ইউরোপ

পরমাণু বিদ্যুৎ থেকে চিরতরে বিদায় নিচ্ছে জার্মানি

বার্লিন, ১৩ এপ্রিল – জার্মানির শেষ তিনটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে আগামী শনিবার (১৫ এপ্রিল)। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। তবে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরো পদক্ষেপের জন্য চাপ বাড়ছে।

১৯৬৭ সালে জার্মানির প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কাজ শুরু করেছিল। আর দুদিনের মধ্যে শেষ তিনটি পরমাণু কেন্দ্র বন্ধ করা হবে। এর মাধ্যমে জ্বালানির উৎস হিসেবে প্রচলিত পরমাণু বিদ্যুৎ চিরকালের জন্য ত্যাগ করছে জার্মানি। ছয় মাস আগেই সেই লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হলেও ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে অনিশ্চয়তার কারণে সময়সীমা কিছুকাল বাড়ানো হয়।

পরমাণু বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে জার্মানির জোট সরকারের মধ্যেও দ্বন্দ্ব পুরোপুরি কাটেনি। পরিবেশবাদী সবুজ দল গত বছরই শেষ তিনটি কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও উদারপন্থী এফডিপি দল জ্বালানি সংকট এড়াতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেগুলো চালু রাখার পক্ষে বলেছিল। শেষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস নিজের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

এফডিপি সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করলেও চ্যান্সেলর শলৎস নিজের সিদ্ধান্তে এখনো অটল রয়েছেন। এমনকি কেন্দ্রগুলো অকেজো করার বদলে রিজার্ভ হিসেবে রেখে দেওয়ার প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।

সবুজ দলের নেতৃত্বে পরিবেশ মন্ত্রণালয় মনে করিয়ে দিয়েছে, জার্মানির শেষ তিনটি পরমাণু কেন্দ্র রিজার্ভ হিসেবে রাখা বেআইনি পদক্ষেপ হবে। তাছা়ড়া সেগুলো অকেজো করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যাবার পর জার্মানিতে জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সরকারের তৎপরতায় দ্রুত বিকল্প উৎসের ব্যবস্থা হওয়ায় ব্ল্যাকআউট বা অন্য কোনো অঘটন ঘটেনি। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কাও মোটামুটি সামলে নেওয়া গেছে। ফলে পরমাণু বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতার আর কোনো কারণ দেখছেন না বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ।

জার্মানির জ্বালানি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো পরমাণু বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ার পর ঘাটতি পূরণ করতে আরো দ্রুত গতিতে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সংগঠনের মতে, দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতে এমন কেন্দ্র গ্যাসের বদলে হাইড্রোজেন দিয়েও চালানো সম্ভব হতে পারে। তবে এমন কেন্দ্রে বিনিয়োগের জন্য সরকার কোনো উৎসাহ না দেওয়ায় সেই উদ্যোগে গতি আসছে না।

এদিকে শনিবার বিদ্যুতের গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরেও তিনটি পরমাণু কেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হবে না। অনেক দিন ধরে সেই কাজের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপদে সেই প্রক্রিয়া চালাতে ধীরে ধীরে চুল্লিগুলো ঠাণ্ডা করতে হবে। পানি ভরা চুল্লির মধ্য থেকে ফুয়েল এলিমেন্ট বের করে নিতে হবে। কেন্দ্র ভেঙে ফেলার বিভিন্ন পর্যায়ের জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। কেন্দ্রগুলো পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হতে বেশ কয়েক বছর, এমনকি কয়েক দশকও সময় লাগতে পারে।

জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রে বিপর্যয়ের পর জার্মানির সরকার ২০১১ সালে পরমাণু বিদ্যুৎ পুরোপুরি বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে ২০০২ সালেও তৎকালীন সরকার নীতিগতভাবে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর নতুন করে কোনো কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

সূত্র: দেশ রূপান্তর
আইএ/ ১৩ এপ্রিল ২০২৩

Back to top button