জাতীয়

ইউনূসের পক্ষে ৪০ বিশ্বনেতার চিঠি ষড়য‌ন্ত্রের অংশ

ঢাকা, ১০ মার্চ – আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছেন এমন নজির নেই। দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার বিন্দুমাত্র কন্ট্রিবিউশন নেই। উল্টো মানুষকে নিঃস্ব করে দেওয়ার অজস্র রেকর্ড আছে। দেশের দুর্যোগে, ঘূর্ণিঝড় কবে কার পাশে তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন এমন একটা নজিরও কেউ দেখাতে পারবে না।

ড. ইউনুসের সঙ্গে কিসের অন্যায় হচ্ছে? এমন প্রশ্ন রেখে হানিফ বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। কোথায় কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন তার তদন্ত হচ্ছে। নোবেল বিজয়ী কি আইনের ঊর্ধ্বে? আমেরিকার এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন মামলা হয়েছিল। পরে জেলেও গিয়েছিলেন। আইন সব দেশে সকলের জন্য সমান। রাষ্ট্রের প্রধান হন আর নোবেল বিজয়ী হন না কেন অপরাধী হিসেবে আইনের মুখোমুখি সবাইকে হতে হবে। ড. ইউনুস অন্যায় করেছেন। তাই গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ টেলিকম নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এটাকে হ্যারাসমেন্ট বলার কোনো সুযোগ নেই। এই চিঠি ষড়যন্ত্রের আলামত।

শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে দেশ, উন্নয়ন সরকার ও শান্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দুই দিন আগে সংবাদ মাধ্যমে হঠাৎ দেখলাম বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস নিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। হিলারি ক্লিনটন, বান কি মুনসহ বিশ্বের ৪০ জন নেতার নামে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা এই চিঠি কাকে দিয়েছে? কারা দিয়েছে? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে নাকি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই চিঠি বিজ্ঞাপন আকারে দেখতে হবে? নিউজ আকারে আসেনি কেন?

তিনি বলেন, ওয়াশিংটন পোস্ট বিজ্ঞাপন ছাপিয়েছে। আর আমাদের দেশের গণমাধ্যম নিউজ করেছে। এসব দেখে ২০০৭ সালের কথা মনে পড়ল। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচারে মানুষ যখন রুষ্ট তখন আন্তর্জাতিক মহল বুঝতে পারল নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নেই। তখন নতুন ফর্মুলা বের হলো। ড. ইউনুসকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হলো। আমরা খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু মনে হলো তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কিসের ওপর পেয়েছেন। শান্তিতে নোবেল দেয় নরওয়ে সরকার। আমেরিকার পক্ষ থেকে যাকে সুপারিশ করা হয় তারা তাকে এই নোবেল দেয়। ড. ইউনুস নোবেল পেলে মাইক্রো ক্রেডিট এর ওপর পাবেন কিন্তু তিনি সেটা পাননি। রহস্য এখানেই।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমার বিশ্বাস এই চিঠির কথা বলে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে ৯০ লাখ মহিলা নাকি ঋণ নিয়েছেন। যারা ঋণ নিয়েছিল তাদের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটেছে কি না জানা নেই। আমরা শুনেছি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলে পরে কিস্তি দিতে না পারায় মানুষের ঘরের টিন খুলে নিয়ে গিয়েছে। ঝিনাইদহে ৩৭ জন আত্মহত্যা করেছে। অনেকে নিঃস্ব হয়ে ঢাকায় রিকশা চালায় এমন অসংখ্য নজির আছে।

ড. ইউনুস গ্রামীণ টেলিকমের টাকা দিয়ে নোবেল পুরস্কার কিনেছেন- এমন অভিযোগ করে হানিফ বলেন, গ্রামীণ টেলিকম থেকে একটা টাকাও নাকি লাভ তিনি নেননি। তদন্ত হচ্ছে। যখন গ্রামীণ টেলিকম তৈরি করা হয় তখন বলেছিলেন, ২০ হাজার নারীদের শেয়ার দিয়েছেন। নরওয়ের টেলিনর কোম্পানির কাছে ৩৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিলেন বা দান করে দিলেন। হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন এসব কোথায়? সেই টাকার হিসেব দিতে হবে। এসব শেয়ারধারী নারীদের কয় টাকা দিয়েছেন, প্রমাণ দেন।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে হানিফ বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে কি করবেন, এসব না বলে ক্ষমতায় থাকতে কি করেছেন? সেটা বললে জাতি আপনাদের প্রতি আস্থা পেত। জনগণ আশ্বস্ত হত। অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন বক্তব্য নেই।

২০০১-২০০৬ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃসময়, ক্রান্তিকাল ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে দেশকে তারা কোথায় রেখে গিয়েছিল? সরকারের ভেতর সরকার ছিল। অঘোষিত প্রধানমন্ত্রী ছিল হাওয়া ভবনের তারেক রহমান। দুর্নীতি, সন্ত্রাস সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ হতো। হাওয়া ভবনে কমিশন না দিয়ে কেউ কাজ পায়নি। আর এসব যাতে প্রচার, প্রকাশ না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, তারা বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমানের সৃষ্টি করেছে। দেশে ১২৫টি জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল। এসব সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, হাওয়া ভবন থেকে তারা পরিচালিত হতো। দেশের ৬৩টি জেলার ৫০০ স্থানে বোমা হামলা হয়েছে। আদালতে বোমা হামলায় ১২ আইনজীবী মারা গেছেন। এটাই ছিল তাদের আইনের শাসন।

হানিফ বলেন, বিএনপি দেশকে অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিল। আজ সেই অন্ধকার দেশকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন শেখ হাসিনা। ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতি পূরণ করেছেন। দেশের সকল সেক্টরে উন্নতি হয়েছে। চরম দরিদ্র দেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত।

দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি বিএনপি-জামায়াতের পছন্দ হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের মাটি মানুষের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। কারণ পাকিস্তান থেকে তাদের কলকাঠি নাড়া হয়। সরকারের পতন ঘটানোর আন্দোলন-আন্দোলন খেলা শেষ। এখন তারা ঝিমিয়ে পড়েছে। বিএনপি জানে নির্বাচনের মাধ্যমে আর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। আর তারা এখন নতুন করে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

দেশের আলেম সমাজকে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ নেই। মানুষ হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিতদের ইসলাম ধর্ম কখনো সমর্থন করে না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। মানুষ হত্যা করলে শাস্তি পেতে হয়। যারা সন্ত্রাসী, মানুষ হত্যা করে তাদের বিষয়ে সঠিক তথ্য মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট ও ইসলামী ডেমোক্রেটিক এ্যালাইন্স চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সহ-সভাপতি নুরুল আক্তার, সফি উদ্দিন মোল্লা, গণতন্ত্রী পার্টি মহাসচিব ডা. শাহাদাত হোসেন, তৃণমূল বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আক্কাস আলী খান, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আল্লামা রুহুল আমিন খান, নেজামে ইসলাম বাংলাদেশ চেয়ারম্যান মাওলানা হারিসুল হক, ইসলামী ডেমোক্রেটিক এ্যালাইন্স মহাসচিব নুরুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জুলকারনাইন ডালিম ও জামাল উদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাওলানা মনিরুজ্জামান রব্বানী।

সূত্র: সমকাল
আইএ/ ১০ মার্চ ২০২৩

Back to top button