ঢাকা, ০৫ ডিসেম্বর- এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক। ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার এ এক্সপ্রেসওয়ে এবং রাস্তা প্রশস্তকরণে ব্যয় হবে ২ হাজার ২২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ২ হাজার ৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তহবিল থেকে ২২২ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এজন্য ‘পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়িত হলে মুন্সীগঞ্জ জেলার সঙ্গে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি ব্যয় সাশ্রয়ী যাতায়াত নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে একনেকের জন্য তৈরি করা প্রকল্প-সারসংক্ষেপে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনগুলো ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে হবে না। এসব যানবাহন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ জেলার সঙ্গে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের অধিক উন্নত ও নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে ধলেশ্বরী নদীর উপর মুক্তারপুর (ষষ্ঠ বাংলাদেশ চীন মৈত্রী) সেতু ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। এ সেতু নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল মুন্সীগঞ্জ জেলার সঙ্গে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ অন্যান্য জেলার সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপন করা। মুন্সীগঞ্জ-মুক্তারপুর সড়কটি উত্তরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের পঞ্চবটি এবং দক্ষিণে মুক্তারপুর সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। এ সড়কটি খুবই সংকীর্ণ এবং আঁকাবাঁকা। অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে ৫টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ও আলু সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ থাকায় প্রচুর ভারি যানবাহন চলচল করে। ফলে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে এবং দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়কের প্রশস্ততা গড়ে ছয় মিটার এবং সড়কটিতে বিদ্যমান অ্যানুয়েল এভারেজ ডেইলি ট্রাফিক (এএডিট) ১৭ হাজার ৯১০টি। ট্রাফিক পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৩ সালে এ যানবাহনের সংখ্যা হবে দৈনিক ২৩ হাজার ৯২০টি এবং ২০২৮ সালে দৈনিক ৩০ হাজার ৫৬০টি, ২০৩৩ সালে দৈনিক ৩৯ হাজারটি এবং ২০৪৩ সালে দৈনিক ৬৩ হাজার ৫৮০টি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে সড়কটি প্রশস্তকরণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা ও বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়। সড়কে বিদ্যমান যানবাহনের দৈনিক সংখ্যা বিবেচনায় বিদ্যমান অ্যাটগ্রেড সড়ক দুই লেনে উন্নীতকরণ এবং ওই সড়কের ওপরে দুই লেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সাত কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক দুই লেন এবং ৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার অ্যাটগ্রেড সড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা হবে। এছাড়া দুই লেন সড়কের ওপর ৬ দশমিক ২৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে এবং উঠানামার জন্য ছয়টি র্যাম্প থাকবে। এ র্যাম্পের মোট দৈর্ঘ্য হবে ২ দশমিক ৮ কিলোমিটার।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে আরও বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভ্রমণ সময় কমবে ৬২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এছাড়া যানবাহনের গতিসীমা ৪ দশমিক ৪৫ গুণ বাড়বে। সেই সঙ্গে যানবাহনের বিলম্ব সময় হ্রাস পাবে ৭৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- ৪৪ দশমিক ৫০ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে ৮৩৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া ৭ লাখ ১ হাজার ১৪০ ঘন মিটার মাটির কাজের জন্য ব্যয় হবে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা। পেভমেন্ট ও আনুষঙ্গিক কাজ ১০ দশমিক ৭৫ কিলোমিটারের জন্য ব্যয় হবে ১৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ১৪ দশমিক ৭৯ কিলোমিটার মধ্যবর্তী প্রতিবন্ধক নির্মাণে ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ৯ দশমিক ০৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ৯০৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ২৫ মিটার সেতু নির্মাণে ৫ কোটি টাকা। ২৪৮ ঘনমিটার বক্স কালভার্ট নির্মাণে ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ড্রেন নির্মাণ, রোড মার্কিং, চারটি টোল প্লাজা, তিনটি টোল মনিটরিং ভবন, ছয়টি ওজন স্টেশন, ১৫১ মিটার সেতু প্রশস্তকরণ, ছয় হাজার ১৭৫ বর্গমিটার ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণ এবং সাড়ে নয় কিলোমিটার অস্থায়ী সড়ক নির্মাণ করা হবে।
ব্যয় প্রস্তাবে আপত্তি পরিকল্পনা কমিশনের : প্রকল্পটি নিয়ে ১৩ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনের অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত মোটরযান কেনার প্রস্তাব বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া অনাবসিক ভবন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩০ লাখ টাকার প্রস্তাব বাদ দেয়ার কথা বলা হয়। সভায় আরও বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত মাটির কাজের পরিমাণ ও ব্যয় পুনঃপর্যালোচনা করে যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। জেনালের অ্যান্ড সাইট ফ্যাসিলিটেজ খাতে প্রস্তাবিত ৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ২ কোটি টাকা নির্ধারণ করতে হবে। পরিবেশ কার্যক্রম মনিটরিং এর জন্য প্রস্তাবিত দেড় কোটি টাকা যৌক্তিকভাবে কমানোর সুপারিশ দেয় পিইসি। এসব সুপারিশ মেনেই ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
সূত্রঃ যুগান্তর
আডি/ ০৫ ডিসেম্বর