সারাবিশ্বে এক বছর ধরে করোনাভাইরাস সঙ্গে লড়তে মানুষ আজ করোনা ভাইরাসকে পরোয়া করছে না। করোনা ভাইরাসের টিকা আসুক, আর না আসুক মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। মৃত্যুকে আর পরোয়া করেনা জীবন-জীবিকার তাগিদে, জীবন যুদ্ধে জয়ী করার জন্য মানুষ নিজে থেকে করোনাভাইরাস এর লড়াই প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে ।সেই মুহূর্তে বিশ্বের একাধিক দেশ করোনা টিকা আবিষ্কারে একটু একটু করে এগিয়ে চলেছিল । আজ বিশ্বে করোনা টিকায় প্রথম আবিষ্কার দেশ হিসেবে ফাইজার।তবে সব কিছুর পিছনে যেন একটা বিশ্ব রাজনীতির অর্থনৈতিক মিলেমিশে কাজ করছে। অতিমাত্রায় ডানপন্থী পুঁজিবাদী দেশগুলোতে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে কে কত দ্রুত ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারে। কারণ যে কোম্পানি আগে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবে, সে-ই করোনাভাইরাসের এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ মুনাফা লুটতে পারার সামর্থ্য রাখবে। পুঁজিবাদে মুনাফাই শেষ কথা, নীতি-নৈতিকতা কিংবা মানবতার বালাই নেই। রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ সামাজিক নিরাপত্তাহীন অসচ্ছল জনগোষ্ঠী। যাদের উঁচু দরে ভ্যাকসিন কেনার সামর্থ্য নেই তাদের ভ্যাকসিন প্রাপ্যতার বিষয়টি দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদদের নিশ্চিত করতে হবে। রাজনীতিবিদেরা যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির বেধে দেয়া উঁচু দরই মেনে নিতে হবে। তখন করোনা ভ্যাকসিন শুধু গুটিকয়েক অভিজাত ও মধ্যবিত্ত ব্যক্তিরাই ভোগ করবে, নিম্নবিত্তদের আর ভ্যাকসিনের মুখ দেখতে হবে না। কথাপ্রসঙ্গে সে সময় উঠে আসছিল,করোনা ভ্যাকসিন যে দেশই আবিষ্কার করুক না কেন, তা বৈশ্বিক আবিষ্কার হিসেবেই পরিগণিত হবে।
বিজ্ঞান কোনো ব্যক্তি কিংবা দেশের কল্যাণে কাজ করে না, সব দেশের সকল মানুষের জন্যই বিজ্ঞান। রাজনীতির ফায়দা লোটার জন্য যদি করোনা ভ্যাকসিনকে নির্দিষ্ট স্থানের মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয় কিংবা পুঁজিবাদের নির্মমতার গ্যাড়াকলে পড়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে রাখা হয়, তাহলে তা হবে চরম অমানবিক ঘটনা। ভূ-রাজনীতিতে বিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু জনস্বাস্থ্যের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের ক্ষেত্রে সেই শত্রুতা টেনে আনা মোটেও সুখকর নয়।করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ইতিহাসে ফিরে দেখার কিছু কাহিনী, ও ভ্যাকসিন আবিষ্কারে কথা আজ আমার কলমে বিশ্বজুড়ে একটা দিক নিদর্শন করব বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে।গত বছরের নভেম্বরে যখন করোনাভাইরাসের প্রথম কেস পাওয়া যায় চীনের হুবেই প্রদেশে, তখন আসলে কেউ জানতো না এই ভাইরাস পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে ফেলবে। খুব দ্রুতই অর্থনীতি, রাজনীতি কিংবা পুরো সমাজকে স্থবির করে দিয়ে এক অজানা আতঙ্কের ছায়া নেমে আসবে পুরো বিশ্বে– এরকমটা এই বছরেরও শুরুতেও ভাবা দুঃসাধ্য ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে অকল্পনীয় সব ঘটনাই বাস্তবে পরিণত হয়েছে, হচ্ছে, সামনে হয়তো আরও হবে।করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি বদলে যাচ্ছে, রাজনীতি নতুন মাত্রা পাচ্ছে, ইতিহাস নতুন করে লেখা হচ্ছে, সমাজের অনেক কিছু পুনর্গঠিত হচ্ছে, অনেক চিরন্তন নীতি ভেঙে পড়ছে। মোট কথা, করোনাভাইরাস সবকিছুতেই অল্প সময়ে এত বিশাল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে যে, এগুলো নিয়ে ভাবতে গেলেও মগজের সংকীর্ণতা গ্রাস করে আমাদের।
