কলকাতায় একমাত্র নারী পরিচালিত বাঙালি রেস্তোরাঁ
কলকাতা, ১৯ মার্চ – কলকাতা শহরের ৮৯, এলিয়ট রোড। এখানে অবস্থিত একমাত্র নারী পরিচালিত রেস্তোরাঁ ‘সুরুচি’। শহরের এই রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে গেলে মনে হবে ঘরে বসে খাঁটি বাঙালির খাবার খাচ্ছি।
এই রেস্তোরাঁয় বাজার করা থেকে শুরু করে রান্না পর্যন্ত সব করে নারীরা। যেমন খাবার পরিবেশন, বিল রাখা, বাসন ধোঁয়া।
এই সুরুচি রেস্তোরাঁ হওয়ার আগে এখানে অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ছিল। ১৯৫২ সালে এই রেস্তোরাঁ চালু হয়। এটি হচ্ছে কলকাতা একমাত্র রেস্তোরাঁ যেখানে বিশেষভাবে বাঙালি খাবার তৈরি হয়।
এই সুরুচি রেস্তোরাঁ অল বেঙ্গল উইমেন্স ইউনিয়ন দ্বারা পরিচালিত। যা দেশ ভাগের পর ক্ষতিগ্ৰস্ত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই রেস্তোরাঁ।
সুরুচি শুধু দুপুরে খাবারের জন্য উন্মুক্ত। বাঙালির পছন্দের করাইসুটির কচুরীর সঙ্গে কখনো ছোলার ডাল, আবার আলুর দম। কেউ যদি ডাল পুরি চায় সেটাও পাওয়া যায় এখানে। এটির পাশাপাশি মাছে-ভাতে বাঙালির প্রিয় ইলিশ ভাপা, সঙ্গে ইলিশের মাথা দিয়ে কচুর শাঁক, সঙ্গে যদি চান একটু কলার মোচা ঘণ্ট বা মোচা চিংড়ি সেও পেয়ে যাবেন। ভেটকি মাছের পাতুরি, সরসে পার্সে, পটলের দোরমা, চিতল মাছের পেটি বা চিতল মাছের মুইঠা, বাঙালির সব রকমের সুস্বাদু খাবারের জন্য জনপ্রিয়তা রয়েছে রেস্তোরাঁটি। ভাত-ডাল, মাছের ঝোলতো সব সময়ই খাওয়া হয়, একটু স্বাদ বদলে খাসি কিংবা মুরগির মাংসের ঝোল সেও পাওয়া যায় এখানে। কাঁকড়া বা চিংড়িও পাওয়া যায় এখানে।
এই প্রতিষ্ঠানে ১৫ বছর ধরে কর্মরত পাপিয়া চৌধুরী জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫২ সালে শুরু হয়েছিল। তখন এখানে অন্নপূর্ণা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ছিল। তারপর ধীরে ধীরে এটার অগ্রগতি হয়। দেশ ভাগের সময় কলকাতায় বাংলাদেশের উদ্বাস্তুরা এখানে আসতে শুরু করে। অল বেঙ্গল উইমেন্স ইউনিয়ন ম্যানেজমেন্টে যারা ছিলেন তারা সেই উদ্বাস্তুদের নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করে। ধীরে ধীরে এই প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি হয়, পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ অথবা ১৯৭৩ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির নাম হয় সুরুচি।
তিনি বলেন, আগে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে ৩৬ জন নারী ছিল, কিন্তু লকডাউনের পর কমে এখন আমরা ১৩ জন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছি। আগে এখানে খাবার খাওয়ার জন্য লোক লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। তবে এখনো এখানে খাবার খেতে একদম কম কাস্টমার আসে না।
এই প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে ছিল নারী পরিচালিত এখনো সেরকমই আছে। আমাদের এখানে সব ধরনের বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। বাঙালির খাবার ছাড়া অন্য কোনো খাবার পাওয়া যায় না।
রেস্তোরাঁটি সকাল ১০টায় খোলে, গ্রাহক কমে যাওয়ায় বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। যদি ব্যবসা আগের মতো হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানটি আর একটু বেলা করে খোলা রাখা হবে।
পাপিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটকরা বেশি খেতে আসে। তাছাড়া পূর্ব ভারতের পর্যটকরা ছাড়াও মেঘালয়, আসাম, শিলং,নেপাল, ভুটান, থেকেও পর্যটকরাও বাঙালি খাবার খেতে আসে। তারা বিশেষ করে ইলিশ মাছ ভাপা খেতে আসেন। তবে বাংলাদেশি পর্যটকরা আমাদের এখানে এলে ইলিশ মাছ খায় না কারণ আমাদের ইলিশ মাছের চেয়ে তাদের ইলিশ মাছের স্বাদ অনেক বেশি। সেই জন্য বাংলাদেশি পর্যটকরা বেশি পছন্দ করে চিতল মাছের মুইঠা, চিতল পেটি বা ভেটকি পাতুরি।
রেস্তোরাঁয় খেতে আসা ভাস্কর সরদার জানান, ১২ বছর ধরে এখানে খাওয়া-দাওয়া করি। এটি মূলত বাঙালি খাবারের জন্য বিখ্যাত। রেস্তোরাঁটি প্রথমে শুরু হয়েছিল বরিশালের কয়েকজন বাঙালি নারীদের নিয়ে। প্রথমে এখানে একটা মিষ্টির দোকান ছিল। সেই মিষ্টির দোকান ধীরে ধীরে সুরুচি রেস্তোরাঁয় পরিণত হয়।
খাবার খেতে আসা সাকিল আবেদিন বলেন, সব সময় আমার এখানে আসা হয় না। আমার বাড়ি এই প্রতিষ্ঠান থেকে ঠিক এক কিলোমিটার দূরত্বে। তবু আমি ঘরোয়া বাঙালি খাবারের স্বাদ নিতে এখানে আসি মাঝে মধ্যেই। খুব ভালো খাবার।
সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ১৯ মার্চ ২০২৩