প্রকৃত মুমিনরাই সফল
আমাদের সমাজে যে যত বেশি দুনিয়া অর্জন করে তাকে তত বেশি সফল মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ বাস্তবতা এর উল্টো। দুনিয়ার সফলতাই চূড়ান্ত সফলতা নয়। দুনিয়া শুধুই মরীচিকা, স্বার্থের ভঙ্গুর ঘুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা তাসের ঘর, যা মৃদু হাওয়াতেই ভেঙে পড়ে। দুনিয়া শুধু মানুষকে ধোঁকা দেয়, যারা এর লালসায় গা ভাষায় তাদের পরকাল ধ্বংস করে দেয়।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)
কবি বলেছিলেন, ‘ইস দুনিয়া কি দোস্তি মিছলে কাগজ ফুলকি, দেখনে মে খোশনুমা হেয়, বু মগর কুছ ভি নেহি।’ অর্থ : এই দুনিয়ার বন্ধুত্ব কাগুজে ফুলের মতো, দেখতেই সুন্দর কিন্তু কোনো ঘ্রাণ নেই।
দুনিয়া আসলেই কাগুজে ফুলের মতো, এর কোনো ঘ্রাণ নেই, এই ফুলে মধু নেই। তাই এই ফুলের মোহে পড়ে আখিরাত ধ্বংস না করে তাকওয়া অবলম্বন করা উচিত। কারণ যারা দুনিয়ার এই পরীক্ষাগারে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হতে পারবে তাদের জন্যই রয়েছে আখিরাতের মুক্তি, পরকালীন শান্তি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর দুনিয়ার জীবন খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছু না। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাস উত্তম। অতএব তোমরা কি বুঝবে না?’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩২)
অথচ আফসোসের বিষয় হলো, আমরা দুনিয়ার মরীচিকার পেছনে এতটা হন্যে হয়ে ছুটি যে এর পেছনে ছুটতে ছুটতে একসময় আমরা চোরাবালিতে হারিয়ে যাই। নিজেদের পরিচয় ও দায়িত্ব ভুলে যাই। নিজেদের আসল ঠিকানা জান্নাতের কথাও ভুলে যাই। শয়তান আমাদের এতটা প্রভাবিত করে যে আমরা সীমা লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শয়তানকেও পেছনে ফেলে দিই। নিজেদের সামান্য স্বার্থে আল্লাহর হুকুমকে কটাক্ষ করে বসি। (নাউজুবিল্লাহ)
অথচ যে দুনিয়া অর্জনের জন্য আমরা এতটা নিচে নামছি, তা আখিরাতের তুলনায় কিছুই না। দুনিয়ার ছোট ছোট স্বার্থের জন্য যারা আল্লাহর হুকুমকে অস্বীকার করে বসে, তাদের চেয়ে বড় দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কী হলো, যখন তোমাদের বলা হয় আল্লাহর রাস্তায় (সংগ্রামে) বের হও, তখন তোমরা জমিনের প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়ো? তবে কি তোমরা আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখিরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৮)
তাই আমরা যদি সত্যিই সফল হতে চাই, আমাদের উচিত সব সময় আল্লাহর হুকুমকে প্রাধান্য দেওয়া, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসাকে সব কিছুর ওপর প্রাধান্য দেওয়া। আল্লাহ ও রাসুলের জন্য দুনিয়ার সব কিছু উৎসর্গ করার মনোভাব তৈরি করা। কারণ যারা সব কিছুর ওপর আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে প্রাধান্য দিতে পারবে, মহান আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট হবেন এবং তাদেরই সফল করবেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি পাবে না আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী এমন কোনো সম্প্রদায়, যারা ভালোবাসে আল্লাহ ও (পাশাপাশি) তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণকে (ভালোবাসে), হোক না এই বিরুদ্ধাচরণকারী তাদের পিতা, অথবা পুত্র, অথবা ভাই, অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। এদের অন্তরে আল্লাহ সুদৃঢ় করেছেন ঈমান এবং তাদের শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রুহ দ্বারা। তিনি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; সেথায় তারা স্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এরাই আল্লাহর দল। জেনে রেখো, আল্লাহর দলই সফলকাম।’ (সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ২২)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি তার সন্তান-সন্ততি, মা-বাবা এবং সকল লোক থেকে তার কাছে অধিক প্রিয় হব।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৫০১৩)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রকৃত ঈমানদার হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আডি/ ০৮ ডিসেম্বর