ই-অরেঞ্জের হাজার কোটি টাকা লোপাটের তদন্ত আটকে আছে
ঢাকা, ০৪ মার্চ – ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের হাজার কোটি টাকা লোপাটের তদন্ত এগোচ্ছে না। মামলা হলেও ক্ষগিগ্রস্থ গ্রাহকরা প্রতারিত হয়ে খোয়ানো অর্থ ফেরত পাবেন কিনা, তা নিয়েও কাটছে না অনিশ্চয়তা।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের কেলেঙ্কারি ফাঁসের পর ই-অরেঞ্জ কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছেন, কেউ পলাতক। কেউ পেয়েছেন জামিনে মুক্তি আছেন। তবে এই অর্থ লোপাটের মূল হোতা বনানী থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা আছেন ভারতের জেলে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সোহেল ভারতে পালিয়ে যান। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে গ্রেপ্তার হন। সোহেল এখন কোচবিহারের একটি কারাগারে। গ্রাহকরা বলছেন, তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় কি ব্যর্থ হচ্ছে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহকদের কি পরিমাণ অর্থ কোথায় সরানো হয়েছে তা সোহেল ভালো বলতে পারবেন। যে কারণে সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে বেশ কিচু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেত। যার জন্যই আটকে আছে তদন্ত। তবে এ সংক্রান্ত কয়েকটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে তাহেরুল নামের এক ব্যক্তি প্রথম মামলা দায়ের করেন। এরপর এক এক করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত ২৪টির বেশি মামলা হয়। এই ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ও মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু কোনো মামলার তদন্তের অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
ই-কমার্স প্রতারণার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শিউলি আক্তার বলেন, নতুন কাউকে আপাতত গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলমান রয়েছে। তাছাড়া সোহেল রানা গ্রেপ্তার হলে অনেক কিছু জানা যাবে।
জানা গেছে, ই-কমার্সের নামে প্রতারণা ও অনলাইনে অবৈধ বহুস্তর বিপণন ব্যবসা (এমএলএম) চালিয়ে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪১টিরও বেশি মামলা চলছে। এ সব মামলায় প্রায় ১১০ থেকে ১৫০ জন আসামি রয়েছে। এর বাইরে অজ্ঞাত রয়েছে অনেক। এ বিষয়ে সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের বিশেষ টিম ২৯টির বেশি মামলা তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে। মামলাগুলোর বেশ কিছু তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে ইতোমধ্যে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা আছে। তা ছাড়া সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানা দেশে ফিরে এলে এ সব প্রতারণার আসল তথ্য পাওয়া যাবে।
শুধু গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া নয়, বেশিরভাগ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে। এমনটা জানিয়ে সিআইডি বলছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, টোয়েন্টিফোর টিকিট লিমিটেড, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এবং সমবায় প্রতিষ্ঠান এহসান গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্তে ৫০০ কোটি টাকা অপরাধলব্ধ আয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ সব ঘটনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং (অর্থ পাচার) আইনে আলাদা আলাদা মামলা হয়। মানি লন্ডারিং আইনে হওয়া মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। তবে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রায় শেষ, আদালতে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, সোহেলকে ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় পুলিশের এলসিবি শাখায় কয়েকটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তারা কোনো চিঠির জবাব দেননি। পরে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সোহেলকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সিআইডি বলছে, ই-কমার্স ও অনলাইনে প্রতারণা ঠেকাতে কঠোরভাবে কাজ করছে তারা।
সূত্র: ঢাকাটাইমস
আইএ/ ০৪ মার্চ ২০২৩