টাঙ্গাইল

বিব্রত টাঙ্গাইল জেলা আ.লীগ, অপেক্ষা ডিএনএ টেস্টের

টাঙ্গাইল, ১৪ এপ্রিল – টক অব দ্য টাঙ্গাইল এখন শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা। এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হওয়ার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। ৫ এপ্রিল রাতে সদর থানায় মামলা করেন ওই কিশোরী। বড় মনি টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্র্রিজের সহ-সভাপতি। বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিব্রত জেলা আওয়ামী লীগ। দায়িত্বশীল নেতাদের কেউই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন না।

এদিকে অভিযুক্ত বড় মনির আত্মসমর্পণের ইচ্ছে নেই। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, পুরো ঘটনাই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তিনি ভিকটিম কিশোরীর ডিএনএ টেস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। ওই টেস্টেই প্রমাণ হয়ে যাবে, তিনি প্রকৃতপক্ষে দোষী কিনা। এ অবস্থায় এলাকায় বড় মনির পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বিপক্ষে ঝাড়ু মিছিল করে নারীরা বড় মনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। আর বড় মনির পক্ষের লোকজন বিক্ষোভ মিছিল করে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

এজাহারে বলা হয়, ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় নিজ বাড়ির পাশে একটি ভবনে বড় মনি কিশোরীকে ডেকে নেন। এরপর তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও আপত্তিকর ছবি তুলে রাখেন। আপত্তিকর ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে পরে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। এতে কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। ২৯ মার্চ রাতে আদালত পাড়ার একটি বাড়িতে তুলে নিয়ে তাকে আবারও ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনার পর বড় মনির স্ত্রী নিগার আফতাব তাকে মারধর করেন।

ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, আমি তো আসামি না। আসামি না হয়েও আমাকে আসামির মতন লুকিয়ে বাঁচতে হচ্ছে। যারা আসামি তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি চাই ন্যায়বিচার। ৭ এপ্রিল বেলা ১১টায় টাঙ্গাইল সচেতন নারী সমাজের ব্যানারে টাঙ্গাইলে বড় মনিকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। শহরের ভাসানী হল থেকে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এতে পাঁচ শতাধিক নারী অংশগ্রহণ করেন। ৮ এপ্রিল ভূঞাপুর উপজেলা সদরে দুই শতাধিক নারী ঝাড়ুমিছিল করেন। মামলার পর টাঙ্গাইল শহর এবং ভূঞাপুর গোপালপুরে সংসদ-সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির বিরোধী পক্ষ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এদিকে ৯ এপ্রিল বেলা ১১টায় সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে টাঙ্গাইলে বড় মনির বিরুদ্ধে মামলা প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এতে পৌরসভার কাউন্সিলর আমিনুর রহমান ও কামরুল হাসান বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, এটি তো আমার মালিক সমিতির কর্মকাণ্ড না, এটি তার ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনের গল্প। পারিবারিক বা সামাজিক জীবনে কেউ যদি কোনো অপরাধ করে, অপরাধের দায় দায়িত্ব তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে পড়বে। আমাদের পরিবহনের কোনো কর্মকাণ্ডে কেউ কোনো বিপদে পড়লে পরিবহন সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা তাকে সেভ করার আপ্রাণ চেষ্টা করতাম। আমি বলব, কোনো পক্ষ যাতে ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়। ন্যায়সঙ্গত বিচার এবং সাংবিধানিক অধিকার এদেশের সকল মানুষের আছে। দেশের যে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট, এ অবস্থায় একে অপরের পক্ষে কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্যে আমরা নেই। ঘটনা পারিবারিক এবং এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। পরিবহনের কোনো ঘটনা হলে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যেতাম, মানববন্ধন করতাম, সংবাদ সম্মেলন করতাম।

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীকে বড় মনির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে এ বিষয়ে তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরে বক্তব্য দেব।

ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মাসুদুল হক বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি অবগত আছেন। ওনারা যেভাবে বলবেন, আমরা সেভাবে কাজ করব। বড় মনি যে জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছেন, সে ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারছি না, সইতেও পারছি না।

গত ৯ এপ্রিল সকালে ‘সচেতন নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে বড় মনির পক্ষে মিছিল বের করা হয়। এতে তার অনুসারীরা অংশ নেয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে পথসভা করা হয়।

এ বিষয়ে ধর্ষণ মামলার আসামি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি বলেন, একটি মহল পরিকল্পিত ও রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে এসব কাজ করছে। আমি শুধু ওপেনে আসতে পারছি না বিধায় নানান লোকে নানান কথা বলছে।

এ বিষয়ে গোলাম কিবরিয়া বড় মনির ছোট ভাই টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুরে) সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিকে বারবার ফোন দিলেও উনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ দিলেও উনি সাড়া দেননি।

টাঙ্গাইল সদর থানার আফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবু সালাম মিয়া বলেন, বাদিনীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে আমরা মামলা দায়ের করা হয়েছে। লিখিত মামলার তদন্তভার ইনস্পেকটর (তদন্ত) হাবিবুর রহমানকে দেওয়া হয়। পরে এই মামলায় ভিকটিমের মেডিক্যালের পরীক্ষার বিষয় আছে, বিজ্ঞ আদালতের বিষয় আছে। সে ক্ষেত্রে আমরা পরের দিন মেডিক্যাল টেস্টের জন্য পাঠাই। মেডিক্যাল টেস্ট শেষে আমরা ভিকটিমকে আদালতে প্রেরণ করি। সেখানে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চলমান, আসামি গ্রেপ্তার বিষয়ে আমাদের চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, মামলার তদন্তের পাশাপাশি ও আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/১৪ এপ্রিল ২০২৩

Back to top button