অপরাধ

যেভাবে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়ান বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ফাতেমা তাসনীম

ঢাকা, ০৮ এপ্রিল – আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের ঘটনার মূল সমন্বয়ক পলাতক জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম শিখা এবং তার আশ্রয়দাতা হুসনা আক্তারের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী শুনানি শেষে এ রিমান্ডের আদেশ দেন। এর আগে, গত ৭ এপ্রিল রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কোতোয়ালি থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এ মামলায় শুনাানিকালে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন।

এদিকে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, ফাতেমা তাসনীম ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। একপর্যায়ে তার ভাই মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সাইমনের মাধ্যমে তিনি আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হন। পরবর্তীতে সাইমনের মাধ্যমে আবু সিদ্দিক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

বিয়ের পর গভীরভাবে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ফাতেমা তাসনীম পলাতক আসামিদের এবং হামলাকারী সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন।

সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য ছিল। সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে ফাতেমা তাসনীম আরো গভীরভাবে সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায়, দীপন ও নীলাদ্রি নিলয় হত্যা মামলায় ২০১৭ সালে আসামি হিসেবে সোহেল গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর থেকে বিভিন্ন এনস্ক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত ফাতেমা তাসনীম কারাবন্দি সোহেলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে সংগঠনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ শুরু করে।

জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনার সম্পর্কে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা গত বছর ২০ নভেম্বর আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। ফাতেমা তাসনীম এই কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।

মুক্তমনা, ব্লগার, একটিভিস্ট হত্যায় মৃত্যুদপ্রাপ্ত আসামিকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার সিজেএম আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। পরিকল্পনার সমন্বয়ক হিসেবে ফাতেমা তাসনীমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি বিভিন্ন এনস্ক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পুরো প্রক্রিয়া সমন্বয়ক করতে থাকেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভুয়া এনআইডি কার্ড ও মোবাইলের সিম সংগ্রহ করে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা ঘটনার দিন ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেল কেনেন।

গত বছরের ১ নভেম্বর ফাতেমা তাসনীম ও আনসার আল ইসলামের অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেকি করেন। ঘটনার দিন ভোরে ফাতেমা তাসনীম বাবাসহ ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। সিএমএম কোর্ট এলাকায় এসে তিনি কৌশলে বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া মশিউর রহমান ওরফে আয়মানসহ আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পুরো বিষয়টি তদারকি করতে থাকে।

পরবর্তীতে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে ডেমরা থানা এলাকায় আনসার আল ইসলামের সদস্য হুসনা আক্তারের বাসায় গিয়ে অবস্থান করে। ফাতেমা তাসনীম দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি সোহেলসহ আরেক আসামি শামীমকে ছিনতাই করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে মর্মে প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয় এবং অপর আসামি হুসনা আক্তার জ্ঞাতসারে জঙ্গি শিখাকে আশ্রয় দিয়েছেন।

এ মামলায় এর আগে জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের বোন তানজিলা আফরোজ জাহান ওরফে শিরিন ও আবু সিদ্দিক সোহেলের ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক তালুকদার কারাগারে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত বছর ২০ নভেম্বর বেলা সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় রাতে ২০ জঙ্গিকে আসামি করে মামলা করেন পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ।

সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/০৮ এপ্রিল ২০২৩

Back to top button