শিক্ষা

করোনায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ৪ ঘণ্টা কমেছে

ঢাকা, ১৬ মার্চ – করোনা ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ হওয়ার আগে একজন শিক্ষার্থী যেখানে বাসা, স্কুল ও কোচিং মিলিয়ে দৈনিক গড়ে ছয় ঘণ্টা পড়াশোনা করতো, সেখানে স্কুল বন্ধ থাকাকালে দৈনিক পড়াশোনা করেছে দুই ঘণ্টা। ফলে কোভিডের কারণে দৈনিক পড়াশোনা কমেছে চার ঘণ্টা। ওই সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছেলেরা বেশি ড্রপ আউট (ঝরে পড়া) হয়েছে। অনলাইন ক্লাসে অংশ নিয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।

শিশুশিক্ষা জরিপ-২০২১ এর ফলাফল প্রকাশে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনে শিশুশিক্ষা জরিপ-২০২১ এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

বিবিএস মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। বিশেষ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।

জরিপের ফলাফল তুলে ধরে ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইং এর পরিচালক মো. মাসুদ আলম বলেন, আন্তর্জাতিক মানের জরিপ পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্র অনুসরণ করে সারাদেশে মোট ৯ হাজার খানায় ২০২১ মালের ২১ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি সময়ে জরিপটি পরিচালিত হয়।

জরিপের ফলাফলে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় পরিচালিত বিভিন্ন দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন, টেলিভিশন ও বেতারে মোট ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠ নিয়েছে। দেখা গেছে, করোনাকালে প্রাথমিকে ৮০ দশমিক ৫, মাধ্যমিকে ৫৯ দশমিক ৬ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ উপস্থিত ছিল। অর্থাৎ ২০১৯ সালের তুলনায় প্রাথমিকে কিছুটা কমলেও মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কিছুটা বেড়েছে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, সরকারের গৃহীত তড়িৎ পদক্ষেপের কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব সহনশীল মাত্রায় ছিল। তিনি এ ধরনের জরিপ পরিচালনার জন্য বিবিএস ও ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানান।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের পড়া ও গাণিতিক দক্ষতা যথাক্রমে ৪৯ দশমিক ৮ ও ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১৯ সালের তুলনায় গনিতে কিছুটা কমলেও পড়ার দক্ষতার ক্ষেত্রে বেড়েছে।

এসময় ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব বিষয়ে আগে নির্ভরযোগ্য তেমন কোনো সরকারি পরিসংখ্যান ছিল না। জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিবিএস সে শূন্যতার জায়গাটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তুলে এনেছে। এ জরিপের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এখন শিক্ষাক্ষেত্রে সৃষ্ট ঘাটতি পূরণে পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে সরকারের প্রয়োজনে এ ধরনের জরিপ পরিচালনায় বিবিএস অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিবিএস মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, বিবিএস সবসময় জাতির প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় রেখে সময়ানুগ ও নির্ভরযোগ্য সরকারি পরিসংখ্যান প্রস্তুতে কাজ করে যাচ্ছে। এ ধরনের জরিপ কার্যক্রম বিবিএসের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। নিয়মিত বিভিন্ন শুমারির পাশাপাশি এ ধরনের চাহিদাভিত্তিক জরিপ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিবিএস সবসময় ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আগ্রহী। তিনি বিবিএসকে আন্তর্জাতিক মানের একটি জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে ইউনিসেফসহ সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব ড. দিপংকর রায়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবিসহ বিভিন্ন অংশীজন ও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ১৬ মার্চ ২০২৩

Back to top button