পুষ্টি

নিয়মিত জাম খেলে পাওয়া যায় নানা উপকার

ফলটি নাম জাম। আকারে ছোট। কিন্তু গুণ এর ধারে কাছে কেউ আসতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ শুধু শরীরকে চাঙ্গা রাখতে নয়। এই শীতের মৌসুমে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও জামার কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। আসলে এই ফলটির ভিতরে মজুত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পুষ্টিকর উপাদান। যেমন ধরুন ভিটামিন সি, কে, বি৬, ফলেট, পটাশিয়াম, কপার, সোডিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ। সেই সঙ্গে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীর এবং ত্বককে চাঙ্গা রাখার পাশাপাশি ব্রেন পাওয়ার বাড়াতে এবং ক্যান্সারের মতো রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে ভাববেন না এখানেই শেষ। এই সুস্বাদু ফলটিকে রোজের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করলে আরও নানা উপকার পাওয়া যায়। যেমন ধরুন-

হাড় শক্তপোক্ত হয়

হাড়কে শক্তপোক্ত রাখতে জামের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই ফলটির ভিতরে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক এবং ভিটামিনকে নানাভাবে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। ফলে নানাবিধ হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না বললেই চলে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এক বাটি করে জাম খাওয়া শুরু করলে শরীরে এমন কিছু উপাদানের প্রবেশ ঘটে, যার প্রভাবে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আর কোনও আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে।

চুলের সৌন্দর্য বাড়ে

চুলের ভিতরে জমতে থাকা মৃত কোষেদের সরিয়ে ফেলে চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে এই ফলটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে জামের ভিতরে উপস্থিত ভিটামিন বি এবং প্রঅ্যান্থোসায়ানিডিন্স এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন প্রশ্ন হল চুলের পরিচর্যায় কীভাবে কাজে লাগাতে হবে জামকে? এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো জাম নিয়ে তার একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তাতে অল্প পরিমাণ অলিভ অয়েল মিশিয়ে সেই মিশ্রনটি ভাল করে চুলে লাগাতে হবে, বিশেষত স্কাল্পে। এরপর ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুলটা।

হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়

গত এক দশকের পরিসংখ্যানের দিকে নজর ফেরালে জানতে পারবেন আমাদের দেশে কিভাবে কম বয়সিদের মধ্যে হার্টের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জাম খাওয়ার প্রয়োজন যে আরও বেড়েছে এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আসলে এই ফলটিতে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান একদিকে যেমন ব্লাড প্রেসারকে স্বাভাবিক রাখে, তেমনি রক্তে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমায়। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, সার্বিকভাবে হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও জাম বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই হার্টকে যদি দীর্ঘদিন চাঙ্গা রাখতে হয়, তাহলে ভুলেও জমের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করলে চলবে না কিন্তু!

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাহিদা মিটিয়ে শরীরকে চাঙ্গা রাখে

সারা দিন ধরে নানাভাবে নানা ক্ষতিকর টক্সিন আমাদের শরীরে প্রবেশ করে থাকে। আর এই বিষেরা যে কোনওভাবেই আমাদের উপকারে লাগে না, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ঠিক ঠিক সময়ে এই সব টক্সিক উপাদানদের যদি শরীর থেকে বের করে দেওয়া না যায়, তাহলে একদিকে দেহের ভিতরে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এই কারণেই তো নিয়মিত জাম খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। কারণ এই ফলটির ভিতরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, টক্সিক উপাদানদের খুঁজে খুঁজে শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে জটিল কোনও রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, চীনা গবেষকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, জামের ভিতরে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফেনলস, প্লেবোনয়েড এবং অ্যান্থোসায়ানিনের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা নানাভাবে শরীরের দেখভালে কাজে লেগে থাকে।

ব্রণের প্রকোপ কমে

এই ফলটির ভিতরে উপস্থিত স্যালিসাইলেট নামক উপাদান, ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করার পর একদিকে যেমন ব্রণর প্রকোপ কমায়, তেমনি মৃত কোষেদের স্তর সরিয়ে ফেলে, সেই সঙ্গে ত্বকের ছিদ্রগুলোকে খুলে দেয়। ফলে ত্বক ফর্সা হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো জাম নিয়ে তার পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তাতে অল্প পরিমাণে লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রনটি মুখে লাগাতে হবে। তারপর ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা। এইভাবে সপ্তাহে ২-৩ বার ত্বকের পরিচর্যা করলে দেখবেন দারুন উপকার মিলতে শুরু করেছে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে

আমাদের পাঠক বন্ধুদের মধ্যে যারা নতুন বছরে ওজন কমাতে বেজায় বদ্ধপরিকর, তারা আজ থেকেই এক বাটি করে জাম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন অতিরিক্ত ওজন কমতে একেবারেই সময় লাগবে না। কারণ এই ফলটির ভিতরে রয়েছে প্রায় ৩ দশমিক ৬ গ্রাম ফাইবার, যা অনেকক্ষণ ধরে পেটকে ভরিয়ে রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। আর খাবার কম খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি প্রবেশের আশঙ্কাও হ্রাস পায়। ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। প্রসঙ্গত, জামের ভিতরে ক্যালরির মাত্রা একেবারে কম থাকে। তাই তো এই ফলটি খেলে এমনিতেও ওজন বৃদ্ধির কোনও সম্ভাবনা থাকে না।

দেহের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমে

দেহের ভিতরে সৃষ্টি হওয়া প্রদাহ নানাবিধ রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু এই প্রদাহই যদি মাত্রা ছাড়িয়ে হয়ে যায়, তাহলেই কিন্তু বিপদ! কারণ একাধিক গবেষণাতে এ কথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে ক্রনিক ইনফ্লেমেশনের কারণে শরীরে একে একে নানা রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। যেমন ধরুন, ক্যাননার, হার্টের রোগ, ডিপ্রেশন প্রভৃতি। তাহলে এখন প্রশ্ন হল ইনফ্লেমেশনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় কীভাবে? এক্ষেত্রে জামের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতালে দারুন উপকার পেতে পারেন কিন্তু! কারণ এই ফলটি নিয়মিত খেলে শরীরে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগই পায় না।

অসময়ে চুল পেকে যাওয়ার আশঙ্কা কমে

বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, শরীরে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি দেখা গেলে চুল সাদা হয়ে যেতে শুরু করে। তাই মাথা ভর্তি কুচকুচে কালো চুলকে রক্ষা করতে খেয়াল রাখা উচিত দেহের ভিতরে যাতে এই ভিটামিনটির ঘাটতি না হয়। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে জাম। আসলে এই ফলটির ভিতরে প্রচুর মাত্রায় মজুত রয়েছে ভিটামিন বি১২, যা দেহের ভিতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে

বদহজম আর গ্যাস-অম্বল ঘারে চেপে বসেছে? তাহলে আজ থেকেই জাম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে। কারণ এমনটা করলে শরীরের ভিতরে ফাইবারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি কনস্টিপেশনের মতো রোগের চিকিৎসাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে চোখে পরার মতো

জীবনে সফল হতে গেলে বুদ্ধির ধার বাড়ানো ছাড়া আর কোনও বিকল্প আছে বলে তো মনে হয় না। এই কারণেও কিন্তু প্রতিদিন জাম খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু জাম খাওয়ার সঙ্গে বুদ্ধি বাড়া-কমার কী সম্পর্ক? ২০১৬ সালে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র অনুসারে জামের ভিতরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, টক্সিক উপাদানের হাত থেকে ব্রেনকে রক্ষা করে। ফলে বয়স বাড়লেও তার ছাপ পরে না মস্তিষ্কের উপর। সেই সঙ্গে কগনেটিভ পাওয়ার বেড়ে যাওয়ার কারণে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিও বাড়তে শুরু করে। এই কারণেই তো জামকে চিকিৎসকেরা ‘ব্রেন ফুড’ নামে ডেকে থাকেন।

স্কিনের ভিতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করে

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জাম খাওয়া শুরু করলে অথবা জামের সাহায্যে বানানো পেস্ট মুখে লাগালে ত্বকের ভিতরে ফাইবার, ভিটামিন বি-এর মাত্রা বাড়তে শুরু করে। যার প্রভাবে নানাবিধ ত্বকের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে ব্রণের প্রকোপ কমতে শুরু করে।

আডি/ ০৭ ডিসেম্বর

Back to top button