দক্ষিণ এশিয়া

কিরণ ভাই প্যাটেল থাকতেন ৫ তারকা হোটেলে, পেতেন বুলেটপ্রুফ গাড়ি-সর্বোচ্চ নিরাপত্তা

নয়াদিল্লি, ১৭ মার্চ – একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে যা যা পাওয়া যায়, তার সব সুবিধাই নিতেন তিনি। যেমন- জে প্লাস নিরাপত্তা, বুলেটপ্রুফ গাড়ি, পাঁচ তারকা হোটেলে সরকারি খরচে থাকার ব্যবস্থাসহ আরও অনেক কিছু। এমনকি বিভিন্ন রাজ্যে সফরেও যেতেন, বৈঠকে অংশ নিতেন, দিতেন পরামর্শও। এসব জায়গায় নিজেকে পরিচয় দিতেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) কৌশল ও প্রচারণা বিষয়ক অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে। অথচ আদতে তিনি ছিলেন প্রতারক।

এভাবে দীর্ঘদিন প্রতারণা করার পর অবশেষে নিরাপত্তা বাহিনীর জালে ধরা পড়েছেন ওই ব্যক্তি। নাম কিরণ ভাই প্যাটেল। চলতি বছর কিছুদিনের ব্যবধানে দু’বার কাশ্মীর সফরে গিয়েছিলেন তিনি। এসময় কয়েক দফা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। আর তার জেরেই শেষপর্যন্ত ফেঁসে গেছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে জানা যায়, প্রতারক কিরণ প্যাটেল ১০ দিন আগে গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি গোপন রেখেছিল পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) একজন ম্যাজিস্ট্রেট কিরণকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর পরে তাকে গ্রেফতারের খবর প্রকাশ্যে আসে।

টুইটারে কিরণ প্যাটেলের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট এবং কয়েক হাজার অনুসারী রয়েছে। অনুসারীদের মধ্যে বিজেপি গুজরাট শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সিং ভাঘেলার নামও দেখা গেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ‘সরকারি’ সফরের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করতেন প্রতারক কিরণ। সবশেষ কাশ্মীর সফরের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেছিলেন গত ২ মার্চ। এতে কিরণের চারপাশে আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়।

টুইটার বায়োতে কিরণ দাবি করেছেন, ভার্জিনিয়ার কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি, আইআইএম ত্রিচি থেকে এমবিএ, কম্পিউটার সায়েন্সে এম.টেক এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.ই. সনদ রয়েছে তার। এ প্রতারক নিজেকে চিন্তাবিদ, কৌশলবিদ, বিশ্লেষক ও প্রচারাভিযান পরিচালক হিসেবে বর্ণনা করতেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথমবার কাশ্মীর সফরে গিয়েছিলেন কিরণ প্যাটেল। ওই সময় তিনি স্বাস্থ্য রিসোর্ট পরিদর্শন করেন। সফরকালে আধা-সামরিক বাহিনী ও পুলিশি নিরাপত্তায় বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণের অনেক ভিডিও রয়েছে। তাকে আধা-সামরিক রক্ষীদের সঙ্গে বুদগামের দুধপাথরিতে বরফের মধ্য দিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে। এছাড়া, শ্রীনগরের ক্লক টাওয়ার লাল চকের সামনে ছবি তুলতে পোজ দিতেও দেখা যায়।

সূত্র জানিয়েছে, গুজরাট থেকে আরও পর্যটক আনার উপায় এবং দুধপাথরিকে একটি প্রধান পর্যটনকেন্দ্র করে তোলার বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রতারক কিরণ প্যাটেল স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক করেন।

কিন্তু দু’সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার শ্রীনগর সফরে গেলে সন্দেহের মুখে পড়েন তিনি। একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গত মাসে এক ‘জ্যেষ্ঠ পিএমও কর্মকর্তার’ সফর সম্পর্কে পুলিশকে জানান। এছাড়া, একজন ভুয়া পিএমও কর্মকর্তার বিষয়ে পুলিশকে সতর্ক করেছিল গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কিরণের বিষয়ে যাচাইবাছাই করার পর পুলিশ তাকে শ্রীনগরের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, বোকামি এবং সময়মতো প্রতারককে শনাক্ত করতে ব্যর্থতার জন্য দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গুজরাট পুলিশের একটি দলও তদন্তে যোগ দিচ্ছে।

সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ১৭ মার্চ ২০২৩

Back to top button