জাতীয়

প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে পোশাক খাত সংকটেও আশার জোগান

আব্দুল্লাহ কাফি

ঢাকা, ০৮ এপ্রিল – বিশ্বব্যাপী নেতিবাচক খবরের মধ্যে আশার খবর দিয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাত। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-মার্চ) এই খাতে ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গেল অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে এ বছর রপ্তানি হয়েছে ৩৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হালনাগাদ তথ্য থেকে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

চলতি অর্থবছরে মার্চে ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারের। তবে এ খাত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারেনি। মাইনাসে রয়েছে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। দুই খাত মিলে মোট পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার। দুই খাত মিলেও মাইনাসে রয়েছে ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। শুধু মার্চ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে।

রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হলেও কিছুটা অস্বস্তিরও খবর রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি অর্ডার আসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব অঞ্চলের ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়বে, ফলে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস আইটেমের চাহিদা কমাবে। ইউরো জোনের মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারিতে ৮.৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের মাসে ছিল ৮.৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যায় ফ্রান্স এবং স্পেনের মূল্যস্ফীতি। যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা মূল্যসূচক গত মাসে বেড়েছে ০.৪ শতাংশ। দেশটির বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, করোনার সময় বকেয়া পাওনা ফেরত পাওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। কাঁচামাল, পরিবহন খরচ ও ইউটিলিটি খরচ বাড়ার কারণে ক্রেতারা বেশি দাম দিচ্ছেন। রপ্তানিকারকরা আশা করছেন, জুলাইয়ে আবার অর্ডার বাড়বে। কারণ আমদানিকারকরা মজুতে থাকা পোশাক বিক্রি শেষ করবেন এবং পরবর্তী শীত মৌসুমের রপ্তানি শুরু হবে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারী ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, মার্চে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা থেকে কিছুটা পিছিয়েছি। এটা আমরা আগে থেকেই বলে আসছিলাম যে, মার্চে প্রবৃদ্ধি কমতে পারে।

বিজিএমইএর এই পরিচালক বলেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণেই আমাদের সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের পরিমাণ বেড়েছে। আমরা যে লাভ করেই রপ্তানি চার বিলিয়ন বাড়িয়েছি, তা নয়। আমাদের ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতি- সব কিছু মিলেই এই রপ্তানি হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই বিষয়ে সতর্ক থেকে পরিস্থিতি উত্তরণে এগিয়ে যেতে হবে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমবে। তবে আগামী বছর থেকে আবার ঘুরে দাঁড়াবে শীর্ষ পণ্য রপ্তানি আয়ের এই খাত। বিনিয়োগ, ব্যাংকিং ও ব্রোকারেজ হাউস পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাল বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকে এই খাতে গড়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে। তাতে ২০২৬ সালে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। ২০২২ সালে এই খাতের রপ্তানি ছিল ৪ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার।

জানুয়ারিতে প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদনে ক্যাল বাংলাদেশের পূর্বাভাস- চলতি বছর তৈরি পোশাক রপ্তানি দশমিক ৯ শতাংশ কমবে। তবে আগামী বছর ৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। পরের দুবছর যথাক্রমে ৭ দশমিক ২ এবং ৬ দশমিক ৭ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হবে। আগামী বছর থেকে পোশাকের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে তিনটি বিষয় প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। সেগুলো হচ্ছে কৃত্রিম তন্তুর পোশাক উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, চীন থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তর এবং বাজার ও পণ্য বহুমুখীকরণ।

পোশাক শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, বাণিজ্য যুদ্ধ, জিরো কোভিডসহ নানা কারণে চীনের ওপর অতি নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে চীনে তৈরি পোশাকের বাজার হিস্যা হারিয়েছে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। তার বিপরীতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের বাজার হিস্যা বেড়েছে যথাক্রমে ২ দশমিক ২ এবং ৪ দশমিক ২ শতাংশ। একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চীনের তৈরি পোশাকের গড় রপ্তানি ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। আর বাংলাদেশের বেড়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

ক্যাল বাংলাদেশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে পোশাক রপ্তানিও কমবে। অন্যদিকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ বাড়বে। যদিও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও তুলার দাম হ্রাস পাওয়ায় সেই চাপ কমানোর সুযোগ পাবেন।

সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/০৮ এপ্রিল ২০২৩

Back to top button