জাতীয়

জলের বেদেরা উঠবেন ডাঙার দালান ঘরে

বিশ্বজিৎ পাল বাবু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২০ মার্চ – নিজের ঘর নেই, কিন্তু কখনো স্বজনদের ঘরে ঘুমিয়েছে কি-না- এমন প্রশ্নে মুখ ফ্যাকাশে ফারুক মিয়ার। বললেন, ‘দুই একবার তো আত্মীয়ের বাড়িতে ঘুমাইছি। পেশার কামে গিয়া হোটেলে ঘুমাইছি। তহন এত শান্তি লাগদো। কিন্তু করার কিছু নাই। একদিন খাইলে আরেকদিন খাইতে পারি না। বাড়ি করার কতা কুন সময় চিন্তা করুম।’

বলছিল বেদে ফারুক মিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পেয়ে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কাজে রবিবার বিকেলে এসেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। বিল্ডিং ঘর পাওয়ার কথা বলে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি ও তার স্ত্রী পিংকি বেগম। কথা বলার সময় পিকিং বেগমও শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেন।

ফারুক আরো বলেন, ‘নৌকা থেকে ডেরা। আর ডেরার বদলে অহন বিল্ডিং। আশাও করি না। কপালে আসছে। শেখ হাসিনারে আল্লাহ ভালো রাখুক। ওনি জাতে দেশের মানুষের জন্য আরো করতে পারে সেই দোয়া করি।’

ফারুক মিয়ার মতো ৩৫ বেদে পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে। আগামী ২২ মার্চ তাদেরকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের বিভিন্ন উপজেলার মতো সদরের এসব ঘরের উদ্বোধন কার্যক্রমে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেবেন।

বেদে পরিবারগুলো মূলত নৌকায় বসবাস করে। কেউ কেউ আবার এখন নদীর পাড়ে প্লাস্টিকের ডেরা তৈরি করে বসবাস করেন। সাপ খেলা দেখানো, তাবিজ বিক্রি, কবিরাজি, বানর খেলা দেখানোসহ নানা পেশার সঙ্গে তারা জড়িত। মূলত বেদে সম্প্রদায়ের নারীরা পেশার সঙ্গে বেশি জড়িত।

বেদে আব্দুল মিয়ার বয়স ৭০-এর কাছাকাছি। ছিলেন ভারতের বাসিন্দা। যুদ্ধের সময় থেকে আছেন বাংলাদেশে। তার বাবা কদম আলীও ছিলেন বেদে। তবে তার জানামতে বংশানুক্রমে পরিবারের কেউ এখনো নিজ ঘরে ঘুমাতে পারেননি। এখন তার সাত ছেলের মধ্যেই ছয় ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে জায়গাসহ ঘর পেয়েছেন। তার সব সন্তানই নৌকায় জন্ম নিয়েছেন উল্লেখ করে এখন বেজায় খুশি বলে এ প্রতিবেদককে জানান।

বেদেরা জানান, মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী একদিন তাদের কষ্টের বসবাস দেখে আসেন। তিনি আশ্বাসও দেন কিছু একটা করার। এরপর থেকে তারা স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইউএনও দায়িত্বে থাকা পঙ্কজ বড়ুয়া ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আল-আমীন ঘর পেতে তাদেরকে সহযোগিতা করেন। এখন বর্তমান ইউএনও’র সার্বিক সহযোগিতায় ঘর পাচ্ছেন।

ঘর হওয়ার পর নিজের সন্তানকে পুলিশ কিংবা উকিল করার স্বপ্নের কথা জানালেন বেদে উজ্জল মিয়া। মিনিট খানেকের আলোচনায় তিনি বলেন, ‘নিজে পড়াশোনা করি নাই। এখন ছেলে মেয়েকে পড়াব। সরকার সুযোগ করে দিলে পেশাটাও বদলাতে চাই।’

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, ‘কাঞ্চনপুর গ্রামের ৪২টি ঘরের মধ্যে ৩৫টি ঘর বেদেদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর তাদের হাতে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আমরা তাদেরকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করব।’

সূত্র: কালের কন্ঠ
আইএ/ ২০ মার্চ ২০২৩

Back to top button