ইউরোপ

পাঁচ সন্তানকে হত্যার দিনে মায়ের স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ

ব্রাসেল্‌স, ০৩ মার্চ – নিজের পাঁচ সন্তানকে হত্যা করেছিলেন ১৬ বছর আগে। ঠিক সেদিনটিতেই বেলজিয়ামের এক নারী স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন। জেনেভিয়েভ লেরমিত নামে ওই নারীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার যন্ত্রণামুক্তভাবে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তার আইনজীবী খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেনেভিয়েভ লেরমিত ছুরি দিয়ে তার এক ছেলে ও চার মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেন। তাদের বয়স ছিল তিন থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এরপর তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তার সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এরপর তিনি জরুরি সেবা বিভাগকে ফোন দেন। জেনেভিয়েভে লেরমিতকে ২০০৮ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে তাকে মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।

জেনেভিয়েভ লেরমিতের ৫৬ বছর বয়সি আইনজীবী নিকোলাস কোহেন বলেন, তার মক্কেল স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

বেলজিয়ামের আইন অনুযায়ী, যেসব মানুষ অসহনীয় রকমের মানসিক বা শারীরিক যন্ত্রণায় ভুগছেন এবং যা দুরারোগ্য, তারা চাইলে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে পারবেন। ওই ব্যক্তিকে সচেতনভাবে সে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। শুধু তাই নয়, তিনি কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন তার যৌক্তিক কারণগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে বলার মতো ক্ষমতা তার থাকতে হবে। সাধারণত ব্যথামুক্ত প্রাণঘাতী ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের মানুষদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

লেরমিতের আইনজীবী বলেছেন, তার মক্কেল এই প্রক্রিয়াগুলো মেনে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অনুমতি পেয়েছেন। ২০০৭ সালের ওই খুনের ঘটনাটি বেলজিয়ামজুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছিল।

লেরমিতের আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, তাদের মক্কেল মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তিনি নিয়মিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতেন। লেরমিতকে কারাগারে না পাঠানোর আবেদন জানিয়েছিলেন তারা। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের শুনানি নেওয়ার পর আদালত লেরমিতকে তার সন্তানদের পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। তাকে তখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

২০১০ সালে লেরমিত এক সাবেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার অভিযোগ, ওই বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা কাজে লাগেনি। এতে হত্যাকাণ্ড ঠেকানো যায়নি। তবে ১০ বছরের আইনি লড়াই শেষে সাফল্য না পেয়ে মামলা থেকে সরে আসেন লেরমিত।

বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ২ হাজার ৯৬৬ জন স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন, যা ২০২১ সালের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। এ ধরনের মৃত্যু চাওয়ার প্রধান কারণ ক্যানসার।

তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, যেসব রোগী স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অনুরোধ করেন, তাদের প্রতি চারজনের মধ্য প্রায় তিনজনই শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত থাকেন।

সূত্র: যুগান্তর
আইএ/ ০৩ মার্চ ২০২৩

Back to top button