এনামুল হকের অভিযোগ বিশ্বাস করতে পারছেন না স্বজনরা
নওগাঁ, ২৯ মার্চ – র্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা অভিযোগ কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তার স্বজনরা। যার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জেসমিনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই যুগ্ম সচিব এনামুল হকের সন্দেহজনক আচরণ, মামলার এজাহারে জেসমিন সম্পর্কে করা অভিযোগ এবং গণমাধ্যমে দেওয়া বাদীর বক্তব্য নিয়ে জেসমিনের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন জেসমিনের স্বজনরা। তারা এখন এ বিষয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাইছেন না। কথা বলতে চান না জেসমিনের প্রতিবেশী ও সহকর্মীরাও। জেসমিনের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সম্পর্কে তার ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত ও ভাই সোহাগ মিয়ার বক্তব্য জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
স্থানীয় সরকার রাজশাহী বিভাগের পরিচালক যুগ্ম সচিব এনামুল হকের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে জেসমিনের মামা নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক (মন্টু) বলেন, জেসমিনরা ছয় বোন ও এক ভাই। জেসমিনের বাবা নওগাঁ পৌরসভা কার্যালয়ে চাকরি করতেন। ছোটবেলা থেকেই জেসমিনের জীবন সুন্দরভাবে গড়ে উঠেছে। সে টিউশনি করেছে, শিক্ষকতা করেছে। তারপর তার এই সরকারি চাকরি হয়েছে। ১৫ বছর ধরে ভূমি অফিসে চাকরি করে। অফিসে কাজ করার সময় কাউকে হয়রানি করেছেন- এমন অভিযোগ কোনো দিন উঠেনি। সে খুবই ভালো মেয়ে ছিল।
আটকের একদিন পর সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে এনামুল হকের মামলার বিষয়টি জেনে অবাক হয়েছেন বলে জানান নাজমুল হক মন্টু। তিনি বলেন, জেসমিনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেগুলো যদি ভুল প্রমাণিত হলে তার ছেলে ও স্বজনদের যে মানহানি হচ্ছে এর ক্ষতিপূরণ কে দেবে? আবার মামলার এজাহার অনুযায়ী বাদীর সঙ্গে নওগাঁ শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে র্যাবের হঠাৎ দেখা এবং জেসমিনকে চিনিয়ে দিয়ে র্যাবের হাতে গ্রেফতার করানো এসব প্রশ্নের উত্তর মিলছে না আমাদের কাছে। আবার র্যাব জেসমিনের ছেলের দেওয়া তার মায়ের অ্যাকাউন্টে ৮-৯ লাখ টাকার থাকার স্টেটমেন্ট দেখিয়েছে। একজন কৃষকের অ্যাকাউন্টেও তো আজকাল ৮-৯ লাখ টাকা থাকতে পারে। এটা অস্বাভাবিকের কী হলো?
তিনি আরও বলেন, জেসমিনের আগে থেকে কোনো অসুস্থতা ছিল না। সে সবসময় অফিসের কাজ ও সংসারের কাজ নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে থাকত। তার সঙ্গে কারও কোনো সম্পর্কও ছিল না। তাকে অনেকবার বিয়ের কথাও বলেছি কিন্তু সেটিতেও রাজি হয়নি। ছেলের লেখাপড়া শেষ হলে তাকে বিয়ে দেবে বলে আমাদের জানিয়েছিল।
গত ২২ মার্চ নওগাঁ শহরের জনকল্যাণপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুলতানা জেসমিনকে আটক করে র্যাব। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাকে প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরদিন ২৩ মার্চ বিকালে রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন শুক্রবার মারা যান জেসমিন। আটকের পর র্যাব হেফাজতে জেসমিনকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
সূত্র: যুগান্তর
এম ইউ/২৯ মার্চ ২০২৩