ঢাকা

স্থানীয়দের হামলার শিকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা, ২৮ মার্চ – পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর আহত এক শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার সময় পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ করেন আহতরা।

সোমবার (২৭ মার্চ) রাত ১০টার দিকে গেন্ডারিয়ার মুরগিটোলা মোড় এলাকায় প্রথম দফায় রাত ১০টা ও ১১টার দিকে দ্বিতীয় দফায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয়দের সঙ্গে মারামারির ঘটনা ঘটে শিক্ষার্থীদের। তখন এক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় দুজনকে আটক করে সূত্রাপুর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পরে রাত ১১টার দিকে আবু সুফিয়ান ও শিহাব নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরা অবস্থায় মুরগিটোলা মোড়ে চা খেতে গেলে হঠাৎ সেখানে অবস্থানরত স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের ৪০-৫০ জন ওই দুই শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তাদের চিৎকারে আশপাশে থাকা আরও ক’জন শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে তাদের ওপরও আক্রমণ করে স্থানীয়রা।

গুরুতর আহত সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি চা খাওয়ার জন্য আমার বন্ধুর সঙ্গে বের হয়েছিলাম। হঠাৎ স্থানীয় কয়েকজন এসে আমাদের আটকিয়ে কোথায় থাকি জিজ্ঞাসা করে। বানিয়ানগর থাকি বলতেই আমাদের ওপর অনেকগুলো ছেলে আক্রমণ করে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের টি-শার্ট পরিহিত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে আর মারতে থাকে। আমরা আগের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানোর সময় পাশে পুলিশ ছিল, কিন্তু শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি তারা। উল্টো পুলিশের মারধর শিকার হয়েছে এক শিক্ষার্থী বলে জানান তারা।

সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান করলেও তারা কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করেনি।

হামলার শিকার শিহাব নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের মারধর করার পর পুলিশ এসে থামায়। কিন্তু বলতে থাকে তোরা জগন্নাথের স্টুডেন্ট এখানে আসছিস কেন? এ কথা বলেই পুলিশ আমাকে মারতে থাকে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি বিষয়‌টি জানার পর আহতদের চি‌কিৎসার জন‌্য ব‌্যবস্থা করেছি। সূত্রাপুর ও গেন্ডা‌রিয়া দুই থানার ওসির সঙ্গেই কথা বলে‌ছি। থানাই অভিযোগ দিলে অভিযুক্ত‌দের বি‌রুদ্ধে পুলিশ ব‌্যবস্থা নেবে। আর যে পু‌লিশ‌ শিক্ষার্থী‌দের গায়ে হাত তুলেছে সেই ভি‌ডিওটিও ওসিকে দিয়েছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’

গেন্ডারিয়া থানার ওসি মো. আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, ‘ঘটনা সূত্রাপুর থানা অধীনে। ঘটনার সময় সেখানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা ছিল। তারা মারামারি থামিয়ে দিয়েছে। পরে আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। তবে এ ঘটনায় আমাদের এখানে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।’

সূত্রাপুর থানায় ওসি মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ঘটনায় ভিকটিম এখনো আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। কোথা থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে তা ভিকটিম আসলে তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারব। আর যে দুজনকে আটক করা হয়েছিল তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তাই তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

সূত্র: দেশ রূপান্তর
আইএ/ ২৮ মার্চ ২০২৩

Back to top button