সুনামগঞ্জ রেললাইন স্থাপন: সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন এ সপ্তাহেই
সুনামগঞ্জ, ২৭ মার্চ – সিলেট-ছাতক রেললাইনের গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্ট এই সপ্তাহেই জমা হবে বলে জানা গেছে। রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনে দু’টি পথের মতামত দেওয়া হলেও রেলওয়ের দায়িত্বশীলদের বেশিরভাগেই গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণ নতুনপাড়া ও কালীপুরের মাঝের হাওর পর্যন্ত রেল লাইনে স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে রেলের একাধিক দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, ৬৮ বছরেরও আগে ১৯৫৪ সালে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক পর্যন্ত রেললাইন এসেছে। কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলা শহর এখনও যুক্ত হয়নি রেললাইনের সঙ্গে। সুনামগঞ্জের উৎপাদিত ধান, সবজি, মাছ, পাথর কম পরিবহন খরচে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য রেলপথের দাবি বহুদিনের। জেলাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইন স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে রেলওয়ে।
রেলপথের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নিয়োগকৃত মজুমদার এন্টারপ্রাইজের সমীক্ষা দল ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণ নতুনপাড়া পর্যন্ত ইতোপূর্বে সমীক্ষা করেছে। আবার ছাতক-দোয়ারাবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত একাধিবার ঘুরে দেখেছেন সমীক্ষাদল।
সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় নানা বিষয় বিবেচনায় এনে গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত অর্থাৎ সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের পাশ দিয়ে রেললাইন স্থাপনের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এর চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও জমা হয়নি বলে জানা গেছে। রেলওয়ের দায়িত্বশীল একজন প্রকৌশলী জানান, সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ বর্ধিত করার জন্য দুই পর্যায়ে কাজ চলছে। একটি হচ্ছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, অপরটি নকশা প্রণয়ন।
চুক্তি অনুযায়ী চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন এবং বাংলাদেশের মজুমদার এন্টারপ্রাইজ এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। নির্দেশনা অনুযায়ী গেল অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সম্ভাব্যতা যাচাই রিপোর্ট দাখিল করে সংশ্লিরা। তাদের ওই রিপোর্টের উপর পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা কিছু অবজারভেশন সংযুক্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেন। কয়েক দফায় সময় নেবার পরও সম্ভাব্যতা যাচাইকারীরা চূড়ান্ত রিপোট ২৬ মার্চ রবিবার পর্যন্ত দাখিল করেননি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে রিপোর্ট দাখিল করার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়নি। চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল না হওয়ায় এই প্রকল্পের অগ্রগতি থেমে আছে।
রেলওয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সমীক্ষাকালে গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত পাঁচটি স্টেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। শেষ স্টেশন হবে সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণ নতুনপাড়ার পাশ্ববর্তী ঝাওয়ার হাওরে। এই স্টেশনটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার এবং প্রস্ত হবে ৫০০ মিটার।
সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগণসহ সকল শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, রেলপথ নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা পরিবেশ-প্রতিবেশের কম ক্ষতি করে, অর্থ ব্যয়ে অপচয় না করে এবং বেশি মানুষের সুফল পাওয়ার দিকে খেওয়াল রাখেন। এসব বিবেচনায় সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের পাশ দিয়েই রেলপথ করার যুক্তি আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ওই সভায় মন্ত্রী আরও বলেন,‘ ছাতক হয়ে রেলপথ সুনামগঞ্জে আসলে দু’টি নদী পারাপার হতে হবে। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশ দিয়ে আসলে ছাতকসহ জেলার অন্যান্য উপজেলার বাসিন্দারাও রেলের সুফল পাবেন।’ পরিকল্পনা মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর আবার আলোচনায় আসে রেলপথ ইস্যু।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পথ) আরমান হোসেন বললেন, ‘ ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথের সম্ভাব্যতা ও নকশার চূড়ান্ত রিপোর্ট গেল সপ্তাহে জমা দেবার কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত জমা হয়নি। এই সপ্তাহে জমা হবে আশা করছি।’
প্রসঙ্গত, গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনের স্থাপনের অ্যালাইনমেন্ট নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের শুরুর দিকে স্থানীয়ভাবে ভিন্নমত তৈরি হয়েছিল। জেলার চার জন সংসদ সদস্যসহসহ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছাতক থেকে দোয়ারাবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনের স্থাপনের পক্ষে মতামত জানিয়ে ছিলেন।
সূত্র: সিলেটটুডে২৪
আইএ/ ২৭ মার্চ ২০২৩