জলোৎসবে শেষ হলো রাঙামাটিতে বৈসাবি উৎসব
রাঙামাটি, ১৬ এপ্রিল – মারমা জনগোষ্ঠীর সাংগ্রাই জলোৎসবের মাধ্যমে রাঙামাটিতে শেষ হয়েছে বৈসাবি উৎসব। শেষদিন জলকেলিতে মেতে উঠে মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। পুরোনো বছরের সকল দুঃখ, কষ্ট, বেদনাকে ভুলে গিয়ে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে একে অন্যকে পানি ছিটিয়ে শুদ্ধ করে নিলেন মারমা তরুণ-তরুণীরা।
রোববার (১৬ এপ্রিল) সকালে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) কেন্দ্রীয় কমিটির আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী এই জলকেলি বা পানি উৎসবে মারমা জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠে।
‘পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সংস্কৃতি বিকাশে এগিয়ে আসুন’ এই স্লোগানে জলোৎসবে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। এসময় গেস্ট অব অনার ছিলেন ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য বেগম ওয়াসাকা আয়শা খান।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, কাপ্তাই জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নুর উল্লাহ জুয়েল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জলোৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক নিউচিং মারমা ও মাসস এর সাধারণ সম্পাদক মংউচিং মারমা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জলোৎসবের এই অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পর্যটকরা হাজির হন।
আলোচনা সভায় দীপংকর তালুকদার বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে বলেই সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়, সব জনগোষ্ঠীর মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে নিজ নিজ ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান উদযাপন করতে পারছেন।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য সরকারের অনেক কিছুই করার আছে, আর সেই অনেক কিছু কাজ শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রী। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং পাহাড়ের জনগণের জন্য খুবই আন্তরিক। নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি রক্ষা ও বিকাশে সরকারের নানান পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হচ্ছে।
মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, সংস্কৃতি ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষ্যে প্রতিবছর এই আয়োজন। সাংগ্রাই উৎসবের মাধ্যমে মারমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়। যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে পারে।
আলোচনা সভা শেষে অতিথিগণ ঘণ্টা বাজিয়ে জলকেলি উদ্বোধন করেন। এরপর সকলে একে-অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে সকল অবসাদ দূর করে দেয়। জলকেলি অনুষ্ঠানের পর মারমা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী গান ও নাচ পরিবেশন করা হয়। বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে আগত কয়েক হাজার মারমা নারী-পুরুষ একে-অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে উৎসব পালন করতে থাকে।
সূত্র: দেশ রূপান্তর
আইএ/ ১৬ এপ্রিল ২০২৩