মধ্যপ্রাচ্য

মধ্যপ্রাচ্যে কোণঠাসা যুক্তরাষ্ট্র: সৌদির সঙ্গে সমঝোতার পর চীন-রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ মহড়ায় ইরান

তেহরান, ১৬ মার্চ – সৌদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই চীন-রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে ইরান। ১৫ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত ওমান উপসাগরে চলবে এই নৌমহড়া। এতে অংশ নিচ্ছে তিন দেশের একঝাঁক যুদ্ধজাহাজ। স্বাভাবিকভাবেই, এতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের। শত্রুভাবাপন্ন তিন দেশের যৌথ মহড়ায় সতর্ক নজর রেখেছে ওয়াশিংটন।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার (১৫ মার্চ) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মেরিন সিকিউরিটি বেল্ট’ নামে এই মহড়ার ২০২৩ সংস্করণ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর নৌবাহিনীর মধ্যে বাস্তবিক সহযোগিতা আরও গভীর করতে সাহায্য করবে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক শক্তি জোগাবে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়ার সক্রিয় পর্যায় চলবে ১৬ থেকে ১৭ মার্চ। এই সময়ে দিনে ও রাতে আর্টিলারি ফায়ারিংসহ বিভিন্ন সামরিক কৌশল অনুশীলন করা হবে। বেইজিং-তেহরানের সঙ্গে বন্ধন আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মস্কো।

বেইজিং বলেছে, এই মহড়ায় আরও কিছু দেশ অংশ নিচ্ছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেনি তারা।

পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরের মাঝামাঝি অবস্থিত ওমান উপসাগর। এর সঙ্গে উপকূলীয় রেখা রয়েছে ইরান, পাকিস্তান, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের।

এদিকে, ত্রিদেশীয় এই সামরিক মহড়ায় সতর্ক নজর রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, আমরা এটি দেখবো। স্পষ্টতই, এই প্রশিক্ষণ অনুশীলনের ফলে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ বা এ অঞ্চলে আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের জন্য যেন কোনো হুমকি তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করবো।

অবশ্য তিনি বলেছেন, হোয়াইট হাউস এই প্রশিক্ষণ মহড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। কারণ রুশ ও চীনাদের একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ঘটনা এটি প্রথমবার নয়। মার্কিন মুখপাত্র বলেন, সব দেশই প্রশিক্ষণ নেয়। আমরা সবসময় এটি করি। তবু যতটা সম্ভব দেখবো।

এর আগে ২০১৯ সালে একই ধরনের নৌমহড়ায় অংশ নিয়েছিল চীন, রাশিয়া ও ইরান। ২০২২ সালেও ভারত মহাসাগরে নৌমহড়া চালিয়েছিল তিন মিত্র দেশ।

মার্কিন আধিপত্য খর্ব
বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছে। বিশ্ব ব্যবস্থায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার অন্যতম বড় কারণ। তার সঙ্গে, মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যবাদকে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চলেছে ইরান। অর্থাৎ চীন-রাশিয়া-ইরান তিন দেশের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক সম্পর্ক বিদ্যমান।

তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সৌদি দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হিসেবে দেখা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বজায় রেখেছে, তাতে ইরান-সৌদি দ্বন্দ্ব ব্যাপকভাবে সহায়ক হয়েছে।

কিন্তু সাত বছর পর গত ১০ মার্চ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে রাজি হয়েছে ইরান ও সৌদি আরব। আর এই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছে চীন। স্বাভাবিকভাবেই, বিষয়টি নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

একদিকে, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দুটি মুসলিম দেশ হাত মেলানোয় মার্কিনিদের জন্য মধ্যপ্রাচ্য সংকটের ফায়দা নেওয়ার পথ অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে আসবে। অন্যদিকে, এ অঞ্চলে উদীয়মান শক্তি হিসেবে চীনের আবির্ভাব গ্রহণযোগ্যতা পাবে। নতুন এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের অনুকূলে যাবে না।

সূত্র: জাগো নিউজ
এম ইউ/১৬ মার্চ ২০২৩

Back to top button