দক্ষিণ এশিয়া

কৌস্তভ বাগচীকে সেন্সর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমানে ক্ষুব্ধ দিল্লি কংগ্রেসের কড়া বার্তা

নয়াদিল্লি, ৮ মার্চ – কৌস্তভ বাগচী গত দু-তিনদিনের ঘটনাক্রমে বঙ্গমিডিয়ায় যতই শিরোনামে আসুন না কেন, দিল্লির কংগ্রেস হাইকমান্ড তাঁর উপর চরম অসন্তুষ্ট হয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই রকম ব্যক্তিগত স্তরে কুৎসিত আক্রমণ বরদাস্ত করা হবে না বলে দিল্লি স্পষ্টভাবে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্তদের বলে দিয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কাছেও বার্তা যাচ্ছে। এর আগে হাই কোর্ট চত্বরে এআইসিসি নেতা পি চিদম্বরমের সঙ্গে দলের শৃঙ্খলা ভেঙে অসৌজন্যমূলক ব্যবহারের পরেও কৌস্তভকে সতর্ক করা হয়েছিল। এবার দিল্লি আরও কড়া। রাজ্য কংগ্রেসের একাধিক মহল থেকেও দিল্লির কাছে কৌস্তভের বিরুদ্ধে অপরিণত উগ্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক আচরণের অভিযোগ গিয়েছে। দিল্লি সূত্রের খবর, কৌস্তভ নিজেকে সংশোধন না করলে তাঁকে মুখপাত্র-সহ সব পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেবে দল।

কংগ্রেস সূত্রে খবর, গোটা ঘটনা দিল্লি শুনেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) ব্যক্তিগত কুৎসার টার্গেট করা হয়েছে শুনে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী বিরক্ত। তাঁরা কৌস্তভকে চেনেন না। বিষয়টা শুনেছেন। দিল্লির কড়া বার্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু, দুর্নীতি, সন্ত্রাস নিয়ে তৃণমূলের কড়া সমালোচনা হোক। আদালতেও আইনি লড়াই হতে পারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তি আক্রমণ কখনও নয়। এই কারণে অধীর চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্যরা কেউই কৌস্তভের বক্তব্যের পাশে দাঁড়াননি। শুধু পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করায় গ্রেপ্তারির বিরোধিতা করা হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই। বাংলার একাধিক কংগ্রেস নেতাও কৌস্তভের উপর ক্ষুব্ধ। এঁদের বক্তব্য, অকারণ আমিত্ব আর উগ্রতা দেখাতে গিয়ে মাত্রাছাড়া বাড়াবাড়ি করেছেন কৌস্তভ, বিশেষ করে নেড়া হওয়াটা হাস্যকর পর্যায়ে চলে গিয়েছে।

দিল্লির বক্তব্য, বামেরা কংগ্রেসের (Congress) স্বাভাবিক বন্ধু নয়। আঞ্চলিক সমীকরণের সাময়িক সহযোগী। এই বামেরাই ইউপিএ ওয়ান থেকে সমর্থন তুলে সরকার ফেলতে গিয়েও পারেনি। সেদিক থেকে তৃণমূল সম মনোভাবাপন্ন। পরের লোকসভা নির্বাচনের পর বিকল্প সরকারের সুযোগ এলে কংগ্রেস-তৃণমূল কাছাকাছি আসতেই পারে। তার জমি যেন নষ্ট না হয়। তাছাড়া বিজেপিকে ঠেকাতে বাংলায় তৃণমূলই কার্যকরী শক্তি। শুধু সোনিয়া, রাহুল নন, খাড়গে, চিদম্বরম-সহ বহু সিনিয়রই এবিষয়ে একমত।

এদিকে, রাজ্য কংগ্রেসেও একটা বড় অংশ কৌস্তভের আচরণের তীব্র সমালোচক। এঁদের মতে, কৌস্তভ দলের ছাত্র শাখার সাংগঠনিক নির্বাচনে সুবিধে করতে পারেননি। পুরভোটে নিজের পাড়ার ওয়ার্ডে ভোটে লড়ে চতুর্থ হয়েছেন। এবারও এআইসিসি তালিকায় নাম ছিল না বলে বিরূপ পোস্ট করছিলেন। তাঁকে কখনওই সাংগঠনিক কাজে সেভাবে দেখা যায়নি। ইদানীং মিডিয়া প্যানেল বা কোর্টে সিপিএম, বিজেপি আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা যায়। পুলিশ গ্রেপ্তার করাতেই বরং তিনি বাড়তি গুরুত্ব ও প্রচার পেয়ে গেলেন। ডিএ ধরনামঞ্চে কৌস্তভের কিছু সংলাপ নাকি দলের পক্ষেও অসম্মানজনক বলে প্রদেশে খবর এসেছে। বস্তুত গ্রেপ্তারের দিন দলের যে নেতাদের কোর্টে দেখা গিয়েছিল, তাঁরা অধিকাংশই কৌস্তভের আচরণের বিরোধী।

অন্যদিকে, ফেসবুকে কৌস্তভের কিছু ছবি ঘুরছে। পিছনে নারীচরিত্র রেখে, এমনকী স্বল্পবসনাও, কৌস্তভ সেলফি তুলেছেন। তাতে নানা রসালো কমেন্ট। এগুলিও কংগ্রেস মহলে ঘুরছে কৌস্তভের অপরিণত উগ্রতার নানা প্রতিফলন বলে। দিল্লির খবর, চিদম্বরমকে যেভাবে কৌস্তভ অপমান করেছিলেন, তাতে ভয়ানক ক্ষুব্ধ ছিলেন নেতৃত্ব। কিন্তু কম বয়স বলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এবার অধীর-সহ সংশ্লিষ্টদের বলে দেওয়া হয়েছে কৌস্তভকে সেন্সর করতে। মমতা যা-ই বলে থাকুন, কংগ্রেস কোনও ব্যক্তিগত কুৎসা করবে না। অধীরও সেইমতো কৌস্তভকে একথা বলে দিয়েছেন। তবে কৌস্তভ এ সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা নিয়ে কী করবেন, তা স্পষ্ট নয়। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “উনি আমিত্বে ভরা উগ্র রাজনীতি করেন। প্রচারে থাকতে নানা কাণ্ড করেন। এভাবে কংগ্রেসে বেশিদিন চলবে না। এসব চালাতে গেলে ওকে বিজেপিতে যেতে হবে।” দলের আরেক নেতা অবশ্য বলেন, “ওর বয়স কম। একটু উগ্র কথা বলে। বারণ করে দিলে দলের কথা নিশ্চয়ই শুনবে। এরাই তো দলের ভবিষ্যৎ।”

সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
আইএ/ ৮ মার্চ ২০২৩

Back to top button