জাতীয়

সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুসারী ছাড়া পদ জোটে না

ঢাকা, ২ মার্চ – দলের সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় নেতার অনুসারী না হলে কারো ভাগ্যে পদ-পদবি জোটে না। কোথায় কোথায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নাম ভাঙিয়ে দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। মাঠ পর্যায়ে বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হলে দলের এসব নেতাদের দৌরাত্ব থামাতে বিএনপির হাইকমান্ডকে অনুরোধ জানিয়েছেন বরিশাল বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের দলের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা।

তারা বলেন, এখন আন্দোলনমুখি কমিটি গঠন করা দরকার। তাদের কাজের লোক দরকার,পদের লোক দরকার নেই। কিন্তু এখন প্রত্যেক ইউনিটে নিজেদের অনুসারীদের প্রাধান্য দিতে গিয়ে ত্যাগী ও যোগ্যদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। কোনো নেতাকর্মী যাতে উপরে না উঠতে পারেন সেজন্য পদে পদে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ব্লেইম গেমের রাজনীতি চলছে। এটা থেকে মুক্ত হতে না পারলে আগামীতে সরকার পতনের ‘এক দফার আন্দোলন’ব্যাহত হবে বলে তারা তাদের আশঙ্কার কথা জানান।

আজ বুধবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার মতবিনিময় সভায় বরিশাল বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরা এই মতামত দেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবার মতামত শোনেন।

এতে মোট ১৭৮ জন জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। যার মধ্যে ৩৮ জন বক্তব্য রাখেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও ৫ জন নেতা বক্তব্য রাখেন বলে জানা গেছে। তবে পরিচিতি পর্বে অনেকে পরিচয়ের পাশাপাশি নিজেদের বক্তব্য রাখেন।

সভার শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময়ে তিনি বলেন, দেশকে বাঁচাতে, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে, খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে তাদের ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে চলমান আন্দোলনে তৃণমূলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আন্দোলনকে সফল করতে বিভক্তি ভুলে এক কাতারে আসতে হবে।

মতবিনিময় সভায় বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধির কণ্ঠে ছিল রাগ, ক্ষোভ, হতাশা আর অভিমানের সুর। তারা বলেন, বরিশাল বিভাগের সিংহভাগ এলাকা বিএনপির উর্বর ঘাঁটি। এখানে সাধারণ মানুষ সবসময়ে বিএনপিকে পছন্দ করে। কিন্তু সংগঠনকে শক্তিশালী না করায়, সক্রিয় না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো দল। একসময়ে কমিটি গঠনে এলাকার গণমান্য ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হতো। এখন সমাজের কাছে অগ্রহণযোগ্য কিন্তু সাবেক এমপি কিংবা কেন্দ্রীয় নেতার ‘কাছের লোক’, ‘ঘরের লোক’, বিতর্কিত, ‘চাকর-বাকর’দের দিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এতে দলের যেমন ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তেমনি দলও আদর্শচ্যুত হচ্ছে। এভাবে পকেট কমিটি গঠন হলে দল পরিচালনা কিংবা আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়া কষ্টসাধ্য হবে।

অনেক বয়োবৃদ্ধ ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তারা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপি রাজনীতিতে এসেছেন। কিন্তু এখন তাদেরকে কোথাও ডাকা হয় না, সম্মান দেওয়া হয় না। এমনকি কেউ খোঁজও নেয় না।

 

বরিশালের বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তারা ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন। একসময়ে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এখন হাইব্রিড নেতাদের কাছে তারা অসহায়। এখনো সময় আছে- ওইসব সাবেক এমপি কিংবা কেন্দ্রীয় নেতাদের থাবা থেকে দলকে বাঁচান।

তারেক রহমানের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, আপনার নাম ব্যবহার করে, আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এমন বার্তা ছড়িয়ে যা ইচ্ছে তাই হচ্ছে। এটা শুধু বিএনপিতে নয়, প্রত্যেক অঙ্গ সংগঠনেও একই অবস্থা। তাদের খবরদারিতে তৃণমূল অসহায়। এদেরকে বাঁচান। তৃণমূলের কোন্দল নিরসন করুন। ত্যাগী ও যোগ্যদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিন।

জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্যে ছিল- এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। কোনো ছলচাতুরীতে পড়া যাবে না। আন্দোলনকেই প্রাধান্য দিতে হবে। সেটাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এখনই।

সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ২ মার্চ ২০২৩

Back to top button