করোনাভাইরাস যখন এ বছরের শুরুর দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে, তখন উৎপত্তির দেশ হিসেবে চীনকে সমালোচনার ঝড় সহ্য করতে হয়েছে। অবশ্য চীনকে একেবারে নির্দোষ আখ্যা দেয়ার উপায় নেই। প্রাথমিকভাবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তথ্য গোপন করেছিল। গোপন না করলে হয়তো বাকি দেশগুলো আরেকটু সতর্ক হতে পারতো, করোনার প্রস্তুতি নিতে আরেকটু সময় পেত।যা-ই হোক, সবকিছু বিবেচনায় না নিয়ে আমরা আমেরিকা ও তার দীর্ঘ দিনের মিত্র ইউরোপ যেভাবে জাতীয়তাবাদের মিশেলে বর্ণবাদী প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দিয়েছে মিডিয়ার মাধ্যমে, সেটিও আদতে গ্রহণযোগ্য নয়। স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাসকে ‘চাইনিজ ভাইরাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যেটি চূড়ান্ত রকমের বর্ণবাদী আচরণ হিসেবে সমালোচিত হয়েছে পুরো বিশ্বে। করোনার ফলে বিভিন্ন নিও-লিবারেল নীতিতে চলা পুঁজিবাদী দেশের স্বাস্থ্যখাত যেভাবে ভেঙে পড়েছে, তা থেকে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে দিতে জাতীয়তাবাদী কিংবা বর্ণবাদী প্রোপাগান্ডা চালানো নতুন কোনো অস্ত্র নয়। রাজনৈতিক নেতারা অনেক আগে থেকেই এমনটা করে আসছেন।
আরও পড়ুন : নকল ভ্যাকসিন নিয়ে ইন্টারপোলের সতর্কতা জারি
তবেই করোনা ভাইরাসকে একপর্যায়ে ‘চাইনিজ ভাইরাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যেটি পুরো বিশ্বে সমালোচিত হয়; করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কার হবে এই শতাব্দীর সবচেয়ে যুগান্তকারী ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। সম্প্রতি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের ইতিবাচক ফলাফল আমাদের আশাবাদী চোখকে আরেকটু উজ্জ্বল করেছে। পৃথিবীকে আগের অবস্থায় ফিরে পেতে সবাই একটি কার্যকরী ভ্যাকসিনের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছে ভাইরাস হানা দেওয়ার পর থেকেই। লকডাউনের ফলে যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিটি দেশকে, তা থেকে মুক্তির অন্যতম প্রধান উপায় একটি কার্যকরী ভ্যাকসিনের সহজলভ্যতা তৈরি করা। অনেক দেশেরই রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন সেক্টরে ইতোমধ্যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের সেসব ব্যর্থতার গল্প আড়াল করতে পারে একটি কার্যকরী ভ্যাকসিন, যা করোনাভাইরাসের ধ্বংসযজ্ঞ থামিয়ে দেবে, অসংখ্য মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবে। এজন্য রাজনীতিবিদ কিংবা দেশের সাধারণ জনগণ– সবার জন্যই করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে একটি কার্যকরী ভ্যাকসিন আশীর্বাদ বয়ে আনবে। অন্যদিকে অনেক দেশেরই শতাধিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি কোমর বেধে নেমেছে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে। এর মধ্যে অনেকগুলো বিভিন্ন পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। অনেক দেশ সরকারিভাবে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীনের সবচেয়ে বড় করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের প্রজেক্টে অর্থায়ন করছে চীনের শি জিনপিং সরকার।
আমেরিকাতেও ট্রাম্প সরকার বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্মে সরকারি অনুদান দিচ্ছে।স্নায়ুযুদ্ধের সময় আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার কীরকম তিক্ত সম্পর্ক ছিল, তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু ১৯৫৮ সালে আমেরিকা-সোভিয়েত রাশিয়া যৌথভাবে গুটিবসন্ত নির্মূলে এক হয়ে কাজ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়। ফলাফল– মাত্র এক যুগেরও কম সময়ে পুরো বিশ্ব থেকে গুটিবসন্তের বিদায়। স্নায়ুযুদ্ধের সেসময়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে এই ঘটনা পৃথিবীর অনেক শান্তিকামী মানুষের মনে শীতল বাতাস বয়ে এনেছিল। এই খবরটি যখন বিশ্বের দরবারে ছড়িয়ে পড়ছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার এর ছাড়পত্র পায় বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ফাইজার । ইতিহাস একটু তুলে ধরতে চাই আজ। ফাইজার ও বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনটিকে প্রথম দেশ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে করোনা সংক্রমণের ‘সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে’ থাকা ব্যক্তিদের আগামী সপ্তাহ থেকে এ ভ্যাকসিন দেয়া হবে। খবর গার্ডিয়ান।এই মাসের মাঝামাঝি ফাইজার ও বায়োএনটেক জানায়, তাদের ভ্যাকসিনটি কোভিড-১৯ থেকে ৯০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম। সেই সঙ্গে এটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত। কয়েক দিন পর (১৮ নভেম্বর)ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনটির চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবার তারা উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের কার্যকরিতা ৯৫ শতাংশ বলে দাবি করে।যুক্তরাজ্যের ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ বলছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনটি নিরাপদ।
উল্লেখ্য, সাধারণত ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের পর পরীক্ষা করতেই লেগে যায় বছরের পর বছর। সেখানে মাত্র ১০ মাসেই এ সাফল্য পেয়েছে ফাইজারের ভ্যাকসিনটি। এটিই এখন পর্যন্ত তত্ত্ব থেকে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তবে রূপ ভ্যাকসিন।এদিকে
ফাইজার ও বায়োএনটেক উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের ৪ কোটি ডোজের আগাম অর্ডার দিয়ে রেখেছিল যুক্তরাজ্য, যা তারা দুই কোটি মানুষকে দুই ডোজ করে দিতে পারবে। চলতি বছরই তারা এক কোটি ডোজ পাবে বলে আশা করছে। অন্যদিকে
বায়োএনটেক-এর করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিল ব্রিটেন। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ জানিয়েছে, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত অসুস্থতার ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ সুরক্ষাপ্রদানকারী এই টিকা চালু করার ক্ষেত্রে নিরাপদ।অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত গোষ্ঠীগুলির লোকজনদের আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই টিকা প্রদানের কাজ শুরু হতে পারে।
ব্রিটেন ইতিমধ্যেই ৪ কোটি ডোজের বরাত দিয়েছে, যা, দুবার করে ২ কোটি মানুষকে টিকা দানের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত। এর মধ্যে এক কোটি খুব শীঘ্রই হাতে আসবে। কাজেই কিছুদিনের মধ্যেই ব্রিটেনে প্রথম দফার টিকাদানের জন্য তা চলে আসবে।ধারনা থেকে বাস্তব রূপায়নের ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনই দ্রুততম। তবে ভ্যাকসিন প্রদানের কাজ শুরু হলেও মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সংক্রমণের প্রসার এড়াতে করোনাবিধি মেনে চলতে হবে বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর অর্থ সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহার, সাবান-জল দিয়ে বারেবারে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইটার ব্যবহারের মতো বিধি কঠোরভাবেই মেনে চলা দরকার। সেইসঙ্গে আক্রান্ত বলে যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের টেস্ট করা ও পজিটিভ এলে আইসোলেশনে থাকার মতো বিধিতে কোনওভাবেই রাশ আলগা করা যাবে না।সারা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখিযা প্কায় ৬.৪ কোটির বেশি। ব্রিটেনে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লক্ষের বেশি। এরইমধ্যে ব্রিটেনে সাধারণ মানুষের জন্য করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিনের অনুমতি দেওয়া হল। সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য ফাইজার/বায়োএনটেক-এর করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হল। এরফলে খুব শীঘ্রই সাধারণ মানুষকে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে।
