ইউরোপ

নেটোর ৩১তম সদস্য হচ্ছে ফিনল্যান্ড

হেলসিঙ্কি, ৪ এপ্রিল – ফিনল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোতে যোগ দিতে যাচ্ছে।

দেশটি মঙ্গলবার ৩১তম সদস্য হিসেবে নেটো জোটভুক্ত হচ্ছে বলে জানায় বিবিসি।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরু করলে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া ফিনল্যান্ড ওই বছর মে মাসেই নেটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

ফিনল্যান্ডের সঙ্গে নর্ডিক আরেক দেশ সুইডেনও নেটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু নেটোর সদস্যরাষ্ট্র তুরস্কের আপত্তিতে এখনও সুইডেনের ভাগ্যের সুতা ছেঁড়েনি।

শুরুতে অবশ্য আঙ্কারা সুইডেন ও ফিনল্যান্ড উভয় দেশকেই ‘সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা দেশ’ বলে বর্ণনা করে নেটোতে তাদের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। ফলে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের আবদন ঝুলে থাকে।

নেটোর নিয়মানুযায়ী, নতুন কোনও দেশকে সদস্য করতে হলে জোটভুক্ত সব দেশের সমর্থন লাগবে। তুরস্কের আগে নেটোর বাকি ২৯ সদস্য দেশ ফিনল্যান্ডের নেটো সদস্যপদ পাওয়াতে অনুমোদন দিয়ে রেখেছিল।

আঙ্কারার আপত্তি তুলে নিতে হেলসিঙ্কি ও স্টকহোম শুরু থেকেই নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিল।

গত বছর জুলাই মাসে মাদ্রিদে নেটোর সম্মেলনে তুরস্কের সঙ্গে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের এ নিয়ে আলোচনা হয় এবং দুই দেশ ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আরো ব্যবস্থা গ্রহণের’ প্রতিশ্রুতি দিলে বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে তুরস্ক তাদের আপত্তি তুলে নেয়ার কথা জানায় এবং তিন দেশ মিলে একটি চুক্তি সই করে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান গত মাসের শুরুর দিকে ফিনল্যান্ডের নেটোভুক্তির ব্যাপারে ‘সবুজ সংকেত’ দেন। কিন্তু সুইডেনের ব্যাপারে এখনও তার প্রবল রয়েছে।

সুইডেন কুর্দি ‘জঙ্গিদের’ আশ্রয় দিয়ে তাদেরকে স্টকহোমের রাস্তায় কর্মসূচি পালনের সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তুরস্কের প্রেসিডেন্টের।

এরদোয়ানের ‘সবুজ সংকেত’ পাওয়ার পর গত মাসেই তুরস্কের পার্লামেন্ট ফিনল্যান্ডের নেটো অন্তর্ভুক্তিতে অনুমোদন দেয়।

মঙ্গলবার ফিনল্যান্ডের আনুষ্ঠানিকভাবে নেটোতে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে ব্রাসেলসে জোটের মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘‘আমরা প্রথমবারের মত নেটোর সদরদপ্তরে ফিনিস পতাকা ওড়াবো। ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তা, নর্ডিক নিরাপত্তা এবং সামগ্রিকভাবে নেটোর জন্য এটি একটি দারুণ ভালো দিন হবে।”

এর ফলে সুইডেনও নিরাপদ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাশিয়ার সঙ্গে এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত আছে ফিনল্যান্ডের। কামানের সংখ্যার দিক দিয়ে দেশটি পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্রভাণ্ডারের অধিকারী।

রাশিয়া ইউক্রেইনে অভিযান চালানোর পর ফিনল্যান্ড তাদের ‘নিরপেক্ষতা’ নীতিতে বদল এনে পশ্চিমাদের সঙ্গে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নেয়।

একই কারণে সুইডেনও ‘নিরপেক্ষতার’ নীতি থেকে সরে যেতে বাধ্য হয় এবং প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডের মতো নেটোতে যুক্ত হওয়ার আবেদন জানায়। যদিও রাশিয়ার সঙ্গে সুইডেনের সীমান্ত নেই।

নেটোর অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন নীতি হচ্ছে, সম্মিলিত প্রতিরক্ষা নীতি। এর অর্থ হচ্ছে, জোটের কোনো দেশের ওপর হামলা, জোটের সব দেশের ওপর হামলা বলেই বিবেচিত হবে।

ফিনল্যান্ডের এই নেটোভুক্তিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য বড় কৌশলগত পরাজয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

নেটোতে থাকলে রুশ হামলার সম্ভাবনা কম, এই ধারণা থেকেই ফিনল্যান্ড জোটভুক্ত হওয়ার পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অনুমান বিবিসি-র।

এদিকে, নেটো ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনে কোনও সেনা মোতায়েন করলে কিংবা সামরিক কোনও অবকাঠামো নির্মাণ করলে রাশিয়া এর জবাব দেবে বলে আগেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রেখেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

তখন তিনি বলেছিলেন, “ইউক্রেইনের সঙ্গে আমাদের যে সমস্যা আছে, তা ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের সঙ্গে নেই। তারা নেটোতে যোগ দিতে চাইলে দিতে পারে। তবে তাদেরকে বুঝতে হবে যে, আগেও কোন হুমকি ছিল না।

“এখন সেখানে সামরিক দল মোতায়েন করা হলে কিংবা কোনও অবকাঠামো স্থাপন করা হলে আমাদেরকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যে অঞ্চলগুলো থেকে আমাদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করা হয়েছে, সে অঞ্চলগুলোর জন্য একই হুমকি সৃষ্টি করতে হবে।”

ফিনল্যান্ডের জনগণ আগে নেটোতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। কিন্তু ইউক্রেইনে রুশ হামলার পর রাতারাতি ওই পরিস্থিতি বদলে যায়; নেটোতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পক্ষে জনসমর্থন এক তৃতীয়াংশ থেকে বেড়ে একলাফে প্রায় ৮০ শতাংশে পৌঁছে যায় বলে সেসময় দেশটির নাগরিকদের মধ্যে হওয়া বেশ কয়েকটি জনমত জরিপে দেখা যায়।

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
আইএ/ ৪ এপ্রিল ২০২৩

Back to top button