পশ্চিমবঙ্গ

‘আমাকে পলিটিক্যালি গবেট কেউ ভাবতেই পারেন…’, বিধানসভায় বললেন মমতা

কলকাতা, ১০ মার্চ – ‘আমাকে পলিটিক্যালি গবেট ভাবতেই পারেন। আমার কিছু করার নেই।’ বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় বিধানসভায় নিজের বক্তব্যের মাঝে এমনটাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হঠাৎ কেন এমন কথা বললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী? ওই কথার আগে বা পরে অবশ্য এ সংক্রান্ত কোনো কথাই বলেননি মমতা। তাই জল্পনা তৈরি হয়েছে নিজের সম্পর্কে মমতার এমন মন্তব্য নিয়ে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজভবনে গিয়েছিলেন মমতা। এর পরে যখন বিধানসভায় আসেন তখন অধিবেশন প্রায় শেষের পথে। আসার পরে পরেই খাদ্য বাজেট নিয়ে বক্তৃতা করেন তিনি। তার মাঝেই নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্প ও কেন্দ্রের কাছে তার দাবি নিয়ে কথা বলছিলেন। সে সবের মধ্যেই তিনি বলেন, ‘আমাকে পলিটিক্যালি গবেট ভাবতেই পারেন। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। রাজনীতিতে সবাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন তো কথা নেই।’

সাড়ে তিন দশকের বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে টানা তিনবার তৃণমূল সরকারের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভাতেও থেকেছেন। তার চরম বিরোধীরাও রাজনৈতিক বিষয়ে মমতার বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। অথচ তিনিই নিজের সম্পর্কে এমন প্রশ্ন তুললেন কেন? অনেকে বলছেন, তার সরকারের যে কোনও কাজ বা প্রকল্প নিয়ে বিধানসভায় বিরোধী দল বিজেপি যেভাবে লাগাতার আক্রমণ করে তারই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে।

বৃহস্পতিবার তাঁর বক্তৃতায় রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি, উৎপাদন ইত্যাদি নিয়ে রাজ্যের প্রকল্পের বিররণ দেন মমতা। কোথায় কী ভাবে সাধারণ মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে তার বিবরণও দেন তিনি। সেই সঙ্গে বাংলাকে কেন্দ্র কেন পোস্ত চাষের অনুমতি দেবে না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। একই সঙ্গে জানান, ডায়মন্ড হারবারে ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র গড়ার কথা।

মমতার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা যে কতটা তার উদাহরণ বৃহস্পতিবার বিধানসভাতেই মিলেছে বলে দাবি করেছেন এক তৃণমূল বিধায়ক। তিনি বলেন, পোস্ত এবং ইলিশ। দু’টিই বাঙালির কাছে জনপ্রিয়। আর সেই দু’টি নিয়ে বিধানসভায় বক্তব্যের মধ্যেও মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন তার প্রকল্প, তার উদ্যোগ মানেই মানুষের কথা। তাই তাকে নিয়ে যে যতই সমালোচনা করুক, আসলে তিনি যে রাজনীতিক হিসাবে খুবই সুচারু সেটা তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ডেই দেখা যায়।

মমতার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন অবশ্য কম ওঠেনি। বামেদের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের সময়ে তাকে আড়ালে এবং প্রকাশ্যে পাগল সম্বোধন করতেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু বাংলার রাজনীতি জানে, সেই সমালোচকরা হারিয়ে গিয়েছেন মমতা নয়। কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নতুন দল গড়া নিয়েও সমালোচনা শুনতে হয়েছে।

কিন্তু সেদিন যাদের সঙ্গে বিবাদে তিনি মূল কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল গড়েছিলেন, তাদের পরবর্তীকালে মমতার কাছে আশ্রয় নিতে হয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে কিংবা রাজ্যে তিনি যখন বিভিন্ন দলকে নিয়ে জোট গড়েছে তখনও তার রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, সঠিক সময়ে সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন মমতা। এ কথা স্বীকার করতে হয় তার চরম বিরোধীদেরও। তৃণমূল শিবিরের দাবি, যিনি বার বার নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন তিনিই এমন মন্তব্য করতে পারেন।

সূত্র: ঢাকা পোস্ট
আইএ/ ১০ মার্চ ২০২৩

Back to top button