এশিয়া

প্রতিরক্ষা ব্যয় ৭.২% বাড়িয়েছে চীন

বেইজিং, ০৬ মার্চ – বহির্বিশ্বের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়টি মাথায় রেখে সামরিক খাতে বাজেট বাড়িয়েছে চীন। চলতি বছরের জন্য দেশটির পরিকল্পিত বাজেটে প্রতিরক্ষা ব্যয় ৭ দশমিক ২ শতাংশ বাড়িয়ে ২২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার করা হয়েছে, যা ২০১৯ সালের পর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।

রোববার দেশটির রাজধানী বেইজিংয়ে ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে (এনপিসি) সরকারের কাজের প্রতিবেদন তুলে ধরার সময় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং প্রতিনিধিদের এ তথ্য জানান। চীনকে দমাতে বহিরাগত প্রচেষ্টা বাড়ছে। তাই সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে হবে। খবর এএফপি ও বিবিসির।

বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে প্রায় তিন হাজার আইন প্রণেতা এ কংগ্রেস অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। কিয়াং বলেন, সামরিক বাহিনীকে অবশ্যই যুদ্ধপরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশিক্ষণের জন্য বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। সব দিক বিবেচনায় রেখে শক্তিশালী হতে হবে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চীনের প্রতিরক্ষা ব্যয় এখনও খুব কম। যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছর সামরিক বাহিনীর জন্য ৮০ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, বেইজিং সরকারিভাবে ঘোষিত অর্থের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যয় করে। চীনের রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম স্থায়ী সেনা ও নৌবাহিনী। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (আইআইএসএস) অনুসারে, পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সক্রিয় দায়িত্বে রয়েছে ২০ লাখের বেশি প্রশিক্ষিত পুরুষ ও নারী সদস্য।
এদিকে আগামী বছরের জন্য প্রায় ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চীন। এটি কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নেওয়া হলেও গত বছর দেশটির মাত্র ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেশটির কঠোর নীতি এবং আবাসন খাতে সংকটের প্রভাবে অর্থনীতিতে চাপ বেড়েছে।

এই পার্লামেন্ট অধিবেশনেই চীনের সরকার ও অর্থনীতির ওপর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ছে। জিনপিংয়ের কর্তৃত্ব আরও বাড়াতে সুদূরপ্রসারী সংস্কার পাস হবে বার্ষিক এ অধিবেশনে। তৃতীয় মেয়াদে জিনপিং প্রেসিডেন্ট এবং দলের শীর্ষ পদে থাকা নিশ্চিতের পাশাপাশি নতুন প্রধানমন্ত্রীর নামও ঘোষিত হবে। যৌক্তিক বিচার-বিবেচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এনপিসিতে। তাই এটিকে রাবার-স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট বলা হয়।

নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জিনপিংয়ের অনুগত নেতা লি কিয়াংয়ের নাম ঘোষণা করা হবে। প্রেসিডেন্টের পর প্রধানমন্ত্রীই চীনে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এই বছরের অধিবেশনগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সদস্যরা আশা করছেন, বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কমিউনিস্ট পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করা হবে এবার।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, আর্থিক খাত এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কাজের তত্ত্বাবধানকারী সংস্থাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত ব্যবসায় দলীয় পুনর্গঠন জোরদার করা হবে। এসব পদেক্ষপ নেওয়ার মাধ্যমে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং সরকারের মধ্যকার নানা বিষয় আরও অস্পষ্ট হবে। তা ছাড়া ব্যক্তিগত খাতে দলীয় নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। কারণ বিগত দিনে দুর্নীতির অভিযোগের খড়্গ নেমে আসে শীর্ষ আইটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধেও।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মন্ত্রিসভাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যাঁদের নিযুক্ত করা হচ্ছে, তাঁদের যোগ্যতার চেয়ে জিনপিং ও দলের প্রতি আনুগত্যই বিবেচিত হচ্ছে বেশি।

সূত্র: সমকাল
আইএ/ ০৬ মার্চ ২০২৩

Back to top button