পশ্চিমবঙ্গ

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে কলকাতায় মমতার অবস্থান কর্মসূচি

কলকাতা, ২৯ মার্চ – দেড় দশক পরে ফের কলকাতার রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিলেন রাজনৈতিক স্ট্রিট ফাইটার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বঞ্চনার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর আগে বিরোধী দলনেত্রী থাকাকালীন ২০০৬ সালে জমি আন্দোলনের জন্য সিঙ্গুরে জাতীয় সড়কের পাশে ১৪ দিন অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২৬ দিন অনশনও করেছিলেন সেসময়।

বুধবার দুপুর ১২টা থেকে কলকাতার রেড রোডে স্থাপিত দেশটির সংবিধান প্রণেতা বি.আর আম্বেদকরের মূর্তির নিচে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন মমতা। দুই দিনব্যাপী (২৯-৩০ মার্চ) এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এর পর রেড রোডের ধরনা মঞ্চ ত্যাগ করবেন মমতা। এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানস্থল থেকে মাত্র ৬০০ মিটার দূরত্বে আরেকটি জনসভা করেছেন মমতার ভাতিজা ও তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বুধবার দুপুর বারোটার দিকে কালীঘাটের বাড়ি থেকে রেড রোডে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান মমতা। এরপর সেখান থেকে অস্থায়ী মঞ্চে এসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় মুখ্যমন্ত্রীর বাম পাশেই ফুলের ডালিতে রাখা ছিল ভারতের সংবিধান বইটিও। সেটিকে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে দেখা যায় তাকে। এটিই তার প্রতীকী প্রতিবাদ বলে জানিয়েছেন মমতা।

 

মূলত, ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা সহ বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্যের প্রাপ্য বকেয়া ১ লাখ কোটি রুপির বেশি অর্থ প্রদান, তৃণমূল সরকারের সাফল্যে বিজেপির প্রতিহিংসা পরায়ণ মনোভাব, কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি দ্বারা বিরোধীদের হেনস্থা, পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন এবং রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি- এই সমস্ত ইস্যুতেই মমতার অবস্থান কর্মসূচি। অবস্থান কর্মসূচি মঞ্চের একদিকে রয়েছে সিলিন্ডার গ্যাসে কাট আউট ও মঞ্চে বাজছে ইন্দ্রনীল সেনের গান।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই ওই অবস্থান কর্মসূচি মঞ্চে যোগ দেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, শশী পাজা, সুজিত বসু, বিরবাহা হাঁসদা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, বাবুল সুপ্রিয়, মনোজ তিওয়ারি, ইন্দ্রনীল সেন, তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকশি, দলের সাংসদ সৌগত রায়, শান্তনু সেন, দোলা সেন, বিধায়ক দেবাশীষ কুমার প্রমুখ। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি এদিন তৃণমূল সরকার ঘনিষ্ঠ টলিউডের কয়েকজন সেলিব্রিটিকেও দেখা যায় এই অবস্থান কর্মসূচি মঞ্চে যোগ দিতে। মমতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সেই ছবি মঞ্চে উপস্থিত অনেককেই দেখা যায় মোবাইলে ধারণ করতে।

মমতার দাবি- রাজ্যের বিভিন্ন খাতে পাওনা টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে। রাজ্যের দাবি, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষয়ক্ষতি বাবদ পাওনা ৩২ হাজার ৩১০ কোটি। আর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ৪ হাজার ২২২ কোটি। বুলবুলে ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ৬ হাজার ৩৩২ কোটি। জিএসটি কম্পেনসেশন বাবদ পাওনা ২ হাজার ৪০৯.৯৬ কোটি। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বাবদ পাওনা ৮ হাজার ২০০ কোটি। একশ দিনের গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পে পাওনা ৭ হাজার ২০০ কোটি। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রায় ১৫ লাখ পরিবার। বিপুল ওই টাকা আটকে রাখার ফলে রাজ্যের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে দাবি রাজ্যের। একইসঙ্গে এজেন্সির দ্বারা বিরোধীদের হেনস্থা ও আদানির স্বার্থে এলআইসি-র বেসরকারিকরণ, রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকে গচ্ছিত জনগণের অর্থ নয়ছয় করার মতো বিষয়গুলির বিরুদ্ধে তদন্তেরও দাবি তুলেছেন মমতা। অন্যদিকে, কেন্দ্র বলছে- রাজ্য সরকার কোনও হিসেব দেয় না। সেই হিসেব এলেই আটকে থাকা টাকা ছেড়ে দেওয়া হবে।

এদিকে কলকাতায় যখন মমতা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন, ঠিক তখনই দলনেত্রীর পাশে থাকার বার্তা দিয়ে একই ইস্যুতে এদিন সকালে দিল্লিতে সংসদ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা।

সংসদ ভবন চত্বরে আম্বেদকরের মূর্তির নিচে তৃণমূল সাংসদরা জমায়েত হয়ে, হাতে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।

অন্যদিকে মমতার অবস্থান কর্মসূচি স্থলের মাত্র ৬০০ মিটার দূরে কলকাতার শহীদ মিনার চত্বরে জনসভায় উপস্থিত হন মমতার ভাতিজা ও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জী। দলের ছাত্র যুবদের নিয়ে এই সভার এই সমাবেশের ডাক দেন অভিষেক। ওই সভামঞ্চ থেকেও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জন বিরোধী নীতির সমালোচনা করে বার্তা দেন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক। মমতার অবস্থান কর্মসূচি মঞ্চ এবং অভিষেকের জনসভা, জোড়া জনসভা ঘিরে কলকাতা জুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দুই রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে বুধবার স্থবির শহরে পরিণয় হয় কলকাতা। শহরের রাস্তায় যানজট তীব্র আকার নেওয়ায় রেড রোডে বন্ধ করা হয়েছে যান চলাচল। এরপর গোটা এলাকাকে নিরাপত্তার কড়া চাদরে মুড়ে ফেলেছে কলকাতা পুলিশ।

তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরনায় বসছে রাজ্যটির প্রধান বিরোধীদল বিজেপিও। দুপুর ২টা থেকে শুরু হওয়া কলকাতার শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে এই অবস্থান কর্মসূচি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ দলের বিধায়করা। তাদের দাবি কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ রাজ্যকে অর্থ বরাদ্দ করলেও সেই অর্থ নয়ছয় হচ্ছে।

পাশাপাশি রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করে এই সরকারের আমলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রতিবাদ করে আলাদা আলাদা করে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেবে বাম দলগুলি এবং কংগ্রেস।

সূত্র: সমকাল
আইএ/ ২৯ মার্চ ২০২৩

Back to top button