরগাঁও সদরে যাওয়ার পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

সিলেট: সিলেটে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১ জন নিহত। আহত হয়েছেন আরও ২ জন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মোটরসাইকেল আরোহীর নাম রাজীব (১৩)। সে জালালাবাদ থানাধীন তালুকদার পাড়ার সমছুল হকের ছেলে। আহতরা হলেন- একই এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে ফয়সল আহমদ (২৫) ও মোটরসাইকেল চালক মৃত আব্দুস শহিদের ছেলে মুহিবুর রহমান (৩৫)। এসএমপির জালালাবাদ থানার ওসি তদন্ত মো: খালেদ মামুন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত কুমারগাঁও রোড়ে ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী একজন নিহত ও আরো দুজন আহত হন। দুর্ঘটনার পর গুরুতর আহত ৩ জনকে সিলেট এমএজি ওসমানি হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজীবকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে আহত ২ জনকে জরুরি বিভাগের ভর্তি করা হয়।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ২০ এপ্রিল ২০২৩

Back to top button