এই ভ্যাকসিনকে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখতে হবে এবং ড্রাই আইস প্যাক করা বিশেষ বক্সে নিয়ে যেতে হবে। ডেলিভারি হওয়ার পর তা পাঁচদিন ফ্রিজে রাখা যেতে পারে।বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই প্রাথমিক অগ্রাধিকার সংক্রান্ত তালিকা তৈরি করেছেন। এক্ষেত্রে যাঁদের সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, সে কথা মাথায় রেখেই এই তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকার প্রথমে রয়েছেন কেয়ার হোমের বাসিন্দা ও কর্মীরা। এরপর ৮০ বছরের বেশি লোকজন এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা। আগামী সপ্তাহেই তাঁরা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়ে যাবেন।৫০ বছরের উর্দ্ধে বা কোমর্বিডি সম্পন্ন অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সীদের টিকাদানের কাজ ভ্যাকসিনের সরবরাহ অনুযায়ী আগামী বছরের শুরুতেই হতে পারে। এই ভ্যাকসিনের জন্য ২১ দিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ দিতে হবে।তবে বাংলার বুকে করনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ এর কাজ শুরু হয়েছে কলকাতায়, শুরু হয়েছে ভারত বায়োটেকের কোভিড-টিকা কোভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল। বুধবার বেলেঘাটা নাইসেডে এই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। অন্যদিকে
ভারত সরকারকে করোনা ভ্যাকসিন বেচার বিষয়ে আলোচনা করছে ফাইজার। চলতি সপ্তাহেই জানা গিয়েছে যে ফাইজারের সম্ভাব্য করোনা টিকা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় ৯০ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে। ফাইজার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র হিন্দুস্তান টাইমসের বাণিজ্য পত্রিকা মিন্টকে জানিয়েছেন যে যত দ্রুত সম্ভব ভারতে টিকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ভারতীয় সরকারের সূত্রেও জানা গিয়েছে যে ফাইজারের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে টিকা কেনার জন্য়। অন্য বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। ফাইজারের মুখপাত্র জানান যে তারা আশা করছেন যে চলতি বছরেই ৫ কোটি ডোজ তৈরি করতে পারবেন ও আগামী বছর ১৩০ কোটি ডোজ প্রস্তুত হবে। যে সব দেশের সঙ্গে চুক্তি হবে, তাদের কাছে টিকা পৌঁছে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ফাইজার। এই মুহূর্তে ভারতে কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তি নেই ফাইজারের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে করোনা টিকার জন্য উদ্যোগ, সেই Covax-এর সঙ্গেও কোনও বোঝাপড়া নেই ফাইজারের। তবে ভারতে ফাইজারের টিকা আনার ক্ষেত্রে কোল্ড চেইনের অভাব বড় বাঁধা হতে পারে। এই টিকা মাইনাস ৬০ থেকে মাইনাস ৯০ ডিগ্রিতে স্টোর করতে হবে। সেরকম কোল্ড স্টোরেজ ভারতের অনেক জায়গায় নেই। এই কারণেই ফাইজারের থেকে টিকা নিতে ভারত ইতস্তত করছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিষ্ঠ কর্তা জানিয়েছে। তবে ফাইজারের দাবি কিভাবে ভ্যাকসিন স্টোর করতে হবে ও লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা তারা করে রেখেছে।
এই মুহূর্তে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)–এর কাছে মডার্না এই টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। সেই সঙ্গে ইউরোপিয় মেডিসিনস এজেন্সির কাছেও এই টিকাকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বৈধতা দেওয়ার জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে’।ইউনিভার্সিটি অব রিডিং-এর বায়োমেডিক্যল টেকনোলজির শিক্ষক আলেকজান্ডার এডওয়ার্ড বলেন, ‘এটা দুর্দান্ত ঘটনা। যত বেশি ট্রায়ালের তথ্য আমরা পাব, ততই কোভিডের বিরুদ্ধে আমাদের গবেষণা সফল হবে।
একই ছাড়পত্রের জন্য সম্প্রতি আবেদন জানিয়েছে ফাইজারও। ইতিমধ্যেই ইউরোপের সংস্থার কাছে ফাইজারের ডেটা পৌঁছে গিয়েছে। তারা তা পর্যালোচনা করে দেখছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনের তথ্যও এখন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।মডার্না বলেছে, ইউরোপের কাছ থেকে দ্রুত এই টিকার ছাড়পত্র মিলবে। ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর উপর এই টিকা প্রয়োগ করে তথ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। একটি সূত্রের মতে, এর মধ্যে অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ রোগীর উপর এই টিকা ১০০ শতাংশ কার্যকর।তবে মডার্নার টিকা বাজারে এলে তার দাম অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা ফাইজারের থেকে বেশি হবে বলেই মনে করছেন অনেকে। বিশ্বের এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত এই অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির চব্বিশতম সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।সভার পর সাংবাদিকদের ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল জানান, পিপিআর-২০০৮ অনুসারে, বছরে ৫ কোটি টাকার উর্ধ্বে যেকোনো সরকারি ক্রয়ের প্রস্তাব অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে অনুমোদনের জন্য পেশ করতে হয়।
তিনি বলেন, যেহেতু মহামারী প্রতিরোধের জন্য একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে হবে, তাই, এই সভার নীতিমালা অনুযায়ী পিপিআর-২০০৮ এর ৭৬ (২) অনুচ্ছেদের সাথে মিল রেখে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য ডিপিএম পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রস্তাবটি নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সরকার প্রাথমিকভাবে সাধারণ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের ৩ কোটি (৩০ মিলিয়ন) ডোজ সরবরাহ করবে। পাশাপাশি, দেশে করোনভাইরাস মানুষের মাঝে যাতে আরও ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য মাস্ক পরার ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে জাপানে দিক থেকে পিছিয়ে নেই,জাপান বৃহৎ ঔষধ কোম্পানি ফাইজারের কাছ থেকে ৬ কোটি মানুষের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া, তারা বায়োটেক কোম্পানি মডার্নার নিকট থেকে আরও ২ কোটি মানুষের জন্য করোনা ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত করেছে।জাপান সরকার আরো জানিয়েছে, তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১২ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করবে।ফাইজার ও মডার্না যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে তাদের ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে আবেদন করেছে। চূড়ান্ত বা শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল টেস্টে তাদের ভ্যাকসিনের কার্যকর ফলাফল পাওয়ায় তারা এ আবেদন করে।করোনাভাইরাস বিষয়ে জাপান ‘সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়’ রয়েছে দেশটি প্রধানমন্ত্রী এমন ঘোষণা দেয়ার দুই সপ্তাহ পর এ বিল পাস করা হলো।জাপানে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং ২ হাজার ১শ’ জন প্রাণ হারিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে হারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সে তুলনায় জাপানে আক্রান্ত ও মৃতের এ সংখ্যা অনেক কম।