জাতীয়

রমজান মাসে নতুন সদস্য সংগ্রহ করবে আ.লীগ

মাহফুজ সাদি

ঢাকা, ২০ মার্চ – দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন সদস্য সংগ্রহ করবে আওয়ামী লীগ। আসন্ন পবিত্র রমজান মাসজুড়ে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি গ্রহণ করতে দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল শাখাকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে যেসব জেলায় সম্মেলন করা হয়েছে, সেগুলোতে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি জোটের সরকারবিরোধী কর্মসূচির বিপরীতে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া এবং তাতে লোক সমাগম বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

নেতারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ সপ্তাহ কিংবা আগামী বছরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দলের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রমজান মাসে ইফতার মাহফিল আয়োজন, নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান হাতে নেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে ঢাকাসহ অন্যান্য মহানগর, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের সহযোগী সংগঠনগুলোকেও এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ করে বলেন, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে— এবারের জাতীয় নির্বাচনটি আওয়ামী লীগের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং হবে। এ জন্য প্রত্যেকটি পদক্ষেপ ভেবে-চিন্তে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নেত্রী শেখ হাসিনা। সাধারণ মানুষকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে এবং কর্মসূচিগুলোতে সমাগম বাড়াতে বলেছেন তিনি। নির্বাচন সামনে রেখে রমজান মাসে রেকর্ড সংখ্যক নতুন সদস্য সংগ্রহের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

গত ১৫ মার্চ বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় বিষয়টি সবার নজরে আনেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওইদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা ছিল। সেখানে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ অন্যান্য কর্মসূচি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করার কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

রমজানে সদস্য সংগ্রহের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মসূচি হিসেবে সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। সর্বোচ্চ সদস্য সংগ্রহে অভিযান চলবে মাসব্যাপী। এই অভিযান পরিচালনা করবেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।’ এ ঘোষণার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন সেখানে উপস্থিত দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার (১৯ মার্চ) আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাদের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম সারা বছরই চলে, যা এখনও চলমান। রমজান মাসজুড়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে। এ ছাড়া রোজার কারণে একটু সীমিত হলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম ও কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে চলবে।’

দলটির আরেকজন সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ‘সারা বছরই দলের সদস্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এই রমজান মাসে সদস্য সংগ্রহ অভিযান প্রোগ্রাম হিসেবে নেওয়া হচ্ছে। মাসব্যাপী চলবে এই কর্মসূচি। এর ফলে বিপুল সংখ্যক সদস্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করি।’

সম্মেলন হওয়া জেলাগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য বলেন, গেলো বছর দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে রেকর্ড সংখ্যক জেলায় সম্মেলন করা হয়েছে। সম্মেলন করা হলেও অনেক জেলায় এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর পেছনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং কেন্দ্রীয় কিছু নেতার হস্তক্ষেপ। এখন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সম্মেলন হওয়া জেলাগুলোতে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার নির্দেশ হওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে।

গত ১৫ মার্চের যৌথ সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যেসব জেলায় সম্মেলন করা হয়েছে, সেগুলোতে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে হবে। এর মধ্যে যারা কমিটির নামের তালিকা জমা দেয়নি, তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। যেসব কমিটির নাম জমা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সাংগঠনিক নিয়মে সমাধান করতে হবে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা বসে সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যেসব জেলায় সম্মেলন হয়েছে কিন্তু কমিটি এখনও দেওয়া সম্ভব হয়নি। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা আশা করছি, এপ্রিলের শুরুর দিকে সবগুলো কমিটি ঘোষণা করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘সম্মেলন হওয়া জেলাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতে কমিটি দেওয়া হয়েছে। বাকি যেসব জেলা রয়েছে— সেগুলোতেও দ্রুত কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই সম্মেলন হওয়া জেলাগুলোর কমিটি দেওয়া হবে।’

এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। সবশেষ আওয়ামী লীগের এক যৌথ সভায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন বর্জন ও বানচালের চেষ্টা হলে মোকাবিলা করতে হবে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এসব কর্মসূচিতে সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আইএ/ ২০ মার্চ ২০২৩

Back to